পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য প্রতিদিন পাঁচবার আজান দেওয়া হয়, যা ইসলামের অন্যতম পরিচয় ও গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। সাধারণত মসজিদের মাইক থেকেই আজান দেওয়া হয় এবং এ কাজের জন্য নির্দিষ্ট মুয়াজ্জিন থাকেন।
শীত মৌসুমে বিভিন্ন এলাকায় মসজিদের সংলগ্ন মাঠে মাহফিলের আয়োজন বেশি হয়। এমন সময় প্রশ্ন ওঠে—মাহফিলের মঞ্চ থেকে দেওয়া আজানে কি মসজিদে জামাত করা যাবে?ফিকহবিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
একই এলাকায় আজান হলে সেই আজান বৈধ
আলেমদের মতে—যেকোনো এলাকায় একটি আজান দেওয়া হলে এবং তার আওয়াজ যত দূর পর্যন্ত পৌঁছায়, সেই সীমার মধ্যে থাকা মানুষ ঐ আজানের ভিত্তিতে নামাজের জামাতে অংশ নিতে পারেন।
অর্থাৎ মাহফিলের মাইক থেকে যদি আজান দেওয়া হয়, তবে সেই আজান বৈধ—অন্যান্য জায়গায় সেই অনুযায়ী জামাত করা যেতে পারে।
তবে মসজিদের ক্ষেত্রে নিয়ম কিছুটা ভিন্ন
মসজিদকে কেন্দ্র করে ইসলামী সমাজব্যবস্থায় কিছু বিশেষ বিধান রয়েছে—
✔ মসজিদে নির্দিষ্ট মুয়াজ্জিন থাকা
✔ পাঁচ ওয়াক্ত আজান নিয়মিত মসজিদ থেকেই হওয়া
✔ জামাতে নামাজের জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা বজায় রাখা
মসজিদের আজান বন্ধ রেখে মাহফিলের আজানের ওপর নির্ভর করা—মাকরুহ, অর্থাৎ অপছন্দনীয়।এতে মসজিদের ভাবমূর্তি ও নিয়মিত পরিচয় ক্ষুণ্ণ হয়।
তাই, ফেকাহবিদদের সিদ্ধান্ত হলো—মাহফিলের আজান বৈধ হলেও মসজিদের জন্য নিজস্ব আজান বজায় রাখা জরুরি।
আজান-ইকামতের গুরুত্ব
ইসলামে আজান দেওয়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা—যা ওয়াজিবের কাছাকাছি গুরুত্ব বহন করে। ইকামতও জামাতে নামাজের জন্য সুন্নত। আর একাকী নামাজ পড়লে ইকামত পড়া মুস্তাহাব। এ কারণে ফরজ নামাজের ক্ষেত্রে আজান-ইকামত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।
আজানের পর দোয়ার ফজিলত
হজরত জাবির (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন—যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের আজান শুনে নিচের দোয়া পড়বে, তার জন্য কেয়ামতের দিন শাফায়াত পাওয়া নিশ্চিত হবে—
ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺭَﺏَّ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟﺪَّﻋْﻮَﺓِ ﺍﻟﺘَّﺎﻣَّﺔِ، ﻭَﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﺍﻟْﻘَﺎﺋِﻤَﺔِ، ﺁﺕِ ﻣُﺤَﻤَّﺪﺍً ﺍﻟْﻮَﺳِﻴﻠَﺔَ ﻭَﺍﻟْﻔَﻀِﻴﻠَﺔَ، ﻭَﺍﺑْﻌَﺜْﻪُ ﻣَﻘَﺎﻣَﺎً ﻣَﺤﻤُﻮﺩﺍً ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻭَﻋَﺪْﺗَﻪ
অর্থ:“হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহ্বান ও প্রতিষ্ঠিত সালাতের প্রভু! মুহাম্মদ (সা.)–কে অসিলা, ফজিলত এবং মাকামে মাহমূদ দান করুন, যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাঁকে দিয়েছেন।”
(সহিহ বুখারি ২২২)
সারসংক্ষেপ
- মাহফিলের আজান বৈধ, অন্যদের জন্য জামাত করা জায়েজ।
- কিন্তু মসজিদের নিজস্ব আজান সবসময় বজায় রাখা জরুরি।
- মসজিদের আজান বাদ দিয়ে বাহিরের আজানের ওপর নির্ভর করা মাকরুহ।
- আজান-ইকামত ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন এবং আজানের পর দোয়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে।

