হাতুড়ির টুং টাং শব্দে মুখর কামারশালা

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি

৫ জুলাই, ২০২২, ১ year আগে

হাতুড়ির টুং টাং শব্দে মুখর কামারশালা

আসন্ন ঈদুল আজহা সামনে রেখে ব্যস্ততা বেড়েছে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার কামার পল্লীতে। রাত-দিন হাট বাজার আর গলি মুখে তাদের হাতুড়ি-হেমারের টুং টাং শব্দে জানান, দিচ্ছে ক’দিন পরেই ঈদ। আর সেই ঈদকে ঘিরে আশার আলো দেখছেন কামার শিল্প।

নাওয়া-খাওয়া ভুলে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন কামাররা। তৈরি করছেন কাটারি, ছুরি, চাকু, চাপাতি, দা, বঁটি। পাশাপাশি চলছে মোটরচালিত মেশিনে পুরাতন সরঞ্জামে শান দেওয়ার কাজ। আগামী রবিবার ১০ জুলাই ঈদুল আজহা। যতই দিন ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে কামারদের ব্যস্ততা।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও কামার পল্লীতে ব্যস্ত কামাররা। আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি লোহা, স্টীলের যন্ত্রপাতির সামনে এমনিতেই নাস্তানাবুদ এই শিল্প সংশ্লিষ্টরা। সারা বছর কাজের চাপ না থাকলেও ঈদুল আজহার আগে কাজের চাপ বাড়ে। কামারদের দাবি, এই কোরবানির মৌসুমেই তাদের সবচেয়ে বেশি কাজ হয়।

তবে কয়লার দাম বেশি হওয়ায় অন্য বারের চেয়ে এবার ছুরি, দা, বটির দাম কিছুটা বেশি বলে জানান কামাররা। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কামার শিল্প বিলুপ্তপ্রায়। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। উল্টো প্রযুক্তির দাপটে ক্রমেই মার খাচ্ছে এ শিল্প। বছরের ১১ মাস কামারশালায় তেমন একটা কাজ থাকে না বললেই চলে।

এদিকে, কোরবানির পশুর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে বা পুরাতন সরঞ্জামে শান দিতে ভুলছেন না মুসল্লিরা। এ জন্য ভিড় জমাচ্ছেন কামার পল্লীতে। অনেকে পছন্দ করে কিনছেন ছুরি, দা, কুড়াল, চাপাতি, হাঁসুয়া। সঙ্গে মাংস কাটার জন্য কাঠের গুঁড়িও কিনছেন অনেকে।

উপজেলার কামার পল্লীর বিভিন্ন দোকান ঘুরে জানা গেছে, প্রতিটি কাটারি বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ৩০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা, দা ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, কেজি হিসেবে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, ছোট ছুরি ১০০ থেকে ৩০০ টাকা। বড় ছুরি ১৫০০থেকে ২০০০ এছাড়া বঁটি প্রতি পিস ১০০ থেকে ৩০০ টাকা।

ক্রেতাদের দাবি, এ বছর পশু কোরবানির উপকরণের দাম তুলনামূলক বেশি। আর কামারদের দাবি, কয়লা ও লোহার দাম বেড়ে যাওয়ায় সরঞ্জামাদির দাম কিছুটা বাড়ানো হয়েছে।

উপজেলার বোয়ালিয়া বাজারের ওমল ভূমি কামার জানান, চাপ বেশি থাকায় রাতদিন কাজ করতে হচ্ছে তাদের। নতুন সরঞ্জামের চাহিদার পাশাপাশি পুরাতনগুলোতে শান দেওয়া হচ্ছে। তবে এ বছর বেশিরভাগ ক্রেতা পুরাতন সরঞ্জাম মেরামত করতে নিয়ে আসছেন। বিক্রি একটু কম হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ রোডের কামার পল্লীর রাম কর্মকার বলেন, '৫০বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত আছি। আমার পূর্বপুরুষরাও এই কাজ করতেন। এখন সারা বছর তেমন কোনো কাজ থাকে না। তবে কোরবানির ঈদের আগে কাজের চাপ থাকে। খুব বেশি বিক্রি হচ্ছে না, ঈদের এক-দুই দিন আগে বিক্রি বাড়বে।’

ফজলু নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘ঈদের আর কয়েকদিন বাকি। তাই আগে থেকেই পশু জবাইয়ের সরঞ্জামের নতুন ছুরি কিনে রাখছি।’ আরেক ক্রেতা আব্দুল খালেক বলেন, ‘পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম কেনার পাশাপাশি পুরাতনগুলোতে শান দিতে নিয়ে এসেছি।’

এ বিষয়ে বোয়ালিয়া বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার বলেন, ‘কেউ যাতে পণ্য অধিক দামে বিক্রি করতে না পারেন এবং কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে জন্য নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি।’

পত্রিকাএকাত্তর /শাহাদত হোসেন

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news