ক্ষতিকর দিক বিবেচনায় তৃণমূলের কৃষকরা রাসায়নিক সারের পরিবর্তে ভার্মি কম্পোস্টের (কেঁচো সার) দিকে ঝুঁকছেন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার কৃষকরা। কৃষি অফিসের সহযোগিতায় বাণিজ্যিকভাবে এই কেঁচো সার উৎপাদন করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেক নারী। এরমধ্যে একজন গৃহবধু জাসমা আক্তার। তিনি প্রথমে ৩ কেজি কেঁচো দিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট (জৈব সার) তৈরি করে এলাকা জুড়ে সাড়া ফেলে দিয়েছেন। কম খরচে ভালো ফলনে জৈব সারের বিকল্প আর কিছুই নেই বলে অনেক কৃষক জাসমার কাছ থেকে জৈবসার নিয়ে চাষাবাদ করছেন।
এদিকে, উপজেলার বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এ সারের উৎপাদনে সুফল পাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। দিন দিন এ সারের চাহিদা।সরেজমিনে গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের নবুওছিমুদ্দিন পাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, জাসমা আক্তার নামে এক নারী নিজের প্রচেষ্টায় বাড়ির পাশেই পতিত জমিতে গড়ে তুলেছেন ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) তৈরির হাউজ। ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন ও বিপনণে তাদের সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা। এক সময়ের নিত্য অভাবকে জয় করে এখন তিনি স্বাবলম্বী। সমাজ তথা পরিবারের কাছেও তার মাথা উচু করে দিয়েছে এই কর্মযজ্ঞ।
উদ্যোক্তা জাসমা আক্তার আজকে দর্পণ কে বলেন,অনেক আগে থেকেই তার মধ্যে নিজে কিছু করার প্রয়াস ছিল। এ লক্ষ্যে তিনি বাড়িতে দুটি গরু পালনের চেষ্টা করে আসছিলেন। এরই মধ্যে উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় প্রথমে ১০টি রিং এ ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন শুরু করেন। এতে তিনি বেশ লাভবান হন। কারণ এক সময় গরুর গোবর ফেলে দেয়া হত। সেই ফেলে দেয়া জিনিসই এখন অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন তার দেখাদেখিতে অন্য গ্রামের গৃহবধূরাও এই সার তৈরিতে আগ্রহী হয়ে উঠছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমার এখানে ১০টি রিং ও দুটি সেডে দুটি হাউজ রয়েছে। আমাদের উৎপাদিত ভার্মি কম্পোস্টের সুনাম আশেপাশের এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। দূরদূরান্তের কৃষকরা এ সার ব্যবহার করে উপকৃত হচ্ছেন। ইতিমধ্যে কৃষি অফিস থেকে খামার বৃদ্ধির জন্য টিন, ইট ও জৈব সার ছাকনির জন্য সরকারিভাবে আমাকে অনুদান দিয়েছেন একটি ছাকনি যন্ত্র। তবে এ অনুদান আমার খামার অনুযায়ী খুবই কম। নিজের অর্থ দিয়ে খামার পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছি। সরকার যদি আমাকে আরও অনুদান বা সহযোগিতা করেন তাহলে ভালোভাবে খামারটি পরিচালনা করতে পারবো। পাশাপাশি আশেপাশের অনেক মানুষের কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হবে।
নবুওছিমুদ্দিন পাড়া এলাকার এক মৎস্য ব্যবসায়ী বলেন, আমি প্রতি বছর রাসায়নিক সার (ফসফেট ও ইউরিয়া) ব্যবহার করে ঘের পরিচালনা করতাম। এ বছর জাসমার কাছ থেকে ভার্মি কম্পোস্ট সার নিয়ে ঘের প্রস্তুত করি। তাতে মাটির গুণাগুণ বাড়ার ফলে ভাইরাস আক্রমণ থেকে রক্ষা পেয়েছি।
কৃষক শামসুল হক বলেন, আমি তাঁর থেকে সার নিয়ে জমিতে ব্যবহার করছি। এ সার ব্যবহার করে সবজি ভালো উৎপাদন হয়েছে।কৃষক হারুনুর রশিদ বলেন, ভার্মিকম্পোস্ট ব্যবহারে গাছের পাতা কান্ডসহ ফলন বৃদ্ধি পায়। এই সারের উৎপাদিত ফসল শরীরের জন্য ক্ষতিকারক নয়।
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান বলেন, ধান, গম, পাটসহ বিভিন্ন শাক-সবজি, ফলবাগানে এ সার ব্যবহার করে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এর ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ে, মাটিতে বায়ু চলাচল বাড়ে। পানির ধারণক্ষমতা বাড়ে ও বিষাক্ততা দূরীভূত হয়। এছাড়া মাছ চাষের ক্ষেত্রে কেঁচো সার প্রয়োগ করে কম খরচে অতি দ্রুত সুস্বাদু মাছ উৎপাদন করে অধিক মুনাফা অর্জন সম্ভব হয়। ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনে তেমন কোন খরচ নেই বললেই চলে। নিজেদের বাড়িতে পালিত গরুর গোবর অথবা সামান্য দামে গোবর কিনেই এই সার উৎপাদন করা যায়। এছাড়া ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহারে মাটি স্বাস্থ্যবান হয়। বিষমুক্ত শাক-সবজিসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনে কেঁচো সার খুবই কার্যকর। একজন কৃষক এই সার একবার ব্যবহার করলে, তিনি নিজের তাগিদে এই সারের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
তেমনি উজানচর ইউনিয়নের নবুওছিমুদ্দিন পাড়া এলাকায় জাসমা নামে এক নারী ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।ইতিমধ্যে তার খামার বৃদ্ধির জন্য সরকারিভাবে অনুদান হিসেবে সার চালা মেশিন, সেলাই করা মেশিন ও ঘর তৈরিতে অন্যান্য জিনিস দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, উপযুক্ত পরিবেশে ভার্মি কম্পোস্ট তৈরিতে প্রায় ৪০ দিন সময় লাগে। ভার্মি কম্পোস্ট মাটির নিরাপদ স্বাস্থ্যে ভীষণ জরুরি। কেঁচো কম্পোস্টে অন্যান্য কম্পোস্টের চেয়ে প্রায় সাত থেকে ১০ ভাগ পুষ্টিমান বেশি থাকে। প্রথমদিকে কম্পোস্ট তৈরি হতে সময় বেশি লাগে (৬০-৭০ দিন), পরবর্তীতে মাত্র ৪০ দিনেই কম্পোস্ট তৈরি হয়। ‘আমরা কৃষকদের রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট সারের ব্যবহার বাড়াতে পরামর্শ দিয়ে থাকি। এছাড়া প্রতিনিয়ত জৈব সার উৎপাদনের সাথে জড়িতদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দাতা বৃদ্ধির চেষ্টা।