কৈখালী অনাবৃষ্টিতে খাল বিল শুকিয়ে কৃষিসহ জনজীবন হাহাকার

সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি

৩০ জুলাই, ২০২২, ১ year আগে

কৈখালী অনাবৃষ্টিতে খাল বিল শুকিয়ে কৃষিসহ জনজীবন হাহাকার

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলীয় জনপদের কৈখালী ইউনিয়নের খাল-বিল-পুকুর শুকিয়ে তলার মাটি পর্যন্ত ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। মাঠ-ঘাট আর বিল সব ধুসর, বিবর্ণ হয়ে গেছে।কৈখালী ইউনিয়নে নেই সবুজের আস্তরণ।

দীর্ঘ খরায় হাজার হাজার পরিবারের জীবন নিরাপদ পানির অভাবে বিপন্নের শঙ্কায় পড়েছে। আশপাশের দুরের কোথাও থেকে গভীর পিএসএফ ও পুকুরের পানি খাবারের জন্য সংগ্রহ করলেও রান্না,গোসল কিংবা ব্যবহারের পানির জন্য চলছে হাহাকার।

কৈখালীতে খাল কিংবা ব্যক্তিগত পুকুর এখন পানিশুন্য হয়ে আছে। কোন কোন পুকুরের তলদেশে খানিকটা পানি থাকলেও তা এখন ব্যবহারের উপযোগী নয়। দীর্ঘখরা আর প্রচন্ড দাবদাহে এ জনপদের মানুষ এখন দিশাহারা হয়ে পড়েছে।

কৃষকসহ সাধারন মানুষ তাদের নিত্যদিনের ব্যবহারের পানি পর্যন্ত পাচ্ছে না। গবাদিপশু পর্যন্ত হানা দেয় বিভিন্ন বাড়ির শুকিয়ে যাওয়া পুকুরের তলদেশের পানিতে। এভাবে একটানা অনাবৃষ্টি অন্তত একযুগে দেখেননি এ জনপদের মানুষ। কৈখালীর সাপখালী পাড়ার সামাদ গাজী জানালেন, দুপুরে গবাদিপশু মাঠ ছেড়ে পানি খাওয়ার জন্য দৌড়ে ছুটে আসে বাড়ির পুকুরে।

খরায় মানুষের বাড়ি ঘরের আশপাশের শাক-সবজির ক্ষেত পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সকল কৃষকের অভিমত যেসব খাল ভরাট হয়ে গেছে তা দ্রুত খনন না করায় মিঠা পানি সংগ্রহ করতে না পারায় খরার কবলে পড়ে তাদের এমন দুরাবস্থা হয়েছে।

এমনিতে কৈখালী ইউনিয়নের একদিকে বিত্তশালীদের দখলে চলছে সরকারি খাস খাল দখলের হরিলুট,অন্য দিকে দখলমুক্ত খালগুলো ভরাট হয়ে এখন শুকিয়ে রয়েছে। তা আবার কোন কোন খাল চাষযোগ্য কৃষি জমি দেখিয়ে ডিসিআর দেয়ায় কৃষকের কপাল আরেকদফা পুড়েছে। আবার যেসব খালে একটু গভীরতা রয়েছে স্লুইস সংযুক্ত। সেসব খালে এক শ্রেণীর সমাজবিরোধী লোভী অমানুষ লোনা পানি ঢুকিয়ে দিয়েছে।

৫নং কৈখালী ইউনিয়নের পূর্ব কৈখালী, পশ্চিম কৈখালী,মধ্য কৈখালী, দক্ষিণ কৈখালী,কাটামারী, নিদয়া,মল্লিকপাড়া এমন অবস্থা দেখা গেছে,অবস্থা এমন হয়েছে যে, এখন খাল-নদী-সাগর বেষ্টিত শ্যামনগরের গোটা উপকূলে ব্যবহারসহ নিরাপদ খাবার পানির ভয়াবহ সঙ্কট চলছে।

পূর্ব কৈখালী গ্রামের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী স্নোতারা জানায়, বাড়ি সংলগ্ন খালটির তলদেশে কাদামিশ্রিত ঘোলাটে পানি তারা ব্যবহার করছে চালসহ থালাবাসন ধোঁয়া এবং গোসলসহ সব কাজে। পশ্চিম কৈখালী এলাকার পঞ্চাশোর্ধ ফিরোজা বেগম জানালেন, কৈখালী এলাকায় বেড়িবাঁধের ভেতরের শ্যালো টিউবওয়েলের পানি লোনা।

এখন তারা মাটির তলদেশের শ্যালো টিউবওয়েলের নোনা পানি টেনে ব্যবহার করছেন। আর খাবার পানি সংগ্রহ করতে এক থেকে দুই কিলোমিটার দুরে যেতে হয় আবার পানি কিনতে ও হচ্ছে।

এছাড়াও কৃষিকাজ, নিত্যদিনের ব্যবহারিক কাজের ভয়াবহ দুরাবস্থার পাশাপাশি মানুষ বিভিন্ন ধরনের রোগব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে পানির সমস্যায়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায় নিরাপদ খাবার ও ব্যবহারের পানির সঙ্কটে, জ্বর, ডায়রিয়া,আমাশয়,টাইফয়েডসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগব্যাধির প্রকোপ বেড়েই চলছে। কৈখালী গ্রামে লক্ষ্য করা যায় অধিকাংশ দুষিত পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত সাধারণ মানুষেরা।

সব মিলিয়ে বলা যায়, শ্যামনগর উপজেলার উপকূলের কৈখালী এখন পানির সঙ্কট তীব্র আকার ধারন করছে। আর এর ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে।

পত্রিকাএকাত্তর /আলফাত হোসেন

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news