আর নয় সহিংসতা, ইউপি নির্বাচনে আসুক স্বচ্ছতা

নিজস্ব প্রতিনিধি

নিজস্ব প্রতিনিধি

৪ জানুয়ারী, ২০২২, ২ years আগে

আর নয় সহিংসতা, ইউপি নির্বাচনে আসুক স্বচ্ছতা
ফাইল ছবি | পত্রিকা একাত্তর

আগামী ৫ জানুয়ারি দেশের ৭০৭ টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। দেশের সাধারন জনগন একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন দেখতে চায় বরাবরের মতো এবারে ও। পাশাপাশি পুলিশ, প্রশাসন ও সবদিক থেকে সজাগ রয়েছে যাতে করে ইউনিয়ন পরিষদে একটি সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যেই শেষ হয়েছে চার দফায় দেশের ৩০৪২ টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত নয় বার ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭৩ সালে প্রথম ইউপি নির্বাচন এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালে নবম ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও ১৯৭৭, ১৯৮৩, ১৯৮৮, ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০০৩, ২০১১ ইউপি নির্বাচন হয়েছে। চলতি ২০২১ সালে জুন-জুলাই মাস থেকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দশম ইউপি নির্বাচন।

অতীতে একটা সময় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন মানেই ছিল উৎসবের আমেজ। সরকারের প্রশাসনিক কাঠামোর সর্বনিম্ন এই স্তরটি ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষপাতের বাইরে। এখানে এক প্রার্থী অন্য প্রার্থীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করতেন, একই সঙ্গে প্রচারে অংশ নিতেন, পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে যেত গ্রামের পর গ্রাম। রীতিমতো হই চই পড়ে যেতো নির্বাচনী এলাকায়। নির্বাচনের পর আবার যে যার মতো, বিজয়ী প্রার্থীকে সহযোগিতা, সম্মান করতেন। কিন্তু এখন সেসব কথা অতীত।

২০১৬ সালের ২২ মার্চ দেশে দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচন শুরু হয়। এরপর নষ্ট হয় আগের সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ। শুরু হয় সংঘাত-সংঘর্ষ-সহিংসতা। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ব্যবস্থা হয়ে ওঠে রক্তাক্ত। বর্তমানে নির্বাচন চলাকালে প্রয়ি প্রতিদিনই মারামারি, সংঘর্ষ, ভাঙচুর, গ্রেপ্তার চলছেই। বেড়েছে নিজ দলের মধ্যে আন্তঃকোন্দল ও রেষারেষি। ২০১৬ সালে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইন প্রণয়নের মধ্য দিয়ে স্থানীয় নির্বাচনে প্রতীক ব্যবহার করে আসছে রাজনৈতিক দলগুলো। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতীক ব্যবহার নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ভেতরেই অস্বস্তি রয়েছে। এই নিয়ে স্থানীয় নেতাদের বিপাকেও পড়তে হচ্ছে।

প্রতীক একজনকে দিলে আর একজন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। এতে দলীয় শৃঙ্খলা যেমন নষ্ট হয়ে পড়ছে, তেমনি তৃণমূল রাজনীতিতে বিভেদ-বিভাজনও সৃষ্টি হচ্ছে। দলীয় সংসদ সদস্য, জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে বিপাকে পড়তে হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই নিয়ে। হাজার হাজার নেতাকর্মীর মধ্য থেকে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধারাবাহিকভাবে সহিংসতা বাড়তে থাকায় দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচন থেকে সরে আসার কথা ভাবছে খোদ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী। একই সুরে কথা বলছেন বিএনপিসহ অন্য দলের নেতাকর্মীরাও।

নির্বাচন কমিশন গত ২৭ নভেম্বর শনিবার পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছিলো। আগামী বছরের ৫ জানুয়ারি সারা দেশে মোট ৭০৭টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে। গত ২৭ নভেম্বর শনিবার নির্বাচন ভবনে কমিশনের এক সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী, চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সংরক্ষিত আসনের পদে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ৭ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই ৯ ডিসেম্বর এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ১৫ ডিসেম্বরে।

পূর্ব ঘোষিত পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের তারিখ ঠিক রেখে ৩০ নভেম্বর আবারো পুনঃতফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নতুন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগের মতোই আগামী ৫ জানুয়ারি দেশের ৭০৭টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তবে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা, বাছাই ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় পরিবর্তন করেছিলো নির্বাচন কমিমন (ইসি)। গত ৩০ নভেম্বর মঙ্গলবার সকালে কমিশনের বৈঠক শেষে এক সংবাদ বিফ্রিংয়ে পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচনে পুনঃতফসিল ঘোষণা করেন ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে কমিশনের ৯১তম সভা নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে পঞ্চম ধাপের নির্বাচনের পুনঃতফসিল ঘোষণা করা হয়েছিলো। পুনঃঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিলো ৯ ডিসেম্বর (আগে ছিলে ৭ ডিসেম্বর), মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১২ ডিসেম্বর (আগে ছিল ৯ ডিসেম্বর) এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহাররের শেষ তারিখ ১৯ ডিসেম্বর (আগে ছিল ১৫ ডিসম্বর)। পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচনের ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৫ জানুয়ারি।

এর আগে, গত ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর প্রথম ধাপের দুই দফায় ৩৬৯টি, ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৩টি এবং ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে এক হাজার ইউনিয়ন পরিষদ এবং চতুর্থ ধাপে ২৩ ডিসেম্বর ৮৪০টি ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সফলভাবে। প্রসঙ্গত, দেশে চার হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় চার হাজার ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবার । বাকিগুলোতে মামলা জটিলতার কারণে নির্বাচন আটকে রয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত নয় বার ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭৩ সালে প্রথম ইউপি নির্বাচন এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালে নবম ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও ১৯৭৭, ১৯৮৩, ১৯৮৮, ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০০৩, ২০১১ ইউপি নির্বাচন হয়েছে। চলতি ২০২১ সালে জুন-জুলাই মাস থেকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দশম ইউপি নির্বাচন। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১১ ফেব্রæয়ারি প্রথম বারের মতো দলীয় প্রতীকে নবম ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ওই বছর ২২ মার্চ থেকে ৪ জুন পর্যন্ত ছয় ধাপে চার হাজার ২৭৫টি ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

গত ২৬ শে ডিসেম্বর সম্পূর্ন হয়েছে চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নিবার্চন। উক্ত ইউপি নির্বাচনে ৪৯ শতাংশ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। আর ৫০ শতাংশ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন। ইসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে ৩৯০টি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। আর, ৩৯৬টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ৪৮ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা নির্বাচিত হয়েছেন। চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ৬ জন প্রার্থী এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ২ জন, জাকের পার্টির ১ জন প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।

চার ধাপে মোট ২ হাজার ৯৮৫টি ইউপির অনানুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করেছে ইসি। এর মধ্যে ১ হাজার ৬৭৪টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা এবং ১ হাজার ২৫১টি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন।স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তৃতীয় ধাপে ৪৫ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে ৪০ শতাংশ ও প্রথম ধাপে ২৪ শতাংশ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন। আগামী ৫ ই জানুয়ারি পঞ্চম ধাপে মোট ৭০৭টি ইউনিয়ন পরিষদে এবং ৩১ জানুয়ারি ষষ্ঠ ধাপে মোট ২১৯টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে পহেলা জানুয়ারি ২০২২ শনিবার বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ৭ম ধাপের ১৩৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সপ্তম ও শেষ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপ) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নিবার্চনের কিছু সহিংসতা!

সিরাজগঞ্জের চৌহালি উপজেলায় নির্বাচন!

সিরাজগঞ্জের চৌহালি উপজেলায় নির্বাচনী সহিংসতায় আহত জাকির হোসেন মোল্লা (৫০) মারা গেছেন। জাকির হোসেন চৌহালি উপজেলার খাস কাউনিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী জাহাঙ্গীর মোল্লার ভাই। চতুর্থ দফায় নির্বাচন চলার সময় খাস কাউনিয়া ইউনিয়নের কুরকি ভোট কেন্দ্রের বাইরে মেম্বার প্রার্থী জাহাঙ্গীর ও আব্দুল হাকিমের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়। সংঘর্ষে জাকিরের মাথায় আঘাত লাগে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৭ ডিসেম্বর বিকালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পুলিশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা মেম্বার প্রার্থী আব্দুল হাকিমকে আটক করেছে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রাজাগাঁও ইউনিয়ন!

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রাজাগাঁও ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ আসাননগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে পুলিশের গুলিতে ১ জন মারা গেছেন। নিহত হামিদুল ইসলাম (৬৫) ওই ইউনিয়নের দক্ষিণ আসাননগরের বাসিন্দা ছিলেন।

নির্বাচনের এক পর্যায়ে নির্বাচনী কর্মকর্তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে কেন্দ্র থেকে বাইরে আসার সময় পরাজিত ফুটবল প্রতীকের সমর্থকরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি ছোঁড়ে। ওসি চিত্ত রঞ্জন জানান, পুলিশের গুলিতে হামিদুল ইসলাম ও শাহীনুর গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক হামিদুরকে মৃত ঘোষণা করেন। আর একজন পিঠে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

পটুয়াখালী ইউপি নির্বাচন!

পটুয়াখালী ইউপি নির্বাচনের ফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনায় পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের নয়ার চর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ১ জন মারা গেছেন।

ফুলবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন!

সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুলিশ-র্যাবের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহত হয়েছেন।গত রোববার রাত ৮টার দিকে ফুলবাড়ী ইউনিয়নের বইটিকর বাজারে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহত আব্দুস সালাম (৪৫) উপজেলার লক্ষিপাশা ইউনিয়নের রামপা দক্ষিণভাগ গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। নির্বাচনে 'সংঘর্ষের সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও র্যাব ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে ওই ব্যক্তি নিহত হন।

টাঙ্গাইল ইউপি নির্বাচন!

টাঙ্গাইল ইউপি নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ২ ইউনিয়নে এবং সদর উপজেলার ১ ইউনিয়নে কেন্দ্র অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা ঘটেছে। এ সব ঘটনায় অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন। ভূঞাপুরের ফলদা ইউনিয়নের রামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণার জন্য বিকেল থেকে ২ জন ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাচন কর্মকর্তা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আটকে রাখে দুই স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকরা। পুলিশ ও র্যাবের চেষ্টায় প্রায় ৪ ঘণ্টা পর রাত ৮টার দিকে তাদের উদ্ধার করা হয়।

সে সময় পুলিশকে ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে হয়। অন্যদিকে একই উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের চরচন্দসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে ৫ জন আহত হয়।অপরদিকে সন্ধ্যা ৭টার দিকে সদর উপজেলার মগড়া ইউনিয়নের নন্দবালা বিদ্যালয় কেন্দ্রে সহিংসতার ঘটনায় ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ও পুলিশসহ কয়েকজন আহত হয়েছে। 

জৈনসার ইউনিয়নে ইউপি নির্বাচন!

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার জৈনসার ইউনিয়নে ইউপি নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে দ্ব›দ্ব হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ছোঁড়া গুলিতে ১ কিশোরসহ ৩ জন আহত হয়েছেন।

দেশে বিভিন্ন নির্বাচনে বিনা ভোটে জয়ী হওয়ার এক নতুন ধারা চালু হয়েছে। এর আগে এমপি, মেয়র পদে বিনা ভোটে জয়ী হওয়ার পর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিনা ভোটে জয়ী হওয়ার হিড়িক পড়েছে। চার ধাপের নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও মেম্বার পদে মোট এক হাজার ৩৫৯ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।

আগামী ৫ জানুয়ারি শুধু পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচন।

সেখানেও ৫২ জন বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন। তাদের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। তাদের বিপক্ষে কেউ মনোনয়নও জমা দেননি। তার মানে তারাও বিনা ভোটেই জয়ী হবেন। নির্বাচনের আগেই জয় পাওয়ার এই ধারা গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত দুঃসংবাদ। এবারের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করছে না। তারপরও সহিংসতা থেমে নেই। সবাই যেকোনো উপায়ে ভোটে জয়ী হতে মরিয়া।কারণ নির্বাচিত হলে আয়, বাণিজ্য হবে।সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করা তাদের লক্ষ্য নয়। ফলে বিএনপি না থাকলেও নিজেরাই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে।

এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামীলীগের প্রার্থীরাই। এতে করে সহিংসতার কমার বদলে বেড়েই চলেছে। একই দল থেকে যখন একের অধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী হয় তখন দলের সাংগঠনিক নেতা-নেত্রীরা দ্বিধা-দ্বন্দের মধ্যে পড়ে যায়। কাকে রেখে কাকে দেওয়া হবে মনোনয়ন এটা নিয়ে দলের লোকজনদের মধ্যে শুরু হয় বিভিন্ন ধরনের জল্পনা-কল্পনা। আর যখনই দুইজন প্রার্থীর মধ্যে একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয় তখনই শুরু হয় আসল ঘটনা।

এতে করে যে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছে সে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের জন্য রাজপথে নেমে পড়ে, অপরপক্ষে যে দলীয় মনোনয়ন পায়নি সে তো ছেড়ে দেবার পাত্র নয়। সে তখন আবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে নেমে পড়ে আটসাট বেধে। যার ফলে দলীয় লোকজনদের মধ্যে সৃষ্টি হয় বিভাজন ও বিশাল ব্যবধান। আর যখন একই দলের প্রার্থীরা একে অপরের বিরোধিতা করে সুষ্ঠু রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের চিত্রটাই বদলে যায়। এবং শুরু হয় নির্বাচনী সহিংসতা।

আমরা আর এই সহিংসতা চায় না বলছে দেশের সাধারণ জনতা, নির্বাচন করবে নেতারা আর শহীদ হবেন দলের সাধারন কর্মীরা। আমরাই পাড়ি এই সহিংসতা বন্ধ করতে, আসুন সকলে সংকল্প করি, “আর নয় সহিংসতা, ইউপি নির্বাচনে আসুক স্বচ্ছতা।”

লেখকঃ নয়ন কুমার বর্মন।

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news