প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মান নির্ণয়ের মানদণ্ড হলো পরিক্ষা, সেটা আবার দেশেরও বটে। একজন শিক্ষার্থী যখন পরিক্ষা দেয় পরিবার থেকে শুরু করে দেশের সর্বস্তরের মানুষ তাঁর জন্য ভালো ফলাফল কামনা করে। ভালো করে পরিক্ষা দাও ভালো কিছু করবা ইনশাআল্লাহ।
পরিক্ষা শেষ,ফলাফল দেখার পালা।সবাই যেন ভালো করে এটাই সবার চাওয়া। ফল প্রকাশ হলো-সবাই ভালো করেছে। বিষয়টা আর ভালো লাগছে না কারো!!! এর যথেষ্ট কারণ-ও আছে।
জিপিএ ৫ কে ভালো শিক্ষার্থী ধরা হয়। যখন সেই জিপিএ ৫ এর সংখ্যা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, ইন্জিনিয়ারিং ও ডেন্টালের আসন সংখ্যার চেয়ে বেশি হয়, তখন ব্যাপারটা বড্ড বেমানান। কারণ প্রত্যেকটা জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের পরিবার একবুক আশা নিয়ে থাকে ভালো একটা প্রতিষ্ঠানে পড়ে ভালো কিছু করবে। একজন শিক্ষার্থীও তাই আশা করে কিন্তু যখন সে লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ তখন সে ডিপ্রেশনে ভুগছে। অনেকে অন্য পথও বেঁচে নেয়।
এইচএসসি এর একটা পরিসংখ্যান মনে পড়ে গেল- ২০১৮ সালে জিপিএ ৫ এর সংখ্যা ২৯,২৬২ জন, ২০১৯ সালে ৪৭,২৮৬ জন, ২০২০ সালে ১,৬১,৮০৭ জন, ২০২১ সালে ১,৮৯,১৬৯ জন। কি হারে জিপিএ ৫ বেড়েছে বলে শেষ করা সম্ভব না। ২০২১ সালে গড় পাশের হার ৯৫.২৬।
এখন আসি আসন সংখ্যায়-বাংলাদেশের সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আসন ৪৮,৩৪৩ টি, মেডিকেল ও ডেন্টাল ৪,৩৪৪ টি। মোট ৫২,৬৮৭ টি আসনে লড়াই করবে শুধু জিপিএ ৫ প্রাপ্ত ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন যদিও অন্য ফলাফল প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরাও এখানে লড়বে। এখন চিন্তা করেন কতজন শিক্ষার্থী তাঁর পরিবারের চাওয়া প্রতিষ্ঠানে তাঁরা পড়তে পারবে না? এর পিছনে রয়েছে বড় একটি হতাশার অংশ।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আসন সংখ্যা ৪ লাখ ২০ হাজার। এখানে জিপিএ ৫ এর বড় একটা অংশ জায়গা করে নিবে কিন্তু পাশ করা অনেক শিক্ষার্থী কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাবে। যাকে ফিরানো কষ্টসাধ্য হবে।
যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনার্সে ভর্তি হলো। তারা গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে বের হবে এটাই স্বাভাবিক। প্রতি বছর ৬ লাখের বেশি জন বের হবে। অন্যদিকে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে ২ লাখ বা একটু বেশি। এতে বড় একটা অংশ বেকারত্ববরণ করবেন।
বাংলাদেশে বেকারত্বের সংখ্যা সবার অজানা।বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিবেদনে সেই সংখ্যা ৪ কোটি ৮২ লাখ বলা হচ্ছে। যা গভীর চিন্তার কারণ।
পরিশেষে জিপিএ ৫ পেয়ে সব অর্জন করলাম এমন ভাবার কোন সুযোগ নাই। শত প্রতিকূলতা পারি দিয়ে সামনে আগাতে হবে এটাই বাস্তবতা।
তাই শুধু জিপিএ ৫ প্রাপ্তের কাছে আশা না করে, অন্যদের (যাদের জিপিএ কম)তাদের কাছেও আশা করুন। কারণ জিপিএ ৫ প্রাপ্তদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে সেও ভালো কিছু করবে ইনশাআল্লাহ।
সকল পাসকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য শুভকামনা।
লেখকঃ আবু বকর সিদ্দিক বিপুল
শিক্ষার্থী, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
পত্রিকা একাত্তর/ আইনুল ইসলাম