হাদিসের আলোকে সুখী হওয়ার পাঁচ উপায়

ধর্ম ডেস্ক

ধর্ম ডেস্ক

৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২ সপ্তাহ আগে

হাদিসের আলোকে সুখী হওয়ার পাঁচ উপায়

জীবনে আমরা প্রায়ই কঠিন সময়ের মুখোমুখি হই। অনেক পরিস্থিতি মানুষকে হতাশার দিকে ঠেলে দেয়, এমনকি অনেক সময় মনে হয়—এ সংকটের আর কোনো সমাধান নেই। কিন্তু ইসলাম কখনোই হতাশ হওয়ার অনুমতি দেয় না; বরং আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা, আশা জাগানো এবং নতুন করে পথচলার শিক্ষা দেয়। ইসলামের মতে, প্রকৃত সুখ বা দুঃখ মানুষের পরকালের জীবনে। পৃথিবীর জীবন নিখুঁত নয়—এখানে সুখ-দুঃখের মিশেলে জীবনযাপন করতে হয়। দুনিয়া মুমিনের জন্য পরীক্ষার জায়গা—যদি পৃথিবী নিখুঁত সুখের স্থান হতো, তবে জান্নাতের প্রয়োজন পড়ত না।

দুনিয়ার প্রতি মুমিনের অবস্থান নিয়ে এক হাদিসে আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) বলেছেন—দুনিয়া মুমিনের জন্য কারাগার আর কাফেরের জন্য জান্নাতস্বরূপ। (সহিহ মুসলিম) অর্থাৎ দুনিয়া হলো সেই পথ, যার শেষে রয়েছে জান্নাতের প্রকৃত সুখ। তবে এর অর্থ নয় যে মানুষ দুনিয়াতে কখনো সুখ পাবেই না।

সুখ আসলে কী? সুখ হলো—যে পরিস্থিতিই আসুক, অন্তরে প্রশান্তি অনুভব করা। বিশ্বাস রাখা যে আল্লাহর সিদ্ধান্তে কোনো না কোনো কল্যাণ রয়েছে। কিন্তু আমাদের মানসিকতার কারণে অনেকেই সুখ খুঁজে পায় না। আমরা ধরে নিই—সুখ মানে নির্দিষ্ট কিছু অর্জন করা। ফলে সবসময় অপেক্ষা, হতাশা আর তুলনার মধ্যে থাকতে হয়। এভাবে কেউই প্রকৃত সুখ অনুভব করতে পারে না।

সুখী হওয়ার জন্য নিজের চিন্তাধারায় পরিবর্তন আনতে হয়। নিচে হাদিসের আলোকে সুখী থাকার পাঁচটি উপায় তুলে ধরা হলো।

১. আল্লাহকে স্মরণ করা

সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছায় ঘটে। আল্লাহর গুণাবলি সম্পর্কে জানলে হৃদয়ে প্রশান্তি আসে। অধিক জিকির কষ্টকে লঘু করে এবং মানুষকে পরিস্থিতিকে অন্য দৃষ্টিতে দেখতে সাহায্য করে। কোরআনে এসেছে—“আল্লাহর স্মরণেই হৃদয় প্রশান্তি পায়।” (সুরা রাদ: ২৮)

২. দোয়া করা

মানুষের চাওয়া-পাওয়া পূরণের অন্যতম উপায় হলো দোয়া। যে কোনো সুখ, শান্তি বা কষ্ট—সবকিছুর সমাধানই রয়েছে আল্লাহর কাছে চাওয়ার মাধ্যমে। বিশেষ করে দোয়া গ্রহণযোগ্য সময়গুলোতে বেশি বেশি প্রার্থনা করা উচিত।

৩. নেক আমল করা

নেক কাজ ইমানকে শক্তিশালী করে এবং আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করে। নামাজ, রোজা, নফল ইবাদত, কোরআন তিলাওয়াত—এসব আমল মানুষের অন্তরকে শক্ত করে। পাশাপাশি পরিবারকে সময় দেওয়া, দান-সদকা করা, অন্যকে সাহায্য করাও নেক কাজের অন্তর্ভুক্ত।

৪. ক্ষমা প্রার্থনা (ইস্তিগফার) করা

অতীত ভুল নিয়ে হতাশ না হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। ইস্তিগফার মানুষের জীবন থেকে অনেক দুঃখ-কষ্ট দূর করে। হাদিসে এসেছে—নবীজি (সা.) প্রতিটি বৈঠকে ১০০ বার ইস্তিগফার পড়তেন।

৫. পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারতো—এই উপলব্ধি রাখা

যে কষ্টই আসুক, মনে রাখতে হবে পরিস্থিতি আরও কঠিন হতে পারত। পৃথিবীতে অসংখ্য মানুষ আরও বড় পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ চিন্তা কৃতজ্ঞতা সৃষ্টি করে এবং নিজের জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে সাহায্য করে।

আল্লাহ মানুষকে সীমিত সময়ের জন্য পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। একসময় এ দুঃখ—এ কষ্ট—সবই শেষ হয়ে যাবে। তাই যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা—এটাই মুমিনের পথ।

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news