শীত আসলেই ত্বকে শুষ্কতা ও রুক্ষতা দেখা দেয়। এ কারণে অনেকেই লোশন, ক্রিম, স্নো বা তেল ব্যবহার করেন। কিন্তু এসব লাগানো অবস্থায় নামাজ পড়া জায়েজ কি না—এ বিষয়টি নিয়ে অনেকের মনে দ্বিধা থাকে। ফিকহশাস্ত্রবিদদের মতে, এখানে দুটি বিষয় প্রাধান্য পায়—লোশনের উপাদান এবং অজুর সময় পানি পৌঁছানো।
লোশন-ক্রিম ব্যবহার করা কি বৈধ?
ইসলামী আলেমদের মতে—লোশন, ক্রিম, স্নো বা তেল ব্যবহার করা মূলত বৈধ, যতক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিত প্রমাণ না পাওয়া যায় যে এতে কোনো নাপাক বা হারাম উপাদান মিশানো হয়েছে।
বর্তমানে ব্যবহৃত সাধারণ ক্রিম বা লোশনে নাপাক বস্তু থাকার প্রমাণ নেই। তাই এগুলো ব্যবহার করে নামাজ পড়ায় কোনো সমস্যা নেই।
লোশন লাগানো অবস্থায় অজু করলে হবে কি?
এটাই মানুষের বড় প্রশ্ন—ওপরের স্তরে লোশন বা তেল লাগানো থাকলে পানি কি চামড়ায় পৌঁছায়?
ইসলামী বিধান হলো—
➡️ অজুর অঙ্গগুলোতে পানি সরাসরি পৌঁছানো জরুরি।
➡️ যদি কোনো পদার্থ পানি পৌঁছাতে বাধা দেয়, তাহলে অজু হবে না।
তবে অধিকাংশ ক্রিম-লোশন ত্বকের সঙ্গে মিশে যায়, পানি প্রবাহে বাধা তৈরি করে না। এ ক্ষেত্রে—
✔ অজুর সময় হাত-পা ভালোভাবে ঘষে পানি লাগালেই যথেষ্ট
✔ সাবান দিয়ে ধোয়ার প্রয়োজন নেই
✔ অতিরিক্ত শক্ত আবরণ না থাকলে অজু বৈধ
হাদিস থেকে সতর্কবার্তা
রাসুল (সা.) পা ঠিকমতো না ভেজানো ব্যক্তিদের সতর্ক করে বলেছেন—“গোড়ালির নিচের অংশগুলোর জন্য জাহান্নামের আগুন রয়েছে।”(বুখারি ৯৬, মুসলিম ২৪১)
এ থেকে বোঝা যায়—অজুর অঙ্গ ভালোভাবে ভেজানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শরীরে পানি না পৌঁছালে করণীয়
যদি কোনো ক্রিম/তেল সত্যিই পানি আটকায় এবং পানি চামড়ায় না পৌঁছায়—
➡️ তাহলে অজু বা গোসল হবে না।
➡️ ঐ অজু দিয়ে পড়া নামাজ পুনরায় আদায় করতে হবে।
সাহাবাদের আমল থেকেও দেখা যায়, আংটি বা কোনো বস্তু থাকলে তারা নড়াচড়া করে পানি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতেন।
রায় কী দাঁড়ায়?
- সাধারণ লোশন-ক্রিম ব্যবহার করা হালাল ও বৈধ
- এগুলো সাধারণত পানি আটকায় না
- অজুর সময় অঙ্গগুলো ভালোভাবে ঘষে পানি লাগালেই অজু সহীহ
- পানি নিশ্চিতভাবে পৌঁছায়নি—এমন সন্দেহ থাকলে অজু পুনরায় করা ভালো
সারসংক্ষেপ
- লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করে নামাজ পড়া যায়—যদি এতে হারাম উপাদান না থাকে
- অজুর অঙ্গগুলো ভালোভাবে ভিজানো জরুরি
- লোশন পানি আটকালে অজু হবে না, তবে সাধারণ লোশন-পানি আটকায় না
- সাবান দিয়ে ধোয়ার প্রয়োজন নেই

