কিডনি রোগের লক্ষণ এবং প্রতিরোধ

লাইফস্টাইল ডেস্ক

লাইফস্টাইল ডেস্ক

১৪ এপ্রিল, ২০২২, ২ years আগে

কিডনি রোগের লক্ষণ এবং প্রতিরোধ
ফাইল ছবি | পত্রিকা একাত্তর

মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হলো কিডনি। এর মাধ্যমেই শরীরের সব ধরনের বর্জ্য পদার্থ বের হয়ে যায় মূত্রের মাধ্যমে। এ ছাড়াও শরীরের তরল ভারসাম্য রক্ষার কাজটিও করে কিডনি।

তবে পর্যাপ্ত পানি পান না করা, মূত্র চেপে রাখা ও ক্ষতিকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে কিডনি বিকল হয়ে পড়তে পারে। আর কিডনিতে কোনো সমস্যা হলে দ্রুত কেউই টের পান না।

ফলে রোগ অনেকটা ছড়িয়ে পড়তেই চিকিৎসকের কাছে যান রোগী। এরই মধ্যে কিডনিতে যেই ক্ষতি হয়েছে তা আর ফেরানো সম্ভব হয় না। তাই কিডনি সমস্যার কোনো লক্ষণই অগ্রাহ্য করা চলবে না।

কিডনি রোগের উপসর্গ ও লক্ষণ

প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি রোগের তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। ধীরে ধীরে কিডনির কার্যক্রম ক্ষমতা কমতে থাকলে লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে।

ক্ষুধামন্দা, শরীরে ওজন হ্রাস পাওয়া, শরীরের বিভিন্ন অংশে (হাত, পা, মুখ) পানি জমে ফুলে যাওয়া, প্রস্রাবের পরিমাণ হ্রাস পাওয়া বা প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, শরীরে ক্লান্তিভাব আসা, ঘুম কম হওয়া, অসুস্থ বোধ করা, শরীরের বিভিন্ন অংশে চুলকানি হওয়া, মাঝে মাঝেই মাথাব্যথা হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ ক্রনিক কিডনি ডিজিসের শেষ পর্যায়ে প্রকাশ পেতে শুরু করে।

কিডনি রোগের ঝুঁকির কারণ

ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনি রোগের পারিবারিক ইতিহাস, শরীরের অতিরিক্ত ওজন, ধূমপান, কিডনির জন্য ক্ষতিকর এমন ওষুধ সেবন, জন্মগত কিডনির সমস্যা, ৬০ বছরের ঊর্ধ্ব ব্যক্তি, প্রভৃতি কিডনি রোগের ঝুঁকির জন্য অন্যতম।

ঘুমের ব্যাঘাত

এটিও কিডনি সমস্যার একটি লক্ষণ হতে পারে। কিডনি যখন শরীর থেকে পানি নিঃসরণ করতে পারে না তখন কিছু পানি ফুসফুসে জমে যায়। সে কারণে ঘুমের সমস্যা হতে পারে।

"দাঁড়ানো অবস্থায় বুক ভরে শ্বাস নেয়া যায় কিন্তু দেখা যায় শোয়া অবস্থায় বুক পুরোপুরি প্রসারিত হতে পারে না। পানি জমলে সমস্যাটা বেশি হয়। ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বাসে সমস্যা হয় বলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।

দুর্বলতা এবং ক্লান্তি

ক্লান্ত বা দুর্বল বোধ করা সাধারণত লিভার সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ। কিডনির ব্যাধি গুরুতর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তি আরো বেশি দুর্বল এবং ক্লান্ত বোধ করতে শুরু করে।

এমনকি ঘরের কাজ করা বা হাঁটাহাঁটি করা তার জন্য কষ্টের মনে হতে পারে। রক্তে টক্সিন জমা হওয়ার কারণে এ সমস্যা হয়।

ক্ষুধামান্দ্য

শরীরে বিষাক্ত পদার্থ এবং বর্জ্য জমা হওয়ার ফলে ক্ষুধা কমে যেতে পারে, অবশেষে ওজন কমতে পারে। ক্ষুধা কম হওয়ার আরেকটি কারণ হতে পারে বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া। সব সময় পেট ভরা ভাব থাকবে আর খাওয়ার প্রতি কোনো আগ্রহ থাকবে না।

প্রসাবে পরিবর্তন

একজন স্বাভাবিক সুস্থ মানুষ দিনে ৬ থেকে ১০ বার প্রস্রাব করে। এর চেয়ে বেশি কিডনির ক্ষতির ইঙ্গিত হতে পারে। কিডনির সমস্যার ক্ষেত্রে, একজন ব্যক্তি হয় খুব কম বা খুব ঘন ঘন প্রসাব করতে থাকে।

দুটি অবস্থায় কিডনির ক্ষতি করে। কিডনি নষ্ট হতে শুরু করলে প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বের হয়ে যেতে শুরু করে।

কিডনি রোগ প্রতিরোধের উপায়

খুব খারাপ অবস্থায় চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা প্রতিরোধ করতে পারি। যেমন, আমাদের যে গোল্ডেন রুল রয়েছে সেগুলো মেনে চললে কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। যদি ডায়াবেটিস থাকে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেন।

যদি নেফ্রাইটিস থাকে সেটা পরীক্ষা করা, দর্শকদের জন্য নেফ্রাইটিস বিষয়টি বুঝিয়ে বলি, এটি হলো, দেহের দুটো কিডনি ছাকনি হিসেবে কাজ করে, এই ছাকনি দিয়ে আমরা ফিল্টার করি, অর্থাৎ রক্তটাকে পরিশোধিত করি, তখন রক্ত শুদ্ধ হয়ে যায়, সেই ছাকনিতে একটা রোগ হয়, সেই রোগে প্রোটিন বের হয়ে যায়।

মানে শরীর থেকে অ্যালবুমিন বের হয়ে যায় প্রস্রাবের মাধ্যমে, তখন রক্তে অ্যালবুমিন লেভেল কমে যায়। এ সময় শরীরের ভাস্কুলার অংশ থেকে পানি বেরিয়ে গিয়ে দুটো কোষের মাঝখানে চলে আসে, তখন শরীরে পানি আসে, এটি হলো নেফ্রাইটিস।

এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ দেখা যায়, যদি জন্মগত কিছু থাকে যেমন পলিসিস্টিক কিডনি। সিস্ট সম্বন্ধে একটু কথা বলা দরকার, আমি বলি সিস্ট একটি আঙ্গুর ফলের মতো। ভিতরে পানি, চারদিকে পর্দা। এটি দেহে একটি দুটি থাকতে পারে।

এগুলো যদি বহুল আকারে থাকে, যদি দুটো কিডনিতে ১০ টার বেশি করে থাকে তাহলে পলিসিস্টিক কিডনি হয়, যা জন্মগত রোগ। সেটা থেকে উচ্চ রক্তচাপ, প্রস্রাবে সংক্রমণ এসব হয়ে শেষ পর্যন্ত কিডনি ফেইলিউর বা অকার্যকর হবে। তাই এসব বিষয় নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত।

আমরা যারা ব্যথানাশক ওষুধ খাই সেগুলো ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর। যাদের কিডনি ভালো আছে তাদের জন্য তেমন না হলেও যাদের কিডনি একটু দুর্বল তাদের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news