হঠাৎ কোনো বিপদ নামলে বা কঠিন সময় এলে আমরা সহজেই ভেঙে পড়ি। মনে হয়—এ অন্ধকার আর কাটবে না, ভবিষ্যৎও যেন অনিশ্চিত। তখন কেউ বললে, “আল্লাহর ওপর ভরসা রাখো”—শুনতে হালকা লাগে ঠিকই, কিন্তু বাস্তবে তা আঁকড়ে ধরা অনেকের জন্য কঠিন হয়ে যায়। ইসলামে এই ভরসাকে বলা হয় তাওয়াক্কুল। অনেকে মনে করেন—তাওয়াক্কুল কি সত্যিই কার্যকর? নাকি এটি শুধু মন ভালো করার উপদেশ?
এই প্রশ্নের উত্তর আল্লাহ নিজেই দিয়েছেন—“যে আল্লাহর ওপর নির্ভর করে, আল্লাহ তার জন্যই যথেষ্ট।”(সুরা আত-তালাক, আয়াত : ৩)
তাওয়াক্কুলের অর্থ কী?
তাওয়াক্কুল মানে—আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রেখে নিজের দায়িত্ব অনুযায়ী চেষ্টা করা।ইবনে আতা’ বলেন, “পরিকল্পনা করো, চেষ্টা করো; কিন্তু ফলাফল নিয়ে দুশ্চিন্তা ছেড়ে দাও। যেটা আল্লাহর দায়িত্ব, সেটা নিয়ে তুমি কেন ব্যতিব্যস্ত হবে?”
অর্থাৎ চিকিৎসা দরকার হলে চিকিৎসা নাও, কাজে চেষ্টা করো, ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ঠিকমতো সাজাও—এটাই বাহ্যিক প্রচেষ্টা। বাকিটা আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিতে হবে। কারণ তিনি আল-ওয়াকিল, সবকিছুর দেখভালকারী। তিনি কখনো বান্দাকে একা ফেলে দেন না, হতাশও করেন না।
আল্লাহর ক্ষমতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা
কোরআনে যখনই তাওয়াক্কুলের কথা বলা হয়েছে, সঙ্গে আল্লাহর সীমাহীন শক্তিকেও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে—
“তিনি পূর্ব-পশ্চিমের রব… তাঁকেই ভরসাযোগ্য কর্মসম্পাদক হিসেবে গ্রহণ করো।”(সুরা মুযযাম্মিল, আয়াত : ৯)
আরেক আয়াতে—“সেই চিরঞ্জীবের ওপর ভরসা রাখো, যিনি কখনো মারা যান না।”(সুরা ফুরকান, আয়াত : ৫৮)
পূর্ব-পশ্চিম আর আকাশ-পৃথিবী সবই যার নিয়ন্ত্রণে—তার হাতে আমাদের প্রয়োজনও নিশ্চয়ই সুরক্ষিত।
উপায়হীন হয়ে পড়লে কী করবেন?
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)—যিনি ইসলামের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম—বলেছিলেন,তার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন ছিল যেদিন ঘুম থেকে উঠে দেখলেন, তাঁর ঘরে খাবার নেই!
কেন? কারণ সেদিন তিনি পুরোপুরি আল্লাহর ওপর নির্ভর করার সুযোগ পেয়েছিলেন। সব উপায় বন্ধ হয়ে গেলে মানুষ বোঝে—আল্লাহই একমাত্র ভরসা।

