হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

ধর্ম ডেস্ক

ধর্ম ডেস্ক

১৩ মে, ২০২২, ১ year আগে

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

প্রাক-ইসলামী যুগে যখন চরম উচ্ছৃঙ্খলতা, পাপাচার, দুরাচার, ব্যাভিচার, মিথ্যা, হত্যা, লুন্ঠন, মদ্যপান, জুয়ায় ভরপুর ছিল। অন্যায়-অপরাধ, দ্বন্ধ-সংঘাত, সন্ত্রাস-নৈরাজ্য, নৈরাশ্য আর হাহাকার বিরাজ করছিল ঠিক এমন সময় মানবতার মুক্তির দিশারী সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সারা জাহানের হিদায়েতের জন্য আবির্ভূত হলেন।

রাসুল (সাঃ) হলেন বিশ্ব মানতার জন্য আল্লাহর এক অনন্য রহমত স্বরুপ প্রেরিত। মহান বিশ্ব পরিচালক ঘোষণা করেনছেন, “আমি তোমাকে প্রেরণ করেছি বিশ্ব জগতের জন্য বিশেষ রহমত স্বরুপ।”

জন্ম ও শৈশবঃ

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রের বনি হাশিম বংশে জন্মগ্রহণ করেন। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ৫৭০ খৃীস্টাব্দে ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার জন্মগ্রহণ করেন। তার মায়ের নাম আমিনা এবং পিতার নাম আব্দুল্লাহ।

অতি অল্প বয়স থেকেই আল্লাহ তাকে কঠিন পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করে নেন। জন্মের পূর্বে পিতা, ৬ বছর বয়সে মা আমিনাকে হারান। এবং ৮ বছর বয়সে তার দাদা মৃত্যু বরণ করেন। ইয়াতীম শিশু বড় হয়ে উঠে চাচার সযত্ন ভালবাসায়।

নামকরণঃ

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম হওয়ার পরই মা আমেনা এ সংবাদ দাদা আব্দুল মুত্তালিবকে পাঠান। সংবাদ পাওয়ার পরেই তিনি ছুটে আসেন। পরম স্নেহে দেখেন, যত্নের সঙ্গেঁ কোলে নিয়ে কা’বার ভেতর প্রবেশ করেন, আল্লাহর হামদ বর্ণনা করেন এবং দোয়া করেন। অতঃপর তাঁর নাম রাখেন ‘মুহাম্মদ’(প্রশংসিত)।

সর্বপ্রাচীন পূর্ণাঙ্গ জীবনীগ্রন্থ

প্রাচীন সিরাত গ্রন্থের কথা উঠলেই সবাই একনামে ইবনে ইসহাক (মৃ. ১৫১ হি.) রচিত ‘সিরাতে ইবনে ইসহাক’কে চেনেন; যার ভিত্তিতে আবদুল মালিক ইবনে হিশাম (মৃ. ২১৮ হি.) জনপ্রিয় সিরাতগ্রন্থ ‘সিরাতে ইবনে হিশাম’ রচনা করেছেন। অথচ এর অন্তত এক যুগ আগে রচিত হয়েছে মুসা ইবনে উকবার (মৃ. ১৪১ হি.) সুবিশাল সিরাতগ্রন্থ ‘আল-মাগাজি’ এবং তা এখনো অক্ষত আছে।

একটি বর্ণনা অনুযায়ী ‘মুআম্মার ইবনে রাশেদ’র (মৃ. ১৫১ হি.) সিরাতগ্রন্থ ‘আল-মাগাজি’ও সিরাতে ইবনে ইসহাকের পূর্বে রচিত এবং তার কপিও দুর্লভ নয়। লেখকদের জীবনকালের তারতম্য থেকেও প্রাচীনত্বের বিষয়টি পরিষ্কার হয়।

ইবনে ইসহাকের জন্ম ৮৫ হিজরি এবং মৃত্যু ১৫১ হিজরি। আর মুসা ইবনে উকবার জন্ম ৬৮ হিজরি এবং মৃত্যু ১৪১ হিজরি। সুতরাং অস্তিত্বের বিচারে ইবনে ইসহাক রচিত ‘সিরাত’ নয়—মুসা ইবনে উকবার ‘আল-মাগাজি’ সর্বপ্রাচীন পূর্ণাঙ্গ সিরাতগ্রন্থ।

গত শতকের প্রথম দিকে জার্মান প্রাচ্যবিদ এডওয়ার্ড সাচাউ (মৃ. ১৯৩০ খ্রি.) বার্লিনে সরকারি প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা থেকে চতুর্দশ শতাব্দীর শেষের দিকের হাদিসবেত্তা ইউসুফ ইবনে কাজি শাহবাহ (মৃ. ১৩৮৭ খ্রি.) সংকলিত মুসা ইবনে উকবা বর্ণিত হাদিসগুলো ও ‘মাগাজি’র ২০টি অধ্যায়–সংবলিত একটি পাণ্ডুলিপি আবিষ্কার করেন এবং কিছু নির্বাচিত অংশ ইংরেজিতে প্রকাশ করেন।

মি‘রাজ তথা উর্দ্ধারোহনঃ

রাসূলুল্লাহ (সঃ) -এর বয়স যখন ৫১ বছর নয় মাস হয়, তখন তাঁকে সশরীরে মর্যাদাপূর্ণ ইসরা ও মি’রাজ ভ্রমণের মাধ্যমে সম্মানিত করা হয়। মি’রাজে রাসূলুল্লাহ (সঃ) প্রথমে কা’বা থেকে বাইতুল মুকাদ্দাসে যান, অতঃপর সেখান থেকে এক এক করে সাত আসমান অতিক্রম করে মহান আল্লাহর আরশে আজীমে তাশরীফ গ্রহণ করেন।

এ মি’রাজ সফরে রাসুলুল্লাহ (সঃ) পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে বিধান লাভ করেন। মি’রাজে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ) জান্নাত এবং জাহান্নাম স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেন।

দাওয়াতের আদেশঃ

মহান আল্লাহ তায়ালা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ইসলামের দাওয়াতের আদেশ দিয়ে ইরশাদ করেন,

يَاأَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ ﴿১﴾ قُمْ فَأَنْذِرْ ﴿২﴾ وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ ﴿৩﴾ . (سورة المدثر)

হে চাদরাবৃত ব্যক্তি! ওঠ এবং সতর্ক কর।

গোপনে ইসলামের দাওয়াতঃ

রাসলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় প্রতিপালকের আদেশ যথাযথ পালন করেন এবং গোপনে মানুষের মাঝে ইসলাম প্রচার করতে শুরু করেন। তিনি সর্বপ্রথম আপন পরিবার- পরিজন ও বন্ধু-বর্গকে ইসলামের দাওয়াত দেন। সর্বপ্রথম খাদীজা রা. তাঁর দাওয়াত গ্রহণ করেন। পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম আবূ বকর সিদ্দীক (রা), ছোটদের মধ্যে আলী ইবনে আবূ তালিব রা. এবং ক্রীতদাসদের মধ্যে যায়েদ ইবনে হারেসা রা. ইসলাম গ্রহণ করেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন বছর পর্যন্ত গোপনে তার নিকটস্থ’ লোকদের মাঝে ইসলাম প্রচার করেন।

এর মধ্য দিয়ে আধুনিক সময়ে প্রথমবারের মতো গ্রন্থটি আলোর মুখ দেখে। এরপর মরক্কোর ইবনে জুহর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আবু মালিক মুহাম্মাদ ইবনুল হুসাইন বাকিশিশ দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে বিভিন্ন প্রাচীন পাণ্ডুলিপি ঘেঁটে আরবি মূলপাঠ উদ্ধারে সক্ষম হন, এরপর প্রয়োজনীয় টিকা-ভাষ্য যুক্ত করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক অনুষদ থেকে ১৯৯৪ সালে মুদ্রণের ব্যবস্থা করেন।

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news