পেঁপে চাষে সফলতা পেয়েছেন সাকিনুর ইসলাম


উপজেলা প্রতিনিধি, বিরামপুর প্রকাশের সময় : ১২/১০/২০২২, ৪:৪৪ অপরাহ্ণ / ১৪৫
পেঁপে চাষে সফলতা পেয়েছেন সাকিনুর ইসলাম

গ্রামে জন্ম নেয়া একজন সফল কৃষক সাকিনুর ইসলাম। পড়াশুনা স্কুল পর্যন্ত। পরিবারের বড় ছেলে। অভাবের সংসার। সংসারের হাল ধরতে হবে। লেখাপড়ায় বেশি দূর এগুতে পারেননি। মাধ্যমিক পাশও করেছে বটে। এখন বসে থাকা যাবে না।এমন চিন্তা তার মাথার মধ‍্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। ভাগ‍্যের চাকাকে সচল করতে হবে। সে জানে একমাত্র কাজের মাধ্যমে ভাগ‍্যের চাকা ঘুরানো যায়। যেমন চিন্তা তেমন কাজ। তার বাবার কোন জমি নেই। নানার কাছ থেকে কিছু জমি পান তিনি।

এই জমিকেই আঁকড়ে ধরে সাবলম্বী হতে হবে। এমন প্রত্যাশা থেকেই নিজেকে কৃষি কাজে নিয়োজিত করেন। বিভিন্ন সময় জমিতে বিভিন্ন ফসল ফলিয়ে ভাগ্যের চাকা সচল করার চেষ্টা করেন। এসব কথা হয় বিরামপুর পৌর শহরের মিরপুর গ্রামের সেকেন্দার আলীর ছেলে সাকিনুর ইসলামের সঙ্গে। সে বলে প্রথমে আমি স্বল্প পরিসরে জমিতে শুরু করি হাইব্রিড জাতের পেঁপে চাষ। প্রথম দিকে স্বল্প পরিসরে এ চাষ শুরু করলেও এবছর বাণিজ্যিকভাবে ২ বিঘা জমিতে প্রায় ১ হাজার ৫ শত পেঁপের চারা রোপন করি। আর তাতেই পেয়ে যাই সাফল্য।

পেঁপের বাম্পার ফলন উঠতে থাকে তার জমি থেকে। চারা রোপনের ৬ থেকে ৭ মাসের মধ্যেই ফলন পেতে শুরু করি। এক একটি পেঁপে ওজন ২ থেকে ৪ কেজি। বিশাল আকৃতির এই পেঁপে চাষ করে এলাকার সবার দৃষ্টি কেড়েছেন সে। প্রতিদিন লোকজন আসছেন তাঁর পেঁপে বাগান দেখতে। অনেকেই এখন তাঁর সাথে কথা বলে পেঁপে চাষ করার পরিকল্পনা করছেন। অনেকে বাগান করা শুরুও করেছেন।

এ ব্যাপারে সাকিনুর ইসলাম বলেন,জমি তৈরী, চারা রোপন, সার, বালাইনাশক, আগাছা পরিস্কার ও শ্রমিকের টাকাসহ প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন গাছ থেকে প্রায় প্রতিদিন ৭ থেকে ১০ মন কাঁচা-পাকা পেঁপে সংগ্রহ করা যাচ্ছে। তবে কাঁচা পেঁপে থেকে পাকা পেঁপের বেশি লাভ। তাই তিনি পাঁকা পেঁপে সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করছেন। প্রতিমন পাকা পেঁপে বাগান থেকে ১ হাজার থেকে ১১শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাগান থেকে পাকা পেঁপে সংগ্রহ করে এ জেলা ছাড়াও রংপুর-বগুড়াসহ বিভিন্ন হাটে বিক্রি করছেন।

বাগান করার পর থেকে এ পর্যন্ত ৭০ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করেছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে এ বছরে আরো ১ থেকে ২ লাখ টাকার পেঁপে বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারলে আগামী বছরেও প্রায় এমন ফলনই আশা করছেন তিনি। তিনি আরো বলেন,যে কেউ পেঁপে চাষ করে স্বল্প সময়ে স্বল্প পরিশ্রমে বেকারত্ব দুর করার পাশাপাশি সাবলম্বীও হতে পারবেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তিনি তেমন কোন সুযোগ সুবিধা পাননি। তবে তাদের সার্বিক সহযোগিতা পেলে আরো বেশি ফলন ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।

পেঁপে বাগান দেখতে আসা স্থানীয় মির্জাপুর উচ্চ বিদ‍্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, পরিশ্রম ও লক্ষ্য অটুট থাকলে কৃষি কাজে সফল হওয়া সম্ভব। তার বাস্তব উদাহরণ হলো সাকিনুর ইসলাম। তিনি পেঁপে বাগান করে বাজিমাত করেছেন। তার বাগান দেখে এলাকার অনেকেই উৎসাহ পাচ্ছেন পেঁপে চাষে। বিরামপুর উপজেলার অনেক গ্রামেই এখন সবুজ-হলুদ পেঁপের সারিবদ্ধ গাছের দৃষ্টি নন্দন দৃশ্য সকলের চোখ টানছে। কৃষকরাও পাচ্ছেন লাভের পরশ। সেইসাথে অভাব নামক শব্দটি উধাও হচ্ছে গ্রামীণ জনপথ থেকে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিকছন চন্দ্র পাল বলেন, এ উপজেলায় অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমান প্রচুর পরিমাণে হাইব্রিড জাতের পেঁপের চাষ হয়েছে । উন্নত জাতের পেঁপে চাষ করে স্বল্পসময়ে লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা।

পত্রিকা একাত্তর / এবিএম মুছা