মাও.আব্দুল খা‌লেক (র.) এর মৃত্যুবা‌র্ষিকী

চরফ্যাশন থানা প্রতিনিধি

১৭ মে, ২০২২, ১ year আগে

মাও.আব্দুল খা‌লেক (র.) এর মৃত্যুবা‌র্ষিকী

‌নি‌জে আ‌লো‌কিত মানুষ ছি‌লেন। গ‌ড়ে‌ছেন আ‌লো‌কিত মানুষ। নিজ হা‌তে অসংখ্য ছাত্র ‌তৈরী ক‌রে‌ছেন। যারা আজ দে‌শের বি‌ভিন্ন ঐ‌তিহ্যবাহী আ‌লিম-ফা‌জিল ও কা‌মিল মাদরাসার প্রভাষক- উপাধ্যক্ষ বা অধ্যক্ষসহ রাষ্ট্রীয় দা‌য়িত্বপূর্ণ প‌দে নি‌য়ো‌জিত।

আর‌বি ভাষা সা‌হিত্যসহ কোরআন হা‌দি‌সের ওপর ছিল তাঁর অগাধ জ্ঞান। এসব বিষ‌য়ে মাদরাসায় তাঁর পাঠদান ছিল অত্যন্ত সহজ সাবলীল প্রাঞ্জল।যে কোন বিষ‌য়ের তি‌নি মুখস্থ পাঠদান কর‌তেন। কোন শিক্ষক ছু‌টি‌তে থাক‌লে তি‌নি সপ্র‌ণো‌দিত ক্লাশ নি‌তেন।

তি‌নি শুধু ছাত্র‌দের কাছ থে‌কে অধ্যায় সম্প‌র্কে জে‌নে মুখস্থ পাঠদান কর‌তেন। পাঠদা‌নের উপস্থাপনা ছিল হৃদয়গ্রাহী। শিক্ষার্থীরা মন্ত্রমু‌গ্ধের মত শ্রবণ করত। অধ্যক্ষ থাকাকালীনও কোন শিক্ষক ছু‌টি‌তে থাক‌লে তি‌নি ছু‌টে যে‌তেন ক্লাশ নি‌তে।

তি‌নি ছি‌লেন সৎ ধা‌র্মিক আমানতদার ও প‌রোপকারী। ‌নিপাট প‌রিচ্ছন্ন ব্য‌ক্তিত্বের এ মহান মানুষ‌টি ছি‌লেন নি‌র্লোভ নিরঅহংকারী।

দা‌য়িত্ব-কর্তব্য পাল‌নে তাঁর ভূ‌মিকা ছিল প্রশ্নাতীত। বাড়ী থে‌কে প্রায় চার‌ কি‌লো‌মিটার দূরে হওয়া স‌ত্বেও তি‌নি প্র‌তি‌নিয়ত যথাসম‌য়ে কর্মস্থ‌লে উপ‌স্থিত থাক‌তেন। তৎকালীন সম‌য়ে যানবাহ‌নের এতটা আ‌ধিক্য না ছিলনা বর্তমান সম‌য়ের মত। তারপরও তি‌নি প‌রিবহ‌নের অজুহা‌তে কখনও মাদরাসায় পৌছা‌তে দেরী কর‌তেন না। পা‌য়ে হে‌টে হ‌লেও তি‌নি ‌নির্ধা‌রিত সম‌য়ের আ‌গে মাদরাসায় পৌছা‌তেন।

‌শিক্ষানুরাগী এ সমাজ‌হি‌তৈসী অ‌নেক গরীব অসহায় ইয়া‌তিম‌কে নিজস্ব অর্থ ব্য‌য়ে পড়া‌শোনা ক‌রি‌য়ে‌ছেন।বই পুস্তক খাতা কলম কেনাসহ নিজ সন্তা‌নের পড়া‌শোনার মত অসহায়‌দের পড়া‌শোনার জন্য খরচ কর‌তেন। তা‌দের অ‌নে‌কেই এখ‌নো তাঁর সহ‌যো‌গিতার কথা নি‌র্ধিদায় স্বীকার ক‌রেন।

তিনি সদা হাস্যোজ্জল, সদালাপী, পরোপোকারী, দ্বীনদার, খোদাভীরু, পরহেজগার এবং আমানতদার একজন মানুষ ছি‌লেন।‌সম্পূর্ণ বিনা বেতনে একটানা প্রায় ত্রিশ বছর এক‌টি জা‌মে মস‌জি‌দের খ‌তি‌বের দা‌য়িত্ব পালন ক‌রে‌ছি‌লেন।ধর্মীয় বিষ‌য়ে তি‌নি প‌া‌ন্ডিত্যপূর্ণ জ্ঞান রাখ‌তেন।

আমানতদারী‌তে তি‌নি ছি‌লেন অনুস্মরণীয় দৃষ্টান্ত। সাধারণ মানুষ তাঁর কা‌ছে নির্দিধায় টাকা পয়সা আমানত রাখ‌তেন। চাওয়া মাত্র যার টাকা তা‌রে দি‌য়ে দি‌তেন।অ‌নেক অসহায় প‌রিবা‌র এবং মানু‌ষের তি‌নি অ‌বিভাবক ছি‌লেন।

সততায় তি‌নি ছি‌লেন আ‌পোষহীন। নি‌য়োগ পরীক্ষায় তার কা‌ছে মেধাবীরা মূলা‌য়িত হত । ক‌মি‌টির লোকজন দ্বিমত পোষণ ক‌রেও তা‌কে কোনভা‌বে স্থানচ্যূত কর‌তে পারত না। ‌কেউ বাধা প্রদান কর‌লেও অ‌বিচল থাক‌তেন নিজ সিদ্ধা‌ন্তে।

ক্ষণজন্মা গুণীজন মাওলানা আবদুল খা‌লেক (র.)১৯৪৩ সা‌লে দ্বীপজেলা ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলাধীন চন্ডীপুর গ্রামে এক ব‌নে‌ধী মুসলিম পরিবারে জম্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬১ সালে ছারছিনা দারুস সুন্নাত আলিয়া মাদরাসা থেকে কামিল (এমএ) ডিগ্রি লাভ করেন।

এছাড়াও তিনি দাখিল, আলিম ও ফাজিল ( ডিগ্রি) পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন । ১৯৬১ সালের ০১ ফেব্রুয়ারি তিনি মির্জাকালু সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় আরবি প্রভাষক পদে যোগদান করেন। পরবর্তীকালে ১৯৯১ সালের ০১ জুন একই মাদরাসার উপাধ্যক্ষ পদে এবং ২০০০ সালের ০৮ এপ্রিল নিজ কর্ম দক্ষতায় অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন।

বোরহানউদ্দী‌ন এবং তজুমদ্দী‌নের বৃহত্তর অঞ্চ‌লের তি‌নি ছি‌লেন সর্বজন শ্র‌দ্ধেয় ও সম্মানীয় । বর্ণাঢ্য জীব‌নের অ‌ধিকারী এ গুণীজন ভোলা জেলার শ‌তোর্ধ বছ‌রের ঐ‌তিহ্যবাহী মির্জাকালু সি‌নিয়র ফা‌জিল মাদরাসায় অধ্যক্ষ প‌দে দা‌য়িত্ব পালনকালীন ২০০২ সা‌লের ১৭ মে মহান র‌বের ডা‌কে সারা দি‌য়ে পরপা‌রে চ‌লে যান।

মৃত্যুকা‌লে তি‌নি স্ত্রী, চার ছে‌লে ও চার মে‌য়েসহ অগ‌ণিত গুণগ্রাহী শুভাকাঙ্খী রে‌খে যান। তার ছে‌লে‌দের ম‌ধ্যে জ্যেষ্ঠ ছে‌লে চাঁদপুর ইসলমীয়া ম‌হিলা আ‌লিম মাদরাসার প্রভাষক মাও. মোহাম্মদ মহ‌সিন। দ্বিতীয় ছে‌লে প্রয়াত মাও. ‌মো. নেছারউদ্দীন ছি‌লেন মির্জাকালু বা‌লিকা বিদ্যাল‌য়ের ধর্মীয় শিক্ষক।

তৃতীয় ছে‌লে সাংস্কৃ‌তিক ব্য‌ক্তিত্ব , প্র‌তিশ্র‌তিশীল তরুণ সাংবাদিক আযাদ আলাউদ্দীন দৈ‌নিক নয়া‌দিগ‌ন্তের ব‌রিশাল ব্যু‌রোর চীফ রি‌পোর্টার। ক‌নিষ্ঠ পুত্র মো. মাকসুদুর রহমান ব্যাংকার হি‌সে‌বে ইসলামী ব্যাংক ব‌াংলা‌দেশ লি. চরফ্যাশন শাখায় কর্মরত।

পত্রিকা একাত্তর /মো. নুর উল্লাহ আ‌রিফ

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news