কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্দি ইউনিয়নের আলগা পাড়া গ্রামের গোরখোদক মনু মিয়ার ঘোড়া হত্যার ঘটনা এখন দেশের সর্বাধিক আলোচ্য বিষয়। ৬৭ বছর বয়সী মনু মিয়া জীবনের ৪৯ বছর গোর খননে কাটিয়েছেন, কোনো পারিশ্রমিক বা বখশিস ছাড়াই ৩ হাজার ৫৭টি কবর খনন করেছেন।
দূরদূরান্তে দ্রুত গিয়ে কাজ করতে নিজের ধানী জমি বিক্রি করে কয়েক বছর আগে একটি ঘোড়া কিনেছিলেন মনু মিয়া। এই ঘোড়ার পিঠে তার যাবতীয় যন্ত্র-পাতি নিয়ে গ্রাম থেকে গ্রামে গিয়ে মানুষকে শেষ ঠিকানায় পৌঁছে দিতেন তিনি।
গত ১৬ মে শুক্রবার মিঠামইন উপজেলার কাঠখাল ইউনিয়নের হাসিমপুর গ্রামে ওই ঘোড়াটিকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক নিন্দার ঝড় ওঠে। তবে মনু মিয়া নিজে এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। বর্তমানে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। পরিবারের লোকেরা ঘোড়ার মৃত্যুর খবর গোপন রেখেছেন, কারণ মনু মিয়া এই সংবাদ শুনলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।
সোমবার (১৯ মে) সকালে মোবাইলে কথা বলার সময় মনু মিয়া বলেন, "আমি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবো, তোমরা সবাই আমার জন্য দোয়া করো। আমি টাকা-পয়সার কোনো চাহিদা রাখি না, শুধু দোয়া চাই। আমার একটাই ইচ্ছা, সুস্থ হয়ে নিজের টাকায় হজে যাওয়া। অনেকেই আমাকে হজে পাঠাতে চান, আমি রাজি নই। ভালো কাজ করায় অনেক মানুষ হাসপাতালে এসে আমার খোঁজ নিচ্ছে।"
মনু মিয়ার স্ত্রী রহিমা বেগম বলেন, "আমাদের কোনো সন্তান নেই, শুধু আমরা দুজন। ঘোড়াটা আমাকে যত্ন করেছে, আমিও তাকে। আমি কীভাবে বলব, আমার ঘোড়াটাকে মেরে ফেলেছে? এই কথা শুনলে ওর মৃত্যু হয়ে যাবে। মাঝে মাঝে ও জিজ্ঞেস করে, ‘আমার ঘোড়ার কী খবর?’ আমি মিথ্যা বলি ওর সান্ত্বনা দিতে। ওর অবস্থা এখন কিছুটা ভালো হয়েছে।"
ঘোড়ার হত্যার মর্মান্তিক এই ঘটনা এখনো সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচিত। অনেকেই মনু মিয়ার জন্য নতুন ঘোড়া কিনে দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।