বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার এসি মাটির ঘর

উপজেলা প্রতিনিধি, গুরুদাসপুর

২ ফেব্রুয়ারী, ২০২২, ২ years আগে

বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার এসি মাটির ঘর

শস্যভাণ্ডার খ্যাত চলনবিলকে ঘিরে নাটোরের ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরি এসি ঘর হারিয়ে যাচ্ছে কালের বিবর্তনে। নাটোরের গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, সিংড়া, বাগাতিপাড়া, সদর, লালপুর ও নলডাঙ্গা, উপজেলার গ্রামগুলোতে গত কয়েক বছর আগেও নজরে পড়তো মাটির ঘরবাড়ী। প্রচুর গরম ও শীতে বসবাসের উপযোগী ছিলো এই মাটির ঘর।

আধুনিকতায় ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর। মানুষের রুচির পরিবর্তন, পারিবারিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার কারণে এখন আর কেউ মাটির ঘরে থাকতে চান না। জানা গেছে, এক সময় নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ মানুষেরই ছিল মাটির ঘর। এখন সেই দৃশ্য পাল্টে গেছে।

গুরুদাসপুর উপজেলার প্রবীণদের কাছে থেকে জানা যায়, আগে ধারাবারিষা, নাজিরপুর,বিয়াঘাট,মশিন্দা,চাপিলা, খুবজিপুর ইউনিয়নের উদবাড়ীয়া, শিধুলী, বেড়গঙ্গারামপুর, হামলাইকোল, মামুদপুর,মোল্লাবাজার, শিয়ানপাড়া, কাচিকাটা, হাঁসমারীশিকারপুর, খামারপুথুরিয়া, বৃ- পাথুরিয়া, বিলশা, বালশা, রুহাইসহ বিভিন্ন গ্রামে ছিল মাটির ঘর। ওইসব গ্রামের হাতেগোনা কিছু বাড়ীতে এখন মাটির ঘর থাকলেও অধিকাংশ বাড়ীতে নির্মাণ করা হয়েছে পাকা ও সেমিপাকা ঘর। এলাকাবাসী জানান, উপজেলার যেসব জায়গায় লাল মাটি ও এঁটেল মাটি পাওয়া যেত সেসব এলাকার লোকজনই বাড়িতে মাটির ঘর বানাতেন। লাল ও এঁটেল মাটি ভিজিয়ে প্রথমে নরম কাঁদা মাটতে পরিনত করা হতো।

সেই নরম কাঁদা মাটি দিয়ে তৈরি হতো ২থেকে ৩ ফিট চওড়া দেয়াল। প্রতিবার দুই-তিন ফুট উঁচু দেয়াল করে তা পাঁচ-ছয় দিন রোদে শুকানো হতো। এভাবে পর্যায়ক্রমে ১২-১৫ ফুট উঁচু দেয়াল নির্মাণ করা হতো। পরে দেয়ালের ওপর টিনের চালা বা ছন দিয়ে ছাউনি করা হতো।প্রতিটি ঘর নির্মাণে সময় লাগত দুই-তিন মাস। বিশেষ প্রক্রিয়ায় ঘরের ভিতরের দিকে ধানের তুষ দিয়ে দেয়ালের ওপর প্রলেপ দেওয়া হতো। বাইরের দিকে দেওয়া হতো চুনের প্রলেপ বা আলকাতরা। বন্যা বা ভূমিকম্প না হলে এসব ঘর শতাধিক বছর পর্যন্ত টিকে থাকত। ধারাবারিষা ইউনিয়নের উদবাড়িয়া গ্রামের দেয়ালি (মাটির ঘর নির্মাণ কারিগর) ঝগর উদ্দিন জানান, মাটির ঘর তৈরির উপযুক্ত সময় কার্তিক মাস। কারণ এ সময়ে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে না।

তিনি আরো বলেন, আমরা প্রতি হাত ঘর নির্মাণে ১০ টাকা নিতাম। অনেক সময় ৫-৬ হাজার টাকা চুক্তিতেও ঘর নির্মাণ করে দিতাম। মানুষ এখন আর মাটির ঘর তৈরি করে না। আমরা এই পেশা ছেড়ে দিয়েছি। উপজেলার ধারাবারিষা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ রোকনুজ্জামান বলেন, লাল ও এঁটেল মাটির অভাব, মাটির ঘর তৈরির কারিগর সংকটের কারণে মানুষ এখন আর মাটির ঘর তৈরি করতে চায় না। ধারাবারিষা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বলেন, মানুষের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা বেড়েছে। তাই এখন আর মাটির ঘরে বসবাস করতে চায় না।

পত্রিকা একাত্তর/ মোঃ সোহাগ আরেফিন

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news