চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সাইফকে ডেকে নিয়ে গুলি করে পঙ্গু করার অভিযোগে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় বায়েজিদ বোস্তামি থানার সাবেক ওসি মো. কামরুজ্জামানসহ সাতজনকে আসামি করা হয়েছে। ৪টা সেপ্টেম্বর রবিবার চট্টগ্রামের দ্বিতীয় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অলি উল্লাহর আদালতে মামলাটি দায়ের করেন ভোক্তভুগীর মা ছেনোয়ারা বেগম।
বায়েজিদ থানার সাবেক ওসি কামরুজ্জামান ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন, ওই থানারই এসআই মেহের অসীম দাশ, এসআই সাইফুল ইসলাম, এসআই কে এম নাজিবুল ইসলাম তানভীর, এসআই নুর নবী, এএসআই রবিউল হোসেন এবং পুলিশের সোর্স মো. শাহজাহান ওরফে সোর্স আকাশ।
মামলার বিষয়টি এই প্রতিনিধিকে নিশ্চিত করেছেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. জসিম। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ১৬ জুন ২০২১ সালেরাত সাড়ে ৯টার দিকে জরুরী কথা আছে বলে ছাত্রদল নেতা সাইফুলকে অক্সিজেন এলাকার হোটেল জামানে ডাকেন পুলিশের সোর্স আকাশ। সে সময় সাইফ পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ পতেঙ্গায় ছেনোয়ারা হোটেল অ্যান্ড বিরিয়ানী হাউজে যাওয়ার উদ্দেশে বাসা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়েছিলেন। আকাশের ফোন পেয়ে রাত ১০টার দিকে অক্সিজেন এলাকার হোটেল জামানে যান তিনি।
হোটেল জামানে পুলিশের সোর্স আকাশের সঙ্গে কথা বলার সময় ওসি কামরুজ্জামান, এসআই মেহের অসীম দাশ, সাইফুল, তানভীর, নুর নবী, এএসআই রবিউল ও অজ্ঞাত দুই পুলিশ সদস্য গিয়ে সাইফুলকে আটক করেন। এ সময় তার মোবাইল ও মোটরসাইকেলের চাবি ছিনিয়ে নিয়ে একটি সাদা রঙের প্রাইভেটকারে উঠিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ। কিছু দূর যাওয়ার পর ওসি অজ্ঞাত ব্যাক্তিকে ফোন করে বলেন, "সাইফুলকে গ্রেপ্তার করেছি, তাকে আজকেই ফিনিস করবো। তোমরা ইউনিফর্ম পরে জামান হোটেলে যাও এবং সেখানকার গত ২ ঘণ্টার সিসি ফুটেজ ডিলিট করে দাও এটা এডিসি স্যারের নির্দেশ"।
পরে শহরের বিভিন্ন স্থানে ২ ঘণ্টা ধরে ঘুরে রাত ১২টা থেকে ১টার মধ্যে বায়েজিদ লিংক রোড এলাকায় পৌঁছায় প্রাইভেটকারটি। সেখানে ওসি ও এসআই মেহের গাড়ি থেকে নেমে কিছু সময় কথা বলেন। এ সময় সোর্স আকাশ একটি থলে নিয়ে ওই জায়গায় আসেন। পরে এসআই মেহের গাড়িতে উঠে সাইফুলকে বলে, ‘উপর থেকে তোমাকে ক্রস ফায়ারের অর্ডার আছে। "তুমি ৫ লাখ টাকা দিলে তোমাকে আমরা ছেড়ে দেব"। এ সময় পরিবার এত টাকা দিতে পারবে না বলে জানায় সাইফুল।
তিনি তার অপরাধ কি জানতে চেয়ে আদালতে সোপর্দ করার অনুরোধ করেন পুলিশকে। এরপর আসামিরা তার মুখ বেঁধে গাড়ি থেকে নামায়। এ সময় এসআই মেহের, এসআই তানভীর ও এএসআই সাইফুল তাকে উপুড় করে মাটিতে চেপে ধরে। এরপর ওসি কামরুজ্জামান তার বাম পায়ের হাটুর উপর-নিচে এক রাউন্ড গুলি করেন। এস আই মেহেরও একই স্থানে এক রাউন্ড গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে সাইফুল জ্ঞান হারান। জ্ঞান ফিরে নিজেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আবিষ্কার করেন সাইফুল।
চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তার বাম পা হাটুর ওপর থেকে কেটে ফেলা হয়। ড্রেসিংয়ের পর অস্ত্র পাওয়া গেছে বলে অস্ত্র আইনে সাইফুলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এই বিষয়ে বাদীর আইনজীবী কাজী মফিজুর রহমান বলেন, ‘সোর্সের মাধ্যমে ডেকে নিয়ে তাকে গুলি করে পঙ্গু করে দিয়েছে আসামিরা। পরে আবার মিথ্যা অস্ত্র মামলা দিয়ে তাকে কারাগারেও পাঠানো হয়েছে।
এসব অভিযোগে ভুক্তভুগীর মা ছেনোয়ারা আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন।’ কাজী মফিজুর জানান, আদালত মামলাটি গ্রহণ করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। সাইফুলের মা ৫০ বছর বয়সী ছেনোয়ারা বলেন, ‘আমার ছেলে একজন পবিত্র কোরআনে হাফেজ ও ব্যবসায়ী। সে ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। এলাকায় বিভিন্ন অবৈধ কাজে বাঁধা দিতো।
এতে কিছু সন্ত্রাসী তার শত্রু হয়ে যায়। সাইফুল ছাত্রদলের রাজনীতি করে বলে তারা পুলিশকে দিয়ে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। কারণ তারা মনে করে যে, বিরোধীদলের লোক হিসেবে মেরে ফেললে কোনো জবাবদিহি করতে হবে না।’ ছেনোয়ারা জানান, এতদিন ওসি কামরুজ্জান ওই থানায় দায়িত্বে থাকায় ভয়ে মামলা করেননি। ঘটনার পর পরিবার মামলার প্রস্ততি নিলে ওসি পুলিশ পাঠিয়ে তার স্বজনদের জানান, মামলা করলে ভোক্তভুগীর আরেকটি পা কেটে নেয়া হবে।
তবে এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ওসি কামরুজ্জামান। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘একটা মামলা যেহেতু হয়েছে, আদালত বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তাই তদন্তাধীন এই বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
পত্রিকা একাত্তর /ইসমাইল ইমন