'ও মন রমজানেরই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ, আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ।'দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর মুসলিম মিল্লাতের দ্বারে এলো শান্তি সুখের বার্তা নিয়ে ঈদুল ফিতর। রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস শেষে এলো শাওয়ালের মাস।
সন্ধ্যায় পশ্চিমাকাশে এক ফালি বাঁকা চাঁদের রেখা জানান দিল পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগমনী বার্তা।হিংসা বিদ্বেষ সব কিছু ভুলে হাসনা হেনা সুরভীত আনন্দের এ ঈদে ধনী-গরীব,আশরাফ-আতরাফ, উচু-নিচু সবাই ঈদের খুশি ভাগাভাগি করে একই কাতারে দাঁড়াবে।
বর্ণিল আনন্দে মেতে ওঠবে পুরো মুসলিম সম্প্রদায়। মুসাফা মুয়ানাকা ও কোলাকুলির মাধ্যমে একে অপরের প্রতি হিংসা-বিদ্ধেষ ভুলে গিয়ে এক সৌহাদ্যপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণের তালিম গ্রহণ করার প্রয়াস পাবে। সৌহাদ্য-সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হবে, একে অন্যকে হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা প্রকাশের মাধ্যমে।
বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে গত দুই বছর সম্মলিতভাবে মাঠে ঈদের জামাত আদায় করা যায় নি। ছিল সংবিধিবদ্ধ বিধিনিষেধ। এ বছর থাকছে না আর এ ধরনের নিষেধজ্ঞা। মনোমালিন্য ভেদাভেদ ভুলে পরস্পরের সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে কোলাকুলিও করবেন।মুসাফা-মুয়ানাকাসহ একে অন্যের সাথে কুশল বিনিময় করবেন।
ঈদের মাঠে যাওয়ার আগে সাবলম্ভী মুসলমানেরা গরীব মিসকিনদের মাঝে ফিতরা আদায় করে দিবেন। যাতে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা হয়। যার যার সামর্থ অনুযায়ী ঈদে নতুন পোষাক পরে ঈদগাহে যাবেন মুসলমানগণ। ঈদগাহে যাওয়ার আগে মুখ মিষ্টান্ন করা সুন্নাত। এজন্য প্রতিটি মুসলামানের ঘরে তৈরি হবে আজ সকালবেলা ফিরিনি পায়েস সেমাই।
সন্ধ্যায় সবাই আকাশের শাওয়াল মাসের প্রথম চাঁদ দেখার জন্য ঊৎসুখ ছিল।ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইসলামী ফাউন্ডেশনের চাঁদ দেখার ঘোষণা দেয়ার পর শিশু কিশোররা হৈ হুল্লরে মেতে ওঠে। আবহ তৈরি হয় নির্মল আনন্দের। খুশির জোয়ারে মেতে ওঠে পুরো মুসলিম সম্প্রদায়।
আনন্দ ভাগাভাগি করে সবাই দুই রাকাত ঈদের ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন।আদায়ের পর অনেক নিকাটাত্মীয়ের কবর জিয়ারত করে মহান আল্লাহ'র দরবারে গুনাহ মাফ চেয়ে দোয়া মুনাজাত করবেন। মুসলিম উম্মাহ'র শান্তি ও রহমত কামনা করে ও দোয়া মুনাজাত করা হবে। পরিবার পরিজন, মুসলিম মিল্লাত ও মুসলিম দেশসমূহের সুখ শান্তি কামনা করেও দোয়া করা হবে।
যারা এক মাস রোজা রেখে অভুক্ত থাকার কষ্টকে অনুভব করেছেন, ফরজ নামাজ, তারাবিহর সালাত ,কোরআন তেলাওয়াত তসবিহ তাহলিল পাঠ, দান সদকাহ ইবাদত-বন্দেগিসহ ইসলামের অনুশাসন পালন করেছেন, তাদের জন্য এই ঈদ আনন্দ উপভোগের, উচ্ছ্বাসের ও শান্তির। তাদের জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের এক মহাপুরস্কার হচ্ছে ঈদ।
ঈদুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর জন্য এক সার্বজনীন ধর্মীয় উৎসব তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ধনী-দরিদ্র, ছোট-বড়, শাসক-শাসিত ও আবালবৃদ্ধবণিতা সবার জন্য ঈদের আনন্দ যেন সমান ও ব্যাপক হয়, ইসলামে সেই ব্যবস্থা রয়েছে।
গত কয়েক দিন ধরে ঈদের আনন্দকে পূর্ণতা দিতে নারী পুরুষ , শিশু কিশোর, আবাল বদ্ধ বনিতা নতুন পোশাক পরিচ্ছদ ক্রয় করেছেন। এজন্য বাজারগুলোতে ছিল উপছে পড়া ভিড়। সাথে অনেকে কিনেছেন , জুতো তসবীহ আতর টুপি ইত্যাদি ।
পরিবারের সাথে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করতে কর্মজীবী ও পেশাজীবী মানুষ বাড়ি ফিরেছে। দেশের প্রধান কর্মস্থান রাজধানী শহর ফাকা হয়ে গেছে নাড়ীর টানে ঢাকা ছাড়ার কারণে। ঈদের আনন্দ পূর্ণতা দিতে পথে পথে ভোগান্তী উপেক্ষা করেও এসেছে তারা এসেছেন আপনজনের কাছে।ঈদ মানুষকে মানুষের কাছে টানে, সম্প্রীতির বন্ধন শেখায়, অটুট করে হৃদ্যতা। মানবিক পৃথিবী গড়ার শিক্ষা দেয়।
পত্রিকা একাত্তর /মোঃ নুর উল্লাহ আরিফ