পঞ্চগড়ের রাজনীতিতে নতুনদের দাপট


জেলা প্রতিনিধি, পঞ্চগড় প্রকাশের সময় : ০৭/১১/২০২২, ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ / ৮৮
পঞ্চগড়ের রাজনীতিতে নতুনদের দাপট

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নতুন সমীকরণে পঞ্চগড়ের রাজনীতি। এ সমীকরণে এগিয়ে রয়েছেন একঝাঁক তরুণ নেতা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে নতুন নেতৃত্বের আগমনে পুরনো রাজনীতিবিদরা একটু কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। ক্রমেই তরুণ ও যুবসমাজের মধ্যেও নতুন নেতৃত্ব জায়গা করে নিচ্ছে।

চায়ের টেবিল কিংবা অফিস আদালতের আলোচনায় নতুনরা এগিয়ে রয়েছেন। পঞ্চগড়ের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শফিকুল ইসলামও বললেন, নতুনদের সুযোগ দেওয়া উচিত। এটা এখন সময়ের দাবি। তরুণ ও যুবক সম্প্রদায় শিক্ষিত এবং মেধাসম্পন্ন রাজনীতিবিদ দেখতে চায়।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পঞ্চগড়-১ ও ২ আসনে নতুন মুখ রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। কম সময়ের মধ্যে তারা পরিচিতিও পেয়েছেন। নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী এই তরুণ নেতারা মাঠে-ঘাটে নানা আয়োজনের মাধ্যমে নিজেদের কথা তুলে ধরছেন। পঞ্চগড়-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা মজাহারুল হক প্রধান এমপি আগামী নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে লড়বেন।

তবে নতুনদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা নাঈমুজ্জামান মুক্তা ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট। মুক্তা এরই মধ্যে নিজেকে দলের প্রার্থী হিসেবে অলিগলি চষে বেড়াচ্ছেন।

জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) পরিচালিত এটুআই (এক্সেস টু ইনফরমেশন) প্রকল্পে তিনি জনপ্রেক্ষিত বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছেন। এই আসনে অবশ্য বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ও সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। বিএনপি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে তিনি রাষ্ট্রপতি হতে পারেন এমন আলোচনা দলের ভিতরে-বাইরে।

সেক্ষেত্রে এই আসনে ব্যারিস্টার নওশাদ জমিরই তার উত্তরসূরি। নেতা-কর্মীরাও নওশাদ জমিরকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন। তিনি বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আশীর্বাদপুষ্ট।

ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার কোনো কারণে নির্বাচনে অংশ না নিলে ছেলে এ আসন থেকে লড়বেন এমনটাই মনে করছেন বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা। এদিকে পঞ্চগড় পৌর মেয়র তৌহিদুল ইসলাম বিএনপির মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

আবার এই আসনে নির্বাচন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ২০-দলীয় জোটের শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপার সদ্য প্রয়াত সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের মেয়ে ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান। দুজনই তরুণ ব্যারিস্টার। তিনি জানিয়েছেন, বেগম খালেদা জিয়া তাকে পঞ্চগড়ে কাজ করতে বলেছেন।

নাইমুজ্জামান মুক্তার শাশুড়ি ফরিদা আখতার হীরা সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এটুআই প্রকল্পের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হওয়ায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে নাইমুজ্জামান মুক্তার বেশ সখ্য রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বেশ কিছু সফরে তিনি সফরসঙ্গী হয়েছেন।

এ ছাড়া দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গেও তিনি ছুটে চলেছেন নানা প্রান্তে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কর্মসূচিতেও অংশ নিচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থটি বিতরণ ও তা পাঠ পরবর্তী ‘লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে’ এবং ‘হামার স্বপনের পঞ্চগড় হামরা গরিমো’ শিরোনামের দুটি ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান আয়োজনে তিনি বেশ আলোচিত।

এ ছাড়াও জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে লড়বেন আবু সালেক। এদিকে আনোয়ার সাদাত সম্রাটের বাবা একসময় পঞ্চগড় আওয়ামী লীগের কাণ্ডারি ছিলেন। সম্রাট জেলা আওয়মী লীগের সবচেয়ে কম বয়সী সাধারণ সম্পাদক।

আওয়ামী লীগে ত্রিধারা বিদ্যমান থাকলেও তারও রয়েছে বিপুল সমর্থক গোষ্ঠী। প্রতিবেদককে তিনি জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনা তরুণদের হাতে দেশের ভবিষ্যৎ তুলে দিতে চান। তাই এই আসনে মনোনয়ন চাইব।’

পঞ্চগড়-২ (বোদা ও দেবীগঞ্জ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি লড়বেন। তবে দীর্ঘদিন ধরেই মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য প্রবীণ রাজনীতিবিদ মালেক চিশতী।

আওয়ামী রাজনীতিতে তার ব্যাপক অবদান থাকলেও বর্তমান সংসদ সদস্য তাকে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে কাজ করেছি। জেল জরিমানা ভয় পাইনি। তাই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আমি মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি। ’ এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগের সহ-সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ডা. মো. শাহজাহান।

এই আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মোজাহার হোসেনের মৃত্যুর পর দলের কাণ্ডারি হয়ে ওঠেন তরুণ নেতা বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন আজাদ। তিনি সাবেক যুব ও ছাত্রনেতাও। দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী হতে চান তিনি।

এলাকায় বিএনপির একক নেতা হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। গ্রামে গ্রামে উঠান বৈঠকসহ দলীয় নানা কর্মসূচি হচ্ছে তার হাত ধরেই। মাঠ পর্যায়ে তরুণ ও যুবকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠভাজন এই নেতা। প্রতিবেদককে ফরহাদ হোসেন আজাদ বলেন, ‘দলের দুঃসময়ে কাজ করেছি, এখনো করছি। এলাকার সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সমর্থন ও ভালোবাসা পাচ্ছি।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা সবাই আস্থাশীল। দল আমাকে এই আসনে মনোনয়ন দিলে ধানের শীষকে বিজয়ী করেই ঘরে ফিরব ইনশাআল্লাহ।

’আবার এই আসনে নির্বাচন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট সমাজ সেবক তরুন লেখক উদ্দোক্তা শিশির আসাদ। সম্প্রতি তিনি এলাকায় যুব সমাজকে নিয়ে ব্যপক কর্মসুচি পালন করছেন৷ এলাকার শিশির আসাদ বেশ আলোচিত একটি নাম।তিনি প্রতিবেদককে বলেন সুষ্ঠু ভোট হলে আমি জিতবো ইনশাআল্লাহ। ‘

পত্রিকা একাত্তর/ রিয়াদ হোসাইন