কেমন আছেন বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী তিনবন্ধু

উপজেলা প্রতিনিধি, গুরুদাসপুর

২৮ আগস্ট, ২০২২, ১ year আগে

কেমন আছেন বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী তিনবন্ধু

পচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করায় নাটোরের গুরুদাসপুরে ছাত্রলীগের তিনবন্ধুকে দুই বছর ডিটেনশন ও ছয় মাসের সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছিল। তাদের অপরাধ, মুজিব হত্যা বিচার চেয়ে শ্লোগান দিয়েছিলেন। সেই থেকে তাদের ভাগ্যে নেমে আসে নির্যাতনের করুন পরিনতি। উত্তরবঙ্গের মধ্যে তারাই প্রথম জীবনবাজী রেখে মুজিব হত্যার বিচার চেয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। বিনিময়ে জেলের ঘানি টেনেছেন। পরিবার পরিজনসহ পদে পদে হয়েছেন লাঞ্চিত। মুজিব হত্যার ৪৭ বছর কেটে গেলেও তাদের কেউ খোঁজ নেননি।

মাঝে মধ্যেই মন্ত্রী, এমপি, আমলারা খোঁজ খবর নিয়ে কারানির্যাতিত তিনবন্ধুর ভাগ্যোন্নয়ের প্রতিশ্রুতি দিলেও তাদের কপালে রাশি রাশি দুঃখ ছাড়া কিছুই জোটেনি। এখন সময় বদলেছে। বঙ্গবন্ধুর কণ্যা শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায়। অথচ মুজিব প্রেমি তিনবন্ধুকে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো স্বীকৃতিই দেওয়া হয়নি। তৎকালীন ছাত্রলীগের এই তিনবন্ধু প্রবীর কুমার বর্ম্মণ (৭০), অশোক কুমার পাল (৭০) ও নির্মল কর্মকার (৬৮) ১৯৭৫ সালে ‘‘রক্তের বদলে রক্ত চাই, মুজিব হত্যার বিচার চাই’’ শ্লোগানে পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ করেন। প্রতিবাদ করায় তাদের ওপর নির্মমভাবে অত্যাচার করা হয়েছিল। তাদের পরিবারকেও রাখা হয়েছিল হুমকির মুখে। টানা ২৯ মাস কারাভোগের পর ১৯৭৭ সালে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।

মামলা মোকদ্দমা চালাতে গিয়ে গরু-ছাগল এবং ভিটেবাড়ি হারাতে হয়েছিল তাদের। এতে নষ্ট হয়ে যায় তাদের সোনালী ভবিষ্যৎ। গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি সরকার এমদাদুল হক মোহাম্মদ আলী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তিনবন্ধু প্রতিবাদ করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে নানাভাবে অত্যাচার করা হয়েছে। এরা এখন নিস্বভাবে বেঁচে আছে। এদের সরকারিভাবে স্বীকৃতি দিয়ে মূল্যায়ন করা উচিত। গুরুদাসপুর পৌরসদরে চাঁচকৈড় বাজার পাড়া মহল্লায় থাকেন তারা। প্রবীর বর্ম্মণ তার ছোট ভাইয়ের ইলেক্ট্রনিক্স দোকানে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে চাকরি করছেন। নির্মল কর্মকার অসুস্থ। দুই ছেলে শিক্ষিত হলেও চাকরি হয়নি তাদের। তারা রংয়ের দোকান চালায়। চিকিৎসা আর সংসার চালাতে গিয়ে ঋণগ্রস্থ হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

অশোক পাল ছোট ছেলেমেয়েদের গান শিখিয়ে কোনোমতে জীবিকা নির্বাহ করছেন। যৌবনকালে কিছু করতে না পারায় অভাব তাদের পিছু ছাড়ছেনা। বয়স বাড়ার সাথে সাথে অভাব অনটনও তাদের বাড়ছে। তারা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তার লাশ পড়ে থাকলেও নিতে আসেনি আওয়ামীলীগের কোনো নেতা। তখন তিনবন্ধু ভয়কে উপেক্ষা করে মনের টানে প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তারা পরিবারের জন্য তেমন কিছুই করতে পারেননি। তাদের বয়স হয়েছে। মরার আগে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলে জীবনটা তাদের ধন্য হতো। আর এই স্বীকৃতিতেই হয়তো তাদের কষ্টের পাপ মোচন হতো।

পত্রিকা একাত্তর /সোহাগ আরেফিন

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news