হবিগঞ্জে দীর্ঘ ৬বছর পর ২৭কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত হলো স্বপ্নের রাস্তা ও ব্রীজ

উপজেলা প্রতিনিধি, বানিয়াচং

২ এপ্রিল, ২০২২, ২ years আগে

হবিগঞ্জে দীর্ঘ ৬বছর পর ২৭কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত হলো স্বপ্নের রাস্তা ও ব্রীজ

হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার উত্তরে রয়েছে একটি পর্যটন কেন্দ্র স্হান যাহা বর্তমানে লক্ষীবাওর জলাবন হিসেবে স্বকৃত। আর এই লক্ষীবাওরের উত্তরে তাকালেই দেখা যায় আদিগন্ত বিস্তৃত সবুজ ধানের ফসলী মাঠ।চিরচেনা সবুজের বুক চিরে আকাবাকা নতুন একটি রাস্তা চলে গেছে বানিয়াচং থেকে আজমিরীগঞ্জের বদলপুর এলাকায়।

বর্তমানে এই রাস্তাটি নির্মাণ হওয়ার ফলে দুই উপজেলার হাওরের আধিবাসীদের কেবলই সুখের দিন শুরু হয়েছে মাত্র। অতীতের কষ্টমাখা দিন-গুলো থাকবে লোকগাথায় ও দূরের কোন কল্পনার স্মৃতির পাতায়।

আর এসবের সমাধান করতে বহু প্রতিক্ষার প্রহর গুনে অবশেষে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ ২-আসনের সংসদীয় নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য উন্নয়নের রুপকার এডঃ আব্দুল মজিদ খান এমপি। বানিয়াচং উপজেলা সদর থেকে উত্তর-পশ্চিম আর আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব-উত্তরের হাওরে দুই উপজেলার মোট ৪টি ইউনিয়নের অবস্থান।

লক্ষাধিক লোকের বসবাস এই রাস্তা দিয়ে।আধিবাসীদের অধিকাংশেরই পেশা কৃষিকাজ ও মাছ ধরা।উল্লেখিত এলাকার গ্রামগুলোতে বাইরের পৃথিবীতে যোগাযোগ করার কোন সহজ বিষয় ও কথা ছিলনা।যেমন বর্ষায় নৌকা আর হেমন্তে হেটে কোথাও বা চাঙ্গের গাড়ি,ট্রলি‘তে এমনকি গরুর গাড়ি দিয়েও যাতায়াত করতে হতো তাদেরকে।

এছাড়া কোন ইমার্জেন্সি রোগী হলে তো উপরওয়ালার উপর ভড়সা করে ডাক্তারের উদ্দেশ্যে বের হতে হতো বিভিন্ন ভাবে দরজা দিয়ে মাসাং তৈরী করে দু'জনে কাধে করে এবং আবার কেউ কেউ মাছ ধরার পলোর মধ্যে রোগীকে বসিয়ে বাঁশ দিয়ে দু'জনে নিয়ে চলতেন ঘন্টার পর ঘন্টা হাওরের মধ্যে দিয়ে।যদি কোন ভাবে পৌছানো যেত গন্তব্যে তাইলে বাচার প্রশ্ন ছিল ডাক্তারের পরামর্শ ও চিকিৎসার কারনে হয়তো।

এই ছিলো তাদের জীবন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে পথচলা।

জন্ম থেকে সংগ্রামী সেই মানুষগুলোর খারাপ দিন গুলো শেষ হতে যাচ্ছে আজ ১লা এপ্রিল ২০২২ইং রোজ শুক্রবারের অপরাহ্নের সুন্দর একটি দিনের। বানিয়াচং আদর্শ বাজার থেকে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পাহারপুর পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে ব্যায় হয়েছে প্রায় ২৪ কোটি টাকা।

প্রায় ৬ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে হিলিপ ও হিমলিপ প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বানিয়াচং অফিস ও আজমিরীগঞ্জ অফিস বাস্তবায়ন করেছে কাজটি।

এছাড়াও শাখা কুশিয়ারা নদীর বানিয়াচং অংশের আড়িয়ামুগুর গ্রামের পাশে প্রায় ৩ কোটি ৩১লক্ষ টাকা ব্যায়ে ৭২ মিটার দীর্ঘ একটি ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে।এটি বাস্তবায়ন করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বানিয়াচং অফিস।

রাস্তা ও ব্রীজ উদ্ধোধন করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এডঃআব্দুল মজিদ খান।এ উপলক্ষ্যে আড়িয়ামুগুর ও পাহাড়পুরে বিশাল দুটি জনসভার আয়োজন করা হয়।

প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ নির্বাচনী আসনের সংসদ ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এডঃ আব্দুল মজিদ খান।

পাহারপুরের জনসভায় সভাপতিত্ব করেন আজমিরীগঞ্জ উপজেলার ২ নং বদলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুষেনজিৎ চৌধুরী।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বানিয়াচং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কাসেম চৌধুরী,আজমিরীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান,হবিগঞ্জ জেলার এলজিইডি‘র নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল বাছিত,জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি শেখ শামসুল হক,বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আমীর হোসেন মাষ্টার,আজমিরীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মিজবা উদ্দিন ভূইয়া,বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ইকবাল হোসেন খান,আজমিরীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার আলী,বানিয়াচং উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ফারুক আমীন,আজমিরীগঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান সজীব হাসান,বানিয়াচং উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান হাসিনা আক্তার,আজমিরীগঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান সীমা রানী সরকার,বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহজাহান মিয়া।

সভায় উপস্থিত ছিলেন দুই উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যানবৃন্দ,রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ,এলাকার বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ব্যাক্তিত্ব।এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বানিয়াচং উপজেলা প্রকৌশলী মিনারুল ইসলাম,আওয়ামীলীগ নেতা আলহাজ্ব জয়নাল আবেদীন,বানিয়াচং উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আলমগীর হোসেন,সহসভাপতি ছায়েব আলী,শাহজাহান মিয়া,বানিয়াচং উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল হাসান খান মামুন,সাধারণ সম্পাদক সাইম হাসান পুলক,সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল চৌধুরী রিপন প্রমূখ।

জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এডঃ আব্দুল মজিদ খান বলেন,স্বাধীন বাংলার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন এদেশের মানুষ যেন উন্নত যোগাযোগ ব্যাবস্থায় চলতে পারে।

তিনি চেয়েছিলেন এদেশের মানুষ যেন তিনবেলা খেতে পারে।তিনি চেয়েছিলেন দেশের মানুষ যেন উন্নত চিকিৎসা সেবা পায়। তিনি চেয়েছিলেন এদেশের ছোট ছোট বাচ্চারা যেন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় লেখাপড়া করতে পারে।

বঙ্গবন্ধুর সে স্বপ্ন পূরণ হতে দেয় নাই পাকিস্তানের দোসর এদেশের পরাজিত শক্তি।বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন তারই সুযোগ্য উত্তরসুরী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।

আমি আপনাদের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে আপনাদের সুবিধা ও অসুবিধা দেখার দায়িত্ব আমার। সেই দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে আপনাদের উন্নয়নের জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি।ইনশাল্লাহ্ আমি আপনাদের পাশে সব সময় আছি এবং থাকবো।

রাস্তা উদ্ধোধন উপলক্ষ্যে প্রধান অতিথি সহ অতিথিদের বরণ করতে পথে পথে তোরণ ও বরণঢালা সাজিয়ে গ্রামবাসী সাদর অভ্যর্থনা জানান। জনসভাটি জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিলো। ওই এলাকার জন্য স্মরণকালের জনসভা এটি। জনসভা শেষে অতিথি শিল্পীদের অংশগ্রহনে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্টানের আয়োজন করা হয়।

পত্রিকা একাত্তর/আকিকুর রহমান রুমন

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news