নড়াইলের কালিয়ায় খাল দখল করে অবৈধ মার্কেট নির্মাণ করছেন বিজিবি সদস্য

নিজস্ব প্রতিনিধি

নিজস্ব প্রতিনিধি

২ এপ্রিল, ২০২২, ২ years আগে

নড়াইলের কালিয়ায় খাল দখল করে অবৈধ মার্কেট নির্মাণ করছেন বিজিবি সদস্য

নড়াইলের কালিয়ায় বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য মনির শেখ ও তার ভাই কামাল শেখের বিরুদ্ধে চাঁচুড়ী বাজার সংলগ্ন খাল দখল করেস্থায়ীভাবে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে।

নদী-খাল রক্ষায়প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরও খালের ওপর মার্কেট নির্মাণ করার ফলে তাক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এরপরও প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেঅভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় সূত্র জানায়, খালটি চিত্রা নদ থেকে উৎপন্ন হয়েছে। খালটি চাঁচুড়ীরবিল থেকে চাঁচুড়ী বাজারের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পাশাপাশি তিনটিচাঁচুড়ী,পুরুলিয়া ও পাঁচগ্রাম ইউনিয়নের অসংখ্য গ্রাম ও বিলের মধ্য দিয়েএঁকে বেঁকে প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার লম্বা। এক সময় কৃষকের সেচকাজের জন্যএকমাত্র মাধ্যম ছিল এই খাল। এখন আর সেচকাজের জন্য তেমন একটা ব্যবহার নাহলেও জেলার সর্ববৃহৎ চাঁচুড়ী বিল ও পাটেশ্বরী বিলসহ চাঁচুড়ী বাজারেরপানিনিষ্কাশনের একমাত্র পথ খালটি। গত দুই সপ্তাহে চাঁচুড়ী বাজার অংশেখালটির ওপর (বিজিবি) সদস্য মনির শেখ ও কামাল শেখ নামের দুই ব্যক্তি পাকামার্কেট তৈরি শুরু করেছেন।

এদিকে,চাঁচুড়ী বাজারের পাশ দিয়ে প্রবাহিত বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের(পাউবো) খাল দখল করে একের পর এক স্থাপনা তুললেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নীরব।বাজার সংলগ্ন খালের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে বহুতল বাণিজ্যিক ভবনসহ অবৈধস্থাপনা। কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি বেদখল হলেও আর্থিকভাবে লাভবানসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কিছু অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী। যারা স্থাপনানির্মাণের সময় অবৈধ দখল বলে হুঙ্কার দিলেও পরবর্তীতে রহস্যজনকভাবে নীরবথাকছে। ফলে জেলার অন্যতম অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু চাঁচুড়ী বাজারের পাশদিয়ে প্রবাহমান খালটি কালের বিবর্তণে নাব্য সংকট, অবৈধ দখল আরঅপরিচ্ছন্নতার কারণে এখন নালায় পরিণত হচ্ছে।সরেজমিনে দেখা যায়, শুকনো মৌসুম হওয়ায় খালের পানি শুকিয়ে যাওয়ার সুযোগেখালটির পাড় থেকে ভেতরের দিকে প্রায় ১৫/২০ ফুট পর্যন্ত গ্রেট ভিম দিয়েকংক্রিটের পিলার ও ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। এসব স্থাপনা নির্মাণের জন্যখালের প্রায় ২ শতাংশ জায়গা দখল করা হয়েছে। নির্মাণ শ্রমিকরা জানান, চিংড়ীও সাদা মাছ ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য একটি চাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে। এর নির্মাণকাজ প্রায় শেষের পথে।ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়,চাঁচুড়ী বাজারের পেরীফেরিভূক্ত ধাড়িয়াঘাটামৌজার বাংলাদেশ সরকারের মালিকানা ১ নং খাস খতিয়ানের ৬৮ নং দাগের ২ শতাংশসরকারি খাস জমির সঙ্গে কৃষ্ণপুর মৌজার একই সরকারি খতিয়ানভূক্ত খালশ্রেণীর জমি অবৈধভাবে দখল করে কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে পাকা বাণিজ্যিকমার্কেট নির্মাণ করছেন দখলদাররা।বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন,চাঁচুড়ী বাজারের পানিনিষ্কাশনের একমাত্র পথখালটি। দখলের কারণে এটি অনেকটাই ছোট হয়ে এসেছে। এর মধ্যে মনির শেখ ও তারভাই কামাল শেখের খালের ওপর পাকা ঘর নির্মাণ করছেন। ফলে বর্ষা মৌসুমেপানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা ব্যহত হবে। সরকারি খাল এভাবে দখল হলেও প্রশাসনেরনজরদারি নেই। তাঁরা প্রভাবশালী হওয়ার কারণে কেউ কাজে বাধা দিতেও সাহসপাচ্ছেন না।

স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে খাল দখল করে ভবন নির্মাণের শুরুতেই এতেবাধা দেন পুরুলিয়া ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা। এমনকি উপজেলা সহকারীকমিশনারকেও (ভূমি) অবহিত করা হলেও রহস্যজনক কারণে নিরব ভূমিকা পালন করছেনপ্রশাসন। জনশ্রুতি আছে,তাদেরকে ম্যানেজ করার ফলে কোনো বাধাকেই তোয়াক্কাকরেনি দখলদাররা।এ নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ এলাকার লোকজনের মাঝে চরম ক্ষোভবিরাজ করলেও ভয়ে কেউ মুখ খোলেনি। একই প্রসঙ্গে মতামত জানতে বিজিবি সদস্যমনির শেখের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়। তবে আরেকঅভিযুক্ত তার সহোদর কামাল শেখ বলেন,‘খালের সঙ্গে লাগোয়া আগের দোকানঘরেরউত্তরপাশের ওয়াল ছিল। খালের পানির ¯্রােতে ওই বিল্ডিং ভেঙে পড়ে। সেই ওয়ালভেঙ্গে পড়ার জন্য একটু ফাউন্ডেশন দিয়ে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। আমাদের নামেএই জায়গার সঠিক কাগজপত্র আছে।’এ ব্যাপারে নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল কুমারসেন বলেন,‘ মার্কেট নির্মাণ করার জায়গাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওয়াতাধীনকি-না,তা খতিয়ে দেখে শিগগিরই অবৈধভাবে গড়ে ওঠা মার্কেট নির্মাণকাজ বন্ধেপ্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারিকোনো নিয়মনীতির বাইরে কোনো কাজ আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। সেখানে সরেজমিনে দেখাহবে। বিষয়টি তদন্তপূর্বক সরকারি জায়গা অবৈধভাবে দখলদারের বিরুদ্ধেপ্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’এ প্রসঙ্গে কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.আরিফুল ইসলামবলেন, ‘খাল বা জলাধার দখল করে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে; খালের জমির মধ্যে যদি পাকা ঘর নির্মাণ হয়ে থাকে তা ভেঙেফেলার ব্যবস্থা করা হবে।’তবে অনুমোদন ছাড়া মার্কেট নির্মাণ করার কথা স্বীকার করে নানা যুক্তিদেখান অবৈধ দখলদাররা।

পত্রিকা একাত্তর/হাফিজুল নিলু

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news