হাদিসে রোগীর যত্ন নেওয়ার নির্দেশ: ইসলামে অসুস্থদের প্রতি করণীয়

ধর্ম ডেস্ক

ধর্ম ডেস্ক

১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২১ ঘন্টা আগে

হাদিসে রোগীর যত্ন নেওয়ার নির্দেশ: ইসলামে অসুস্থদের প্রতি করণীয়

ইসলামে রোগ-ব্যাধি শুধু কষ্ট বা দুর্ভাগ্য নয়—বরং তা আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা ও রহমত। মানুষ মাত্রই জীবনে কখনো না কখনো অসুস্থতার সম্মুখীন হয়। তখন মুমিনের কর্তব্য হলো ধৈর্য ধরা, চিকিৎসা নেওয়া, আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া এবং সর্বোপরি উপলব্ধি করা যে রোগের মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয়।

মহানবী মুহাম্মদ (সা.)—এর জীবন থেকেই আমরা দেখি, তিনি সবসময় রোগীদের প্রতি অসাধারণ সহমর্মিতা দেখিয়েছেন। অসুস্থকে সান্ত্বনা দেওয়া, খোঁজ নেওয়া এবং তাদের পাশে দাঁড়ানোকে তিনি মুসলমানের মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

নিচে হাদিসের আলোকে রোগীর প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও রোগীর জন্য সওয়াবের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হলো—

রোগের মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয়

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন—রাসুল (সা.) বলেছেন,একজন মুসলিমের উপর যে কষ্ট—রোগ, দুঃশ্চিন্তা, দুঃখ বা কোনো কাঁটার ব্যথাই হোক—এসবের কারণে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ মুছে দেন।(বুখারি)

আরেক হাদিসে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, একবার তিনি রাসুল (সা.)-কে জ্বরে কাঁপতে দেখে বিস্মিত হন। নবীজি জানান, তিনি দ্বিগুণ কষ্ট অনুভব করেন এবং এর ফলে দ্বিগুণ সওয়াব লাভ করেন। মুসলমান যে কোনো কষ্টে আক্রান্ত হলে আল্লাহ তার ভুলগুলো ঝরে ফেলেন, যেমন গাছ থেকে পাতা ঝরে পড়ে।(বুখারি)

রোগে ধৈর্য ধারণের গুরুত্ব

নবীজি (সা.) বলেন—মুমিনের জীবনের প্রতিটি অবস্থাই কল্যাণময়। সুখ পেলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে; আর কষ্ট পেলে ধৈর্য ধরে—দুটোই তার জন্য মঙ্গল।(মুসলিম)

আরেক হাদিসে আনাস (রা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন—যার চোখ কেড়ে নিয়ে তাকে পরীক্ষা করি এবং সে ধৈর্য ধরে, তাহলে আমি তাকে জান্নাত দেবো।(বুখারি)

রোগীকে দেখতে যাওয়ার গুরুত্ব

রাসুল (সা.) অসুস্থদের খোঁজ নেওয়াকে মুসলমানের অন্যতম অধিকার বলেছেন। হাদিসে এসেছে—“ক্ষুধার্তকে খাবার দাও, অসুস্থকে দেখতে যাও, বন্দীকে মুক্ত করতে সহায়তা করো।”(বুখারি)

আরেক হাদিসে বলা হয়, একজন মুসলমানের পাঁচটি অধিকার হলো:সালামের জবাব দেওয়া, হাঁচিদাতাকে দোয়া করা, দাওয়াত গ্রহণ করা, অসুস্থকে দেখতে যাওয়া এবং জানাযায় অংশ নেওয়া।(মুসলিম)

রোগী দেখতে যাওয়ার বিশাল ফজিলত

রমহমতের দুনিয়া উন্মুক্ত হয়ে যায় যখন কেউ রোগীকে দেখতে যায়। হাদিসে এসেছে—

“রোগী দেখতে গেলে, ব্যক্তি জান্নাতের বাগান থেকে ফল সংগ্রহ করতে থাকে—যতক্ষণ সে রোগীকে দেখতে থাকে।” (মুসলিম)

“রোগী দেখতে যাওয়া মানুষকে ফেরেশতারা দোয়া করে—সকালে গেলে সন্ধ্যা পর্যন্ত, আর সন্ধ্যায় গেলে সকাল পর্যন্ত।” (তিরমিজি)

একজন অসুস্থ ইহুদি কিশোরকেও নবীজি (সা.) দেখতে গিয়েছিলেন; সে ইসলাম গ্রহণ করলে নবীজি আল্লাহর শোকর আদায় করেছিলেন। (বুখারি)

রোগীকে দেখা—নবীর (সা.) পদ্ধতি

নবীজি (সা.) রোগীকে সান্ত্বনা দিতেন, ভরসা জোগাতেন এবং বলতেন—“তোমার কোনো ক্ষতি নেই, আল্লাহ চাইলে এই রোগের মাধ্যমে তোমার গুনাহ মাফ করে দেবেন।”(বুখারি)

ইবনুল কায়্যিম জানান—নবীজি রোগীর কাছে গিয়ে তার সমস্যার কথা জিজ্ঞেস করতেন, প্রয়োজনীয় চিকিৎসার পরামর্শ দিতেন, কপালে হাত রেখে দোয়া করতেন।

তিনি দোয়া করতেন—اَذْهَبِ الْبَأْسَ رَبَّ النَّاسِ - وَاشْفِ اَنْتَ الشَّافِي ...অর্থ: “হে মানুষের প্রতিপালক! রোগ দূর করুন, আরোগ্য দিন। প্রকৃত আরোগ্যদাতা আপনিই।”(বুখারি)

চিকিৎসা গ্রহণে উৎসাহ

নবীজি (সা.) বলেছেন—“আল্লাহ বার্ধক্য ছাড়া এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার প্রতিষেধক তিনি দেননি।”(তিরমিজি)

তিনি হারাম জিনিস দিয়ে চিকিৎসা করতে নিষেধ করেছেন, কারণ হারামে শিফা নেই।(ইবন হিব্বান)

আর দোয়া ও কোরআনের মাধ্যমে চিকিৎসাকে তিনি সর্বোত্তম বলেছেন।(আহমদ)

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news