ইসলামে রোগীর সেবা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি আমল। অসুস্থ মানুষের খোঁজখবর নেওয়া, তাকে সান্ত্বনা দেওয়া ও তার প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা—এসব কাজকে শুধু মানবিক দায়িত্বই নয়, আল্লাহর নিকট বিশেষভাবে পছন্দনীয় ইবাদত হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। মহানবী মুহাম্মদ (সা.) নিজেও নিয়মিত অসুস্থদের দেখতে যেতেন এবং মুসলমানদের এ বিষয়ে উৎসাহিত করেছেন। বিভিন্ন সহিহ হাদিসে রোগীর সেবার গুরুত্ব ও ফজিলত স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে একজন মুসলমানের সঙ্গে অপর মুসলমানের সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ‘রোগীকে দেখতে যাওয়া’ একটি জরুরি কর্তব্য। নিচে রোগীর সেবার ফজিলত সম্পর্কিত পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস তুলে ধরা হলো—
১. মুসলমানের পাঁচটি অধিকার
রাসুল (সা.) বলেছেন, একজন মুসলিমের উপর আরেকজন মুসলিমের পাঁচটি হক রয়েছে—
১) সালামের জবাব দেওয়া
২) হাঁচি দিলে তাকে রহমতের দোয়া করা
৩) তার দাওয়াত গ্রহণ করা
৪) অসুস্থকে দেখতে যাওয়া
৫) তার জানাযায় অংশ নেওয়া
(মুসলিম)
এই হাদিসে অসুস্থকে দেখতে যাওয়া মুসলমানের উপর মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে সমাজে পারস্পরিক সহানুভূতি ও মানবিকতা বৃদ্ধি পায়।
২. ক্ষুধার্তকে খাদ্য ও রোগীকে দেখতে যাওয়ার তাগিদ
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “ক্ষুধার্তকে খাবার দাও এবং অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাও।”
(বুখারি)
এ হাদিসে অসুস্থকে দেখতে যাওয়া দান-সদকার মতোই গুরুত্বপূর্ণ ও সওয়াবপ্রাপ্ত একটি কাজ হিসেবে বর্ণিত হয়েছে।
৩. চিকিৎসা গ্রহণের নির্দেশ
নবীজি (সা.) মানুষের কল্যাণের জন্য চিকিৎসা গ্রহণকে জরুরি বলেছেন। তিনি ইরশাদ করেন,
“আল্লাহ বার্ধক্য ছাড়া এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার জন্য তিনি প্রতিকারও সৃষ্টি করেননি।”
(তিরমিজি)
এ হাদিস চিকিৎসার গুরুত্ব স্পষ্ট করে, আর রোগীকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেওয়াও ইসলামের দৃষ্টিতে মহৎ কাজ।
৪. রোগীকে দেখতে যাওয়ার বিপুল প্রতিদান
আলী (রা.) বর্ণনা করেন:
“কোনো মুসলমান সকালে অসুস্থ মুসলমানকে দেখতে গেলে ৭০ হাজার ফেরেশতা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করে। আর সন্ধ্যায় গেলে ৭০ হাজার ফেরেশতা ফজর পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকে এবং জান্নাতে তার জন্য একটি বাগান তৈরি করা হয়।”
(তিরমিজি: ৯১১)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়—অসুস্থকে দেখতে যাওয়া শুধু মানবিক দায়িত্বই নয়, বরং তা পরকালের বিশাল প্রতিদান লাভের একটি সুযোগ।
৫. রোগীকে সান্ত্বনা দেওয়ার নির্দেশ
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“যখন তোমরা কোনো রোগীর কাছে যাবে, তাকে সান্ত্বনা দেবে।”
(তিরমিজি)
রোগীর মনোবল বৃদ্ধিতে সান্ত্বনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামে রোগীকে মানসিক শক্তি দেওয়াকে ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
সার্বিকভাবে ইসলামের দৃষ্টিতে রোগীর সেবা
উপরের হাদিসগুলো দেখায়, রোগীর সেবা শুধু নৈতিকতা বা মানবিকতার বিষয় নয়, এটি ইসলামের একটি বিশেষ নির্দেশনা। অসুস্থ মানুষের খোঁজ নেওয়া, তার পাশে দাঁড়ানো, তাকে সান্ত্বনা দেওয়া এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করা—এসব কাজকে আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয় আমল বলা হয়েছে।
একজন মুসলমানের জন্য এটি সমাজে দয়া, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ।

