সুন্দরবন উপকূলীয় জেলেদের জীবন হাহাকারে

সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি

৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২, ২ years আগে

সুন্দরবন উপকূলীয় জেলেদের জীবন হাহাকারে
উপকূলীয় জেলেদের জীবন

জলে কুমির ডিঙ্গাই বাঘ এটাই তো সুন্দরবন, দূর্স্যমুক্ত হলে ও হয়নি দালালমুক্ত সুন্দরবন, সরকারি আইন অনুযায়ী বনবিভাগের নিয়ম আর অনিয়ম মেনেই জেলেজীবন। গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে মাছের উৎপাদন ৪–৫ গুণ বাড়লেও জেলেদের জীবনমানের কোনো উন্নতি হয়নি।

যদিও আবহমানকাল থেকেই এদেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক জীবন ধারণের জন্য প্রধানত সুন্দরবন হতে মধু সংগ্রহ সহ কাঁকড়া মৎস্য আহরণ ও তৎসম্পর্কিত পেশার ওপর নির্ভর করে আসছে। দেশের বড় একটা সংখ্যা জেলে সম্প্রদায়ে থাকলেও সামগ্রিক ভাবে জেলেরা বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার আজ তা চোখে পড়ার মত,জীবনের নানাবিধ বাঁক পরিবর্তনে তাদের একের পর এক ধাক্কার সম্মুখীন হতে হয় আজও, সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গে যাদের অহর্নিশ লড়াই করে বাঁচতে হয় এবং বেঁচেও যাই তারাই আবার আমাদের উপকূলীয় ভদ্রসমাজে একান্ত নিরুপায়।

বাংলাদেশের জেলেদের বৃহত্তর একটা অংশের সাতক্ষীরা-খুলনার উপকূলে অনেকেরই থাকার মত স্থায়ী ঘরবাড়ি নেই,কোনোভাবে অন্যের জায়গায় মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেন,এমন ও দেখা গেছে নদী কিংবা সমুদ্রের পাড়ে অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে কাটিয়ে দিতে হয় তাদের অনেক কাল,বউ, ছেলে-মেয়ে নিয়ে এই বিভৎস জীবনে তাদের কি মনে চাই না শান্তি সুখের অবিচ্ছেদ্য কিছু অংশ তাদের ও থাকুক?

আমাদের জেলেরা যদি কাজ না করেন,তাহলে আমাদের মাছের চাহিদা পূরণ হবে না। মাছের চাহিদা পূরণ না হলে আমরা নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারি। কারণ, মাছ আমাদের একটি অন্যতম সহযোগী খাবার।এই মহা সত্য বুঝতে আর কতো সময় আমাদের লাগবে!

উপকূলীয় জেলেদের অবস্থা আরো বেশি খারাপ এখন পর্যন্ত,আমাদের উপকূলীয় জেলেদের জীবনমান উন্নয়নের বিষয়টি দেখতে হবে সামগ্রিক আর্থসামাজিক উন্নয়নের নিরিখে,মাঝেমধ্যেই জলদস্যুদের আক্রমণের শিকার হয়ে নৌকা,জালসহ সহায়-সম্পদ হারান আবার ও সরকারের আইন অনুযায়ী বনরক্ষীদের অল্প একটু নিয়ম ভঙ্গের কারণে হারাতে হয় তাদের উপার্জনের একমাত্র সম্বল জাল,নৌকা,জেল জরিমানার টাকা গুনতে হয় অনায়সে,কোনো কোনো ক্ষেত্রে জীবনহানির ঘটনাও ঘটে,এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, উপকূলীয় অঞ্চলে দারিদ্র্যের হার বেশি,সেখানে বছরের দীর্ঘ একটি সময় মানুষের কাজ থাকে না,কিন্তু এ সময়ে তাঁদের সঞ্চয় বলে কিছু থাকে না। ফলে মহাজনদের কাছ থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে তাঁদের জীবন বাঁচাতে হয়।

প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে দারিদ্র্যের শেকলে বাঁধা হাহাকারে উপকূলের জেলেজীবন, সমুদ্রে দস্যু আর দুর্যোগের আতংক কাটিয়ে কিনারে ফিরতে না ফিরতেই পড়তে হয় এই সব দাদনদার মহাজনদের কবলে,তাই অনেক সময় তাঁরা কম দামে মাছ আগাম বিক্রি করে দেন।

আমাদের জেলে সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেকাংশে এখন পর্যন্ত শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে আমরা পারিনি। উপকূল ও চরাঞ্চলের অনেক স্থানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অভিভাবকেরা সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করতে পারেন না,তাদের এই শূন্যতা পূরণ করতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা সহ আমরা কি কি ভূমিকা পালন করতে পারি তা পর্যালোচনা করা আজ সময়ের দাবি প্রয়োজনে প্রকৃত জেলেদের জন্য একটু আইনি সুযোগ সুবিধা ও তাদের সহযোগিতা।

পত্রিকা একাত্তর/ মোঃ আলফাত হাসান

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news