বিদায়ের মাহে রমজান

অতিথি লেখক

২ মে, ২০২২, ১ year আগে

বিদায়ের মাহে রমজান

বিদায়১৪৪৩ হিজরির রমজানুল মোবারক। আমাদের কাছ থেকে চোখের পলকের মতো বিদায় নিয়েছে রহমত ও মাগফেরাতের ২০টি দিবস। আর পবিত্র মাহে রমজানের আগমনে মুমিনের হৃদয়ে যেমন আনন্দের বন্যা বয়ে যায়; তদ্রুপ রমজান বিদায়লগ্ন মুমিনদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে যায়। তাই সবাই বাঁধভাঙা চোখের পানি দিয়ে তাকে বিদায় জানায়।

আল বিদা ইয়া মাহে রমজান, ‘আল বিদা’ বিদায় হে মাহে রমজান, বিদায় তোমায়। আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নেয়ামত প্রাপ্তির উপর শোকর করা যেমনি সুন্নত, তেমনিভাবে আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামতের বিদায়ের উপর আফসোস করাও সুন্নত।

একজন আশেকে রাসূল মাহে রমজানুল মোবারকের বিদায়ের উপর আফসোস করে বলেছেন- ‘আফসোস তো রুখসোদ হুয়া, মাহে মোবারক আল বিদা, রোকে দিল মে ইউ কাঁহা, মাহে মোবারক আল বিদা’ সম্পূর্ন কোরআন পাকে ১২টি মাসের মধ্যে কেবল রমজান মাসের নামই জিকির করা হয়েছে, অন্য কোন মাস নয়।

যেমন- শাহরু রামাদ্বানাল্লাজী উনঝিলা ফিহিল কোরআন, (সূরা আল বাকারা)। আরবিতে বাকী যে ১১টি মাস রয়েছে তাতে শুধু নির্দিষ্ট তারিখে ইবাদত- বন্দেগী করা হয়। যেমন মহররমের ১০ তারিখে পবিত্র আশুরা, রজব মাসের ২৭ তারিখ পবিত্র মিরাজুন্নবী, শাবান মাসের ১৪ তারিখ শবে বরাত, যিলহ্জ্জা মাসের ৭,৮,৯,১০,১১ ও ১২ তারিখ ইত্যাদি।

কিন্তু মাহে রমজানে এধরণের কোন নির্দিষ্ট দিন-রাত বা মুহুর্ত নেই, বরং রমজানের চাঁদ উদিত হবার সাথে এবং রমজান মাস বিদায় হবার পূর্বক্ষন পর্যন্ত প্রতিটি মুহুর্তেই আল্লাহর ইবাদতে অতিবাহিত হয়। বিদায় শব্দটির সঙ্গে কষ্ট জড়িয়ে আছে। যে কোন বিদায় অনুভূতিতে নাড়া দেয়।

আর রমজান তো এসেছিল রহমত, মাগফিরাত এবং নাজাতের প্রাচুর্য নিয়ে। এ থেকে আমরা বঞ্চিত হবো, এরকম ভাবতেই কষ্ট হয়।রমজান আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে। মাত্র কয়েকটি দিন বাকি। আমরা কি পেরেছি রহমতের বৃষ্টিতে অবগাহন করতে, মাগফিরাতের সাগরে ভাসতে, আমরা কি পেয়েছি নাজাতের সুবাতাস।

রমজান তো তাকওয়া অর্জনের মাস অর্থাৎ খোদাভীতি লাভ। আমরা কি পেরেছি খোদাভীতি হতে। আল্লাহর ভয়ে সব রকম অন্যায়, অপকর্ম, লোভ ছাড়তে পেরেছি কি? তবে রমজান থেকে আমাদের অর্জন কি?রমজান তো সহনশীল ও সহমর্মিতার শিক্ষা দেয়।

এই শিক্ষা কি আমরা গ্রহণ করতে পেরেছি, না রমজান আসা-যাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলো।নিজেকে শুধরে নেয়ার সময় ছিল রমজান। আমরা কি আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে পেরেছি। অর্থাৎ লোভ-লালসা, গিবত, হিংসা, পরশ্রীকাতরতা, আত্ম-অহঙ্কার, মিথ্যা বলা, কার্পণ্য ইত্যাদি থেকে মুক্ত হতে পেরেছি।এই রমজানে কুরআন এসেছে আমাদের কল্যাণের জন্য। কুরআনকে কতটুকু ভালোবাসতে পেরেছি।

অর্থাৎ এ থেকে কতটুকু আমলে নিতে পেরেছি। মুক্তির মাধ্যম কিন্তু কুরআন। এর আলোকে নিজেকে আলোকিত করতে হবে।আল্লাহকে পাওয়ার আর একটি মাধ্যম হলো দান। দান হলো পূণ্যের কাজ। অন্য সময়ের চেয়ে রমজানে এক পূণ্যে ৭০ থেকে ৭০০ গুণ বেশি সওয়াব। এর থেকে আমরা কি লাভ করেছি। টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ, জ্ঞান-বুদ্ধি সবই তো আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া।

তার সন্তুষ্টির জন্য কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করলাম। আর মুসলিম উম্মাহ দীর্ঘ এগারোটি মাস পবিত্র মাহে রামাযানের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। হাটি হাটি পা পা মাহে রামাযানে বিদায়ের পথে। মুমিনের মনের গহীনের শব্দ বিহীন কান্না হচ্ছে। ঈমানদান রমাদ্বানের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করতে থাকে। হায়! রহমতের মাস থেকে কতটুকু ‘রহমত’ অর্জন করতে পারলাম? মাগফিরাতের মাস থেকে কতটুকু ‘মাগফিরাত’ আয়ত্ব করতে পারলাম? নাজাতের মাস থেকে কতটুকু ‘নাজাত’ লাভ করতে পারলাম? লাইলাতুল কদর থেকে কতটুকু ‘বরকত’ নিতে করতে পারলাম? এ এক বিয়োগ বেদনা।

এ এক চাপা কান্না।সাহাবীয়ে রাসূল হযরত কাব বিন উজরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, “একবার নবীজী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারের ১ম, ২য় ও ৩য় সিঁড়িতে পর পর পা রাখলেন ও ৩বার ‘আমিন’ বললেন। উপস্থিত সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমরা আজ এমন কিছু শুনলাম, যা এর আগে কোনো সময়ে শুনিনি।

তখন নবীজী বললেন, ফিরিস্তা জিবরাইল আমার কাছে আগমন করেছিলেন। যখন আমি ১ম সিঁড়িতে পা রাখলাম, তখন তিনি বললেন, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তির যে রমাদ্বান মাস পেল, তবুও তার গুনাহ মাফ হল না। তখন আমি আমিন বললাম। যখন ২য় সিঁড়িতে পা রাখলাম, তখন তিনি বললেন, ধ্বংস ওই ব্যক্তির জন্য যার সামনে আমি নবীর আপনার নাম উচ্চারণ করা হল, কিন্তু সে আপনার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করল না।

তখন আমি আমিন বললাম। আর যখন আমি ৩য় সিঁড়িতে পা রাখলাম, তখন তিনি বললেন, ধ্বংস ওই ব্যক্তির যে বৃদ্ধ পিতা-মাতা উভয়কে বা তাদের একজনকে হায়াতে পেল, অথচ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না। তখন আমি আমিন বললাম” (মুসতাদরাকে হাকেম)।হজরত আবু সাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি করিম (স.) বলেন, শয়তান বলেছিল, হে আমার প্রভু, তোমার সম্মানের শপথ।

আমি তোমার বান্দাদের বিপথগামী করতেই থাকব, যতক্ষণ তাদের রুহ শরীরে বিদ্যমান থাকে। তখন আল্লাহ বলেছিলেন, আমি আমার সম্মান, পরাক্রম ও উচ্চ মর্যাদার শপথ করে বলছি, আমি তাদের ক্ষমা করতেই থাকব, যতক্ষণ তারা আমার কাছে ক্ষমা চাইতে থাকবে। (আহমদ) আমরা মুসলমান। আর মুসলমানদের প্রতিটি সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা, দিবস, সপ্তাহ, মাস ও বছর কিভাবে অতিবাহিত হয়েছে সেই বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হবে।

তাই আমাদের দায়িত্বশীলতার সাথে সচেতন হয়ে সকল কাজ শরয়ী পদ্ধিতিতে সম্পাদন করতে হবে। আমাদের সকল কাজের পেছনে আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সন্তুষ্টি মূল উদ্দেশ্য থাকতে হবে। আসুন রমজানের যতটুকু সময় বাকি আছে এর প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাই। কল্যাণকামী হই এবং আল্লাহর কৃপা লাভ করি।

লেখক, প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।

ইমেইল, drmazed689@gmail.com

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news