সাপাহারে স্ট্রবেরি চাষে সফল উদ্যোক্তা ইব্রাহিমের ভাগ্য বদল

জেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ

২৭ মার্চ, ২০২২, ২ years আগে

সাপাহারে স্ট্রবেরি চাষে সফল উদ্যোক্তা ইব্রাহিমের ভাগ্য বদল

নওগাঁর সাপাহার উপজেলায় এবার বিদেশী ফল স্ট্রবেরি চাষ করে কৃষক ইব্রাহিম কৃষি ক্ষেত্রে বেশ চমক সৃষ্টি করেছে।

সাপাহার উপজেলার সীমান্তবর্তী হাঁপানিয়া বিরামপুর গ্রামের কৃষক ইব্রাহিম হোসেন জানান ,তিনি গত ২০২০ সালের দিকে পার্শ্ববর্তি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় বেড়াতে গিয়ে প্রথম মাঠে বানিজ্যিক ভাবে স্ট্রবেরি ফল চাষ দেখেন।

সেখান থেকে ফিরে এসে তাঁর ছোট ভাইদের সাথে পরামর্শ করে স্ট্রবেরি ফল চাষের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। গ্রামের পাশেই প্রায় দুই বিঘা জমি স্থানীয় এক জোতদারের নিকট থেকে তিনি ইজারা নেন। পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ এলাকা থেকে স্ট্রবেরির চারা সংগ্রহ করে ওই জমিতে রোপন করেন। অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রথম বার তেমন ভাল ফলাফল তিনি অর্জন করতে পারেননি। কোন মতে সেবার তার জমির খরচ উঠেছিল। হতাশ না হয়ে তিনি আবারো স্ট্রবেরি ফল চাষাবাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। নিজে স্ট্রবেরির চারা উৎপাদন ও সংরক্ষন করেন। স্ট্রবেরি চাষাবাদের উপযোগী বেলে দোয়াস আড়াই বিঘা জমি ১৭হাজার টাকা বিঘা হিসেবে ইজারা নিয়ে গত অক্টোবর মাসের ১১ তারিখে ওই জমিতে প্রায় ১২ হাজার চারা রোপন করেন। অল্পদিনেই স্ট্রবেরি গাছে মাঠ ভরে যায়। এবারে তিনি স্ট্রবেরি চাষে সফলতার মুখ দেখেন। চলতি বছরের জানুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে তিনি স্ট্রবেরি ফল সংগ্রহ শুরু করেন। তিনি জানান প্রতিদিন ২০০/২৫০ কেজি স্ট্রবেরি ফল সংগ্রহের পর তা পরিবারের সবাই মিলে কার্টুনে প্রসেস করেন। সাপাহার থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া দুরপাল্লার বাসে করে সেই কার্টুন ভর্তি স্ট্রবেরি রাজধানীর কাওরান বাজারে ফলের আড়ত গুলোতে সরবরাহ দেয়া হয়। তিনি বলেন বরেন্দ্র এলাকার কড়া মাটিতে উৎপাদিত স্ট্রবেরি অত্যান্ত সুস্বাদু হওয়ায় রাজধানীর বাজারে ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি করেছে এখানকার স্ট্রবেরি। প্রতি কেজি স্ট্রবেরি ফল এক হাজার থেকে চৌদ্দশ টাকা পর্যন্ত তিনি পাইকারী বাজারে বিক্রি করেছেন। চলতি মৌসুমে তার প্রতি বিঘা জমির জন্য শ্রমিক,কিটনাশক, সেচ ও নেটিং সহ যাবতীয় খরচ বাবদ প্রায় এক লক্ষ টাকা ব্যায় হয়েছে। সব খরচ বাদ দিয়ে তার আড়াই বিঘা জমি থেকে এবার প্রায় ৫/৬ লক্ষ টাকা মুনাফা আসবে বলে তিনি আশা করছেন। মিশ্র ফল বাগান চাষি ইব্রাহিম হোসেন সরকারী সুযোগ সুবিধা আশা করছেন। তিনি সরকারী ভাবে সব ধরনের সহযোগিতা পেলে আগামী মৌসুমে পূর্ণভবা নদীর পশ্চিম তীরে বিশাল আকারে স্ট্রবেরির প্রজেক্ট গ্রহণ করবেন। কৃষক ইব্রাহিম হোসেন একজন সফল মিশ্র ফল চাষি তিনি স্ট্রবেরি ছাড়াও বেশ কয়েক বিঘা আমরূপালী,বারী-৪, আম ও উন্নত জাতের মাল্টা বাগান তৈরী করেছেন। তিনি অতি অল্পদিনেই ফল চাষের মাধ্যমে দারিদ্রতা জয় করে ছোট ৪ ভাই ও পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ সুখেই আছেন। মিশ্র ফল চাষি ইব্রাহিম হোসেন বলেন যদি নতুন করে কোন কৃষক স্ট্রবেরি চাষাবাদ করতে চান তাহলে পরামর্শ ও উন্নতজাতের চারার জন্য তার ০১৭৪০৮৮১৬৪৩ অথবা ০১৭১৮১১৮৭৩১ নম্বর মোবাইলে যোগাযোগ করতে পারেন। মিশ্র ফল চাষি ইব্রাহিমের সফলতা দেখে অনুপ্রানীত হয়ে গোয়ালা ইউনিয়নের ওই এলাকার কৃষক সাজু-২ বিঘা,সুমন-২বিঘা,মুসলিম -৩ বিঘা,ইসমাইল-১বিঘা ও আব্দুল্লাহ-১০শতক জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছেন। এ বিষয়ে সাপাহার উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা আতাউর রহমান সেলিম বলেন স্ট্রবেরি রসালো ও পুষ্টিকর ফল। স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় এটি সারাবিশ্বে সমাদৃত। সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য অক্টোবর স্ট্রবেরির চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে গাছে ফুল আসতে শুরু করে এবং ডিসেম্বরের শেষ ভাগ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ফল আহরণ করা যায়।

স্ট্রবেরি অত্যান্ত উচ্চ যতœশীল জাতের ফসল তাই সব সময় ফসলের পরিচর্যা ও পর্যবেক্ষনে চাষিদের সজাগ থাকতে হয়। স্ট্রবেরি ফলের ফলন যেন ভালো হয় এবং কৃষরা যেন আরও এই ফল চাষে উদ্ধুদ্ধ হয়-সে বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি অফিসার প্রদীপ কুমার প্রামানীক নিরলস ভাবে কাজ করছেন। ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল্যাহ আল মামুন ও উপজেলা কৃষি অফিসার শাপলা খাতুন ওই এলাকায় গিয়ে স্ট্রবেরি ফল বাগান গুলো পরির্দশন সহ চাষিদের দক্ষতাবৃদ্ধির জন্য সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন বলে স্ট্রবেরি চাষি ইব্রাহিম হোসেন জানান। এ দিকে আগামী মৌসুমে উপজেলায় স্ট্রবেরি ফলের চাষাবাদ ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে এলাকার কৃষকগণ জানান।

পত্রিকা একাত্তর / তোফায়েল আহমেদ

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news