দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহাবতার শ্রী কৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমি পালন। মন্দিরে মন্দিরে চলছে নানা আরাধনা। সেখানে সমবেত হচ্ছে শিশু-বৃদ্ধসহ সব বয়সি মানুষ। ধর্মীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি চলছে আলোচনা সভা। জাগতিক ও পরলৌকিক কল্যাণ কামনায় নিমগ্ন থাকবেন সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন।
প্রসাদ বিতরণের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দিনের কর্মসূচি। শাস্ত্রমতে, দ্বাপর যুগের শেষ দিকে এই মহাপুণ্য তিথিতে মথুরা নগরীতে অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে বন্দি দেবকী ও বাসুদেবের বেদনাহত ক্রোড়ে জন্ম নিয়েছিলেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। মূলত দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের জন্যই ওই সময়ে পৃথিবীতে আগমন ঘটে শ্রী কৃষ্ণের ।
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, ঈশ্বরতত্ত্বের মহান প্রতীক হলেন শ্রীকৃষ্ণ। বেদে তিনি ঋষিকৃষ্ণ, দেবতাকৃষ্ণ। মহাভারতে রাজর্ষিকৃষ্ণ, শাসক ও প্রজাপালক কৃষ্ণ, অত্যাচারী দমনে যোদ্ধাকৃষ্ণ। ইতিহাসে যাদবকৃষ্ণ, দর্শনশাস্ত্রে সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ কৃষ্ণ। শ্রীমদ্ভগবদ গীতায় অবতারকৃষ্ণ, দার্শনিক কৃষ্ণ, পুরুষোত্তম কৃষ্ণ ও ঈশ্বরায়িত কৃষ্ণ।
সারাদেশের ন্যায় খানসামায়ও দিনটি উদযাপন করা হচ্ছে মহা ধুমধামে। জন্মাষ্টমী পালন উপলক্ষ্যে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নানা ধর্মীয় আড়ম্বর-আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করেছে। দিনাজপুরের খানসামায় নানা আয়োজনে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আরাধ্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আর্বিভাব তিথি জন্মদিন বা শুভ জন্মাষ্টমী (শুক্রবার) ১৯শে আগস্ট সকাল সাড়ে ১১টার সময় খানসামার পাকেরহাট শ্রী শ্রী চরণকালী হরিবাসর প্রাঙ্গণে প্রদ্বীপ প্রজ্বলন ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে এই দিনটি উদযাপিত হয়।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও খানসামায় জন্মাষ্টমীতে মঙ্গল শোভাযাত্রা, আলোচনা ও পূজাসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন। বাংরাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের খানসামা উপজেলা শাখার সভাপতি শ্রী ধীমান চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা ও মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কান্তেস কুমার রায়, বিশেষ আলোচক ধনেশ্বর বর্মন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান যুব ঐক্য পরিষদের আহব্বহক জীতেন্দ্রনাথ রায়।
মঙ্গল শোভাযাত্রা ও আলোচনা পরিদর্শন করেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাশিদা আক্তার ও খানসামা থানা অফিসার ইনচার্জ চিত্র রঞ্জন রায়, ওসি (তদন্ত) তাওহীদ ইসলাম। আরো উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অনন্ত কুমার রায় ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান যুব ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব রঞ্জিত কুমার মহন্তসহ অনেকে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ খানসামা উপজেলা শাখার আয়োজনে ঢাক-ঢোল ও ব্যান্ডের বাজনা, শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন রূপ সেজে তাদের জয়গানে মুখর হয়ে উঠে পুরো এলাকা। ব্যানার, ফেস্টুন, পতাকা হাতে অংশ নেন পুরুষ-মহিলারা শিশুরাও। তারা উলুধ্বনি এবং শুভ শুভ শুভ দিন শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন স্লোগান দেন। আলোচনা সভাশেষে একটি বর্ণাঢ্য র্যালী উপজেলার পাকেরহাটে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে চরণকলী মন্দিরে এসে ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
পত্রিকাএকাত্তর /আজিজার রহমান