পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা একটি বিশেষ কুকুরের কথা উল্লেখ করেছেন, যা পরিচিত আসহাবে কাহাফের কুকুর নামে। এই কুকুরটি ছিল সেই ঈমানদার যুবকদের সঙ্গী, যারা নিজেদের ঈমান বাঁচানোর জন্য লোকালয় ছেড়ে গোপনে একটি গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। কুকুরটি শুধু তাদের সঙ্গে ছিল না, বরং পাহারাদারের মতো তাদের রক্ষা করত।
ইসলামপূর্ব এক যুগে একটি অঞ্চলের মানুষ আল্লাহকে ভুলে মূর্তি পূজা করত। সেই যুগের সম্ভ্রান্ত সাত যুবক মূর্তি পূজাকে ঘৃণা করত এবং গোপনে আল্লাহর ইবাদত করত। মানুষের হাতে বানানো মূর্তির সামনে মাথা নত করা তাদের বিবেক মানত না। তারা আল্লাহতে ঈমান এনেছিল এবং তাওহীদের পথে দৃঢ় ছিল। যখন খোদাদ্রোহী শাসক তাদের ঈমানের কথা জানতে পারে, তখন তিনি তাদের আবার মূর্তি পূজায় ফেরাতে চেষ্টা করেন। যুবকেরা এতে রাজি না হলে শাসক তাদের কঠোর শাস্তির হুমকি দেন।
নিজেদের ঈমান রক্ষার জন্য তারা শেষ পর্যন্ত জনপদ ছেড়ে পাহাড়ের একটি গুহায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেই সময় তাদের সঙ্গে যুক্ত ছিল একটি কুকুর, যা তাদের সঙ্গী হয়ে গুহার দরজায় পাহারা দিত। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা এ ঘটনা উল্লেখ করে বলেছেন—
“তুমি মনে করবে তারা জাগ্রত, অথচ তারা ঘুমন্ত ছিল। আমি তাদের ডানে-বামে উল্টেপাল্টে দিতাম। আর তাদের কুকুরটি গুহার দরজায় সামনের পা দুটি প্রসারিত করে শুয়ে ছিল। তুমি যদি তাদের দেখতে, ভয় পেয়ে ফিরে যেতে।” (সুরা কাহফ, ১৮)
এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা গুহার ভীতিকর ভাব ও কুকুরটির অবস্থানের বিশেষ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছেন। কুকুরটি ছিল গুহার প্রহরীস্বরূপ।
এ ঘটনার পর আসহাবে কাহাফের সংখ্যা নিয়ে মানুষের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। কোরআনে আল্লাহ বলেন—
কেউ বলবে, তারা ছিল তিনজন—চতুর্থজন ছিল তাদের কুকুর। কেউ বলবে, পাঁচজন—ষষ্ঠজন ছিল তাদের কুকুর। আবার কেউ বলবে, সাতজন—অষ্টম ছিল তাদের কুকুর। আল্লাহ বলেন, তাদের প্রকৃত সংখ্যা আমার প্রতিপালকই ভালো জানেন, অল্পসংখ্যক ছাড়া কেউ তা জানে না। তাই তাদের বিষয়ে বিতর্কে জড়াতে নিষেধ করা হয়েছে। (সুরা কাহফ, ২২)
এভাবে কোরআনে বারবার উল্লেখ করা কুকুরটি শুধুমাত্র একটি প্রাণী ছিল না—বরং আল্লাহর নিকট নেক মানুষের সঙ্গ লাভের সম্মানে সে গুরুত্ব পেয়েছিল। আসহাবে কাহাফের কাহিনির অন্যতম অংশ হিসেবে তাকে কোরআনে অমর করা হয়েছে।

