বেরোবির একই আঙ্গিনায় ২০টি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন

বেরোবি প্রতিনিধি

২৯ আগস্ট, ২০২২, ১ year আগে

বেরোবির একই আঙ্গিনায় ২০টি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) ২ দিনব্যাপী (২৮-২৯ আগষ্ট) ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একদল শিক্ষার্থীরা হাতের তৈরি প্রাচীন, মধ্যযুগ, সুলতানি ও মোঘল আমলের বিভিন্ন স্থাপত্য ও নিদর্শনের নমুনা মডেল প্রদর্শনী করেছেন।

রবিবার (২৮ আগষ্ট) সকাল ১০ টায় কলা অনুষদের নিচে শেখ রাসেল মিডিয়া চত্বর সংলগ্ন মাঠে এই প্রদর্শনী শুরু হয়। উদ্বোধন ঘোষনা করেন বিভাগীয় প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রাব্বানী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার সহকর্মী প্রভাষক মোঃ সোহাগ আলীসহ শিক্ষার্থীরা।

ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীদের সুনিপুণ হাতের ছোয়ায় বকশীট, পেপার বন্ড ও মাটি দিয়ে তৈরি একেকটি শৈলীতে ফুটে উঠেছে ঐতিহ্য ও নান্দনিকতা যা শুধু মুগ্ধ করছে তা না, আকৃষ্ট করছে তীর্থ স্থানের প্রতিও। প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন গুলোর মধ্যে রয়েছে মহাস্থানগড়, লালবাগকেল্লা, ষাটগম্বুজ মসজিদ, শালবন বিহার।

প্রত্নতত্ত্ব আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে। ফিরে যাই সুদূর অতীতকালের সংস্কৃতির সারবত্তায়। পুরোনো দিনের মানুষের তৈরি সকল বস্তু ও নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যায় প্রত্ন অনুসন্ধানের মাধ্যমে। লিখিত তথ্যের মাধ্যমে খুব বেশি হলে পাঁচ থেকে সাত হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব।

যুগান্তরের সাক্ষী হয়ে থাকা প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন থেকে দুইশ থেকে তিনশ বছর আগের মানুষের ইতিহাস জানা সম্ভব হচ্ছে। ফলে ইতিহাসে নতুন মাত্রা সংযোজিত হচ্ছে প্রত্নতত্ত্বের মাধ্যমে। সে সময়ের মানুষ তাদের পূর্বপুরুষদের নানা কর্মকাণ্ড নির্মাণকাজ ও ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার জন্য সচেষ্ট ছিলেন। এই প্রত্নতত্ত্বের নমুনা গুলো দেখতে সকাল থেকই ভীড় জমাতে থাকে।

ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক সোহাগ আলী বলেন, প্রত্নচর্চায় নিয়োজিত এসব শিক্ষার্থীরা প্রত্ননিদর্শনের অনুসন্ধান, খনন, সংরক্ষণ, প্রদর্শন এবং গবেষণার মাধ্যমে পূর্বপুরুষের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির চালচিত্র তুলে ধরে ইতিহাস বিনির্মাণ ও সত্যায়ন করে থাকেন। এ শাস্ত্রের চর্চা ইতিহাসের সত্যতা দেয়, প্রত্নতত্ত্বের অধ্যয়ন একজন শিক্ষানবিশকে তার চারপাশের বিষয়ে সচেতন হতে এবং একজন ভাল পর্যবেক্ষক হতে সাহায্য করে।

এ চর্চা নিজের অতীত, নিজ পরিচয় সম্পর্কে আরও গভীরে গিয়ে জানতে সহায়তা করে। ফলে শিক্ষার্থীরা তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক উভয় শিক্ষার হাতেখড়ি পান। বিভিন্ন স্থাপত্য ও নিদর্শনের নমুনা মডেল প্রদর্শন করতে গিয়েছেন বেরোবি শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজার রহমান শামীম।

ডেইলি বাংলাদেশকে পোমেল বড়ুয়া বলেন, প্রত্নতাত্ত্বিক প্রদর্শনী যে আয়োজন করা হয়েছে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম আয়োজন। এর মাধ্যমে নতুন যারা শিক্ষার্থী রয়েছে তাদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ হবে। এটি মেধা যাচাইয়ের মাপকাঠি , আমরা এ আয়োজনকে স্বাগত জানাই এবং আশা রাখি ভবিষ্যতেও এটি অব্যাহত থাকবে।

ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নিরঞ্জন রায় বলেন, "আমাদের সম্মানীয় সোহাগ আলী স্যারের নির্দেশনায় আমরা ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১২ তম এবং ১১তম ব্যাচ মিলে বাংলার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন প্রদর্শনী উৎসবে একত্রিত হই।

এই উৎসব মুখর পরিবেশে আমরা বাংলার বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ও বিভিন্ন স্থাপত্যকে বিভিন্ন উপকরণের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি।এর উদ্দেশ্য হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে প্রাচীন ও মধ্য বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে জানানো।তাছাড়া এর মাধ্যমে আমরা শুধু বই এর মুখস্থ পড়াশোনায় আবদ্ধ না থেকে সৃজনশীল কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি। "

একই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আতিকা জারিন বলেন, " টানা ৭দিন কাজ করার পর তারা কাজটি সুন্দর ভাবে শেষ করেছে এই জন্য তারা সন্তুষ্ট। দলগত কাজের মাধ্যমে তাদের বন্ধুত্বের বাঁধন আরও দূঢ় হয়েছে। পাশাপাশি তাদের একগুয়েমিতা কেটে গেছে।

চতুর্থ ব্যাচের শিক্ষার্থী জুয়াইরিয়া জাহান বলেন, দীর্ঘ সাত দিন অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে স্যারের প্রজেক্ট (অ্যাসাইনমেন্ট) শেষ করি। প্রত্নতত্ত্বগুলো নান্দনিকভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ফলে চারদিক থেকে প্রশংসা পাচ্ছে। এতে আমি আনন্দিত এবং আমাদের দ্বারা এতো সুন্দর কিছু হবে যা নিজেকেও ভাবতে অবাক লাগে।

পত্রিকাএকাত্তর /ফারহান সাদিক

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news