বাজারও মন্দা পাট চাষিদের মাথায় হাত

জেলা প্রতিনিধি, দিনাজপুর

২৭ জুলাই, ২০২২, ১ year আগে

বাজারও মন্দা পাট চাষিদের মাথায় হাত

বাজার মন্দা আবহাওয়াও বিমুখ। মিলছে না কৃষক বন্ধু প্রকল্পের সহায়তা । এবার দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় মাথায় হাত পড়েছে পাট চাষিদের। পাট চাষ শুরুর দিকে অতিবৃষ্টি কারণে অনেক স্থানে পাটক্ষেত মরে যাচ্ছে। আর এখন অনাবৃষ্টির কারণে পাট জাগ দিতে পারছেন না এলাকার কৃষক। ভরা বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টির দেখা নেই। অধিকাংশ খাল, বিল, ডোবা ও জলাশয়ে পানি নেই।

যেটুকু পানি আছে তা পাট পচানোর জন্য যথেষ্ট নয়। পাট চাষিরা বৃষ্টির আশায় পাট কেটে জমিতে ফেলে রেখেছেন। পুকুর-নদীতে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় সেচের মাধ্যমে জাগ দিচ্ছে অনেক পাট চাষীরা। আবার কেউ গাড়িতে করে নদী এলাকায় নিয়ে জাগ দেয়ার চেষ্টা করছেন।

লোকসানের আশঙ্কায় মাথায় হাত কৃষকদের। চলতি বছর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে মোট ১ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

কিন্তু কৃষকরা ১ হাজার ৮৬২ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করেন। কিন্তু অতিবৃষ্টির কারণে প্রায় ২৫ হেক্টর জমির পাট নষ্ট হয়েছে। কিন্তু কৃষকরা পুনরায় পাট রোপন করেছিলেন, কিন্তু অতিবৃষ্টির কারণে ক্ষতি সম্মুখীন হয়েছেন পাটচাষীরা।

এবার পাট চাষীরা ব্যতিক্রম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এখন পানির অভাবে দেখা দিয়েছে পাট জাগ নিয়ে। অনেক এলাকায় শ্যালো মেশিন ও মোটরের সাহায্যে পানি দিয়ে জাগ দেয়া হচ্ছে। এতে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে কৃষকদের।

উপজেলার ১নং আলোকঝাড়ী ইউনিয়নের কৃষক সাইদুর রহমান জানান, এ বছর তিনি তিন বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। ফলনও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না। আমার মতো উপজেলার অধিকাংশ পাটচাষির একই অবস্থা।

গত বছর দাম বেশি পাওয়ায় চলতি বছর পাটের আবাদে ঝুঁকে পড়েন উপজেলার কৃষকরা। পাট আবাদ সুবিধার না হলেও এখন পাট কাটা ও জাগ দেয়া নিয়ে মহাবিপদে পড়েছেন কৃষক। কাচিনীয়া বাজারের মকবুল হোসেন বলেন, উপযুক্ত পানি না থাকায় পাট জাগ দেয়া খুব সমস্যা হয়ে যাচ্ছে।

তবে যে বৃষ্টি হয়েছে তা পাট পচানোর জন্য যথেষ্ট নয়। বেশ কিছু দিনের খরা আর অনাবৃষ্টির কারণে পাটচাষিরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। নদী ও দলা অঞ্চলেও তমন পানি নেই। উঁচু অঞ্চলে পানির সংকট ভয়াবহ। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে এ সমস্যা দূর হবে বলে তিনি আশা করছি।

বাংলাদেশের অর্থকরী ফসলের মধ্যে পাট অন্যতম। পাটের পণ্য ব্যবহারে সরকারি নানামুখী উদ্যোগ এবং দেশের আবহাওয়া পাট চাষের জন্য উপযোগী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় পাট চাষে গদ কয়েক বছর কৃষকরা আগ্রহ দেখিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে পাটের ন্যায্যমূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

তবে দাম নিয়ে চিন্তিত খানসামার পাট চাষিরা। প্রান্তিক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকরা সরকারি দাম না পাওয়ায় আগামীতে পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে বলেও জানান একাধিক পাট চাষি। পাটের ভরা মৌসুমে পাটের ন্যায্যমূল্য না পাওয়াকে দায়ী করছেন তারা।

অর্থকরী ফসল হিসেবে চাষিদের কাছে পাটের গুরুত্ব রয়েছে। তবে চাষিদের ঘরে থাকা পর্যন্ত পাটের দাম বৃদ্ধি পায় না। কৃষকরা তাদের পাটের ন্যায্যমূল্য পায় না। এর পরিবর্তে মধ্যসত্বভোগী ও পাটের অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক লাভবান হচ্ছে বলে অভিযোগ পাট চাষিদের।

এনামুল হক নামে এক পাট চাষী বলেন, “পাট চাষে এবার খুব ক্ষতি হয়েছে আমাদের শুরুর দিকে অতিবৃষ্টি হয়েছে ফলে আশানুরূপ পাট ঘরে তুলতে পারিনি। অন্য দিকে পাটের দাম নেই। ঝড়-বৃষ্টিতে চাষের ক্ষতি হয়েছে। চাষের যেটা খরচ সেটাই আমরা তুলতে পারছি না । সরকারের কাছে অনুরোধ করছি যাতে আমাদের পাশে দাঁড়ায়। আমরা তো কৃষক বন্ধু প্রকল্পের সুবিধাও পাই না।

পত্রিকাএকাত্তর /আজিজার রহমান

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news