সারা বিশ্বের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বিষয়ক সার্বজনীন দিবস ঘোষণা করে ইউনেস্কো ২০০১ সালের নভেম্বরে এবং জাতিসংঘ ২০০২ সালে দিবসটি পালনের জন্য আহ্বান জানান। এরপর থেকে সারা বিশ্বে প্রতিবছর ২১ মে বিশ্ব সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, বিশ্বের মানুষের মাঝে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের গুরুত্ব ও সাদৃশ্য সম্পর্কে অবহিত করা। এশিয়া থেকে ওশেনিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকায় প্রায় প্রতিটি দেশে এ দিবসের বার্তা পৌঁছায়। কিন্তু বাংলাদেশে ২০০৭ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
সংস্কৃতি একজন মানুষকে প্রকৃত মানুষে পরিণত করে। গবেষকদের মতে- ভাষা, সাহিত্য, রীতিনীতি, মূল্যবোধ, মানবিকতা, জ্ঞান, শান্তি, শৌর্য, বিশ্বাস, সৌন্দর্য, চিরাচরিত প্রথা, মনোভাব প্রস্তুতির সমাহার হচ্ছে সংস্কৃতি। রয়েছে বস্তুগত সংস্কৃতিও।
চারু-কারু শিল্প, স্থাপত্য, পোশাক-আশাক, খাবার-দাবার, আবাস, ব্যবহার্য উপকরণ ইত্যাদি বস্তুগত সংস্কৃতির অংশ। অর্থাৎ জীবনের অন্তর্গত সব বিষয়, কর্ম, চর্চা ও সাধনাই সংস্কৃতি। মানবসমাজকে ভালোভাবে জানতে হলে বিশদভাবে বুঝতে হলে, তাদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের খোঁজ খবর নেয়া জরুরি। বিভিন্ন বর্ণ, গোত্র, ভাষা সৃষ্টি হয়েছে এই বৈচিত্র্যের ফলে।
অনন্তকাল ধরে এসব সংস্কৃতি একটির সঙ্গে অন্যটির সংযোগ ছিলো এবং তা আগামীতেও থাকবে। একটি জাতির সার্বিক পরিচিতিই ফুটে ওঠে তার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মাধ্যমে। মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও নান্দনিক বিকাশে সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তিগুলো চিহ্নিত করে সংরক্ষণ ও ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয় দিবসে।
এরই ধারাবাহিকতা ও মূল প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘পারফরম্যান্স আর্ট’ প্রদর্শিত হয়। পারফরম্যান্স আর্ট’ এর ভাবনা ও নির্মাণ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, জবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক- মামদুদুর রহমান মুক্ত।
‘কথায়’ শিরোনামে এই পারফরম্যান্স আর্ট প্রদর্শনী মূলত আমাদের মধ্যকার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র যে আমরা প্রকাশ করতে পারিনা, একেক সংস্কৃতির সাথে সংস্কৃতির দ্বন্দ্ব, সমাজের অব্যক্ত সৌন্দর্য্য তুলে ধরা হয়েছে। এ বিষয়ে নির্মাতা মামদুদুর রহমান মুক্ত বলেন, ‘এ দায় কেবল সরকারের নয়, এ ব্যাপারে সবাই মিলে সমন্বিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
তাছাড়া, আমাদের রয়েছে হাজার বছরের ঐতিহ্য লালিত সংস্কৃতি। সাংস্কৃতিক ও উদ্ভাবনীমূলক বিভিন্ন শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে আমরা সার্বিক অবস্থার উত্তরোত্তর উন্নতি ঘটাতে পারি।’
এছাড়াও বাংলাদেশের পোশাক কেন্দ্রিক ট্যাবু, কুসংস্কার, সাংস্কৃতিক অবজ্ঞা, মৌলবাদী আক্রোশ ইত্যাদি বিষয় উঠে আসে এই পারফরম্যান্স আর্টের মাধ্যমে। পারফরম্যান্স আর্ট’টি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ও মূল বিষয়বস্তু নাট্যকলা বিভাগের ছাদে প্রদর্শিত হয়।
উক্ত প্রদর্শনিতে উপস্থিত ছিলেন নাট্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ক্যাথরিন পিউরীফিকেশন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ। পারফরম্যান্স আর্ট’টিতে অংশগ্রহণ করেন নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী অদ্রি, রাজিন, তাক্রিম, সপ্ত, খুশি, অন্বেষা ও মুগ্ধ। আলোকচিত্র ধারণকারী হিসেবে ছিলেন নাভিদ নিঝুম।
পত্রিকা একাত্তর /অশ্রু মল্লিক