উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে গেছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে। লাল সবুজ কোচের বিলাসবহুল ট্রেন, নতুন গন্তব্য, নতুন স্টেশন- সব মিলে রেলের সেবার মান এক লাফে বেড়ে গেছে কয়েক গুণ।
উত্তরাঞ্চলের মানুষের জন্য রেল এখন বড় আশীর্বাদ। তাদের ভাষায়, বিএনপি সরকারের আমলে রেলের কোনো অগ্রগতি তো হয়ইনি, বরং দিন দিন ট্রেন, স্টেশন সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। অবহেলা অবজ্ঞায় ব্রিটিশ আমলের রেল ঝিমিয়ে পড়তে পড়তে একেবারে নিঃশেষ হতে চলেছিল।
সেই রেল যেনো হঠাৎ করেই প্রাণ ফিরে পেয়েছে। মাটির নীচে তলিয়ে যাওয়া রেললাইনগুলো আবার জেগেছে কংক্রিটের স্লিপারে। যার উপর দিয়ে এখন ট্রেন চলছে একশ’ কিলোমিটার গতিবেগে। দ্রুতগামী সেই ট্রেন দেখার জন্য এখন নতুন করে মানুষ ভিড় করে রেললাইনের পাশে। উত্তরের মানুষ এখন অনায়াসে নীলসাগর, একতা, দ্রুতযান, লালমণি, রংপুর এক্সপ্রেসে রাজধানীতে যাতায়াত করতে পারে।
রেল যোগাযোগ একেবারে সহজ হয়েছে উত্তরে চিলাহাটি থেকে দক্ষিণে খুলনা পর্যন্ত। ভারত থেকে যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন আসছে চিলাহাটি দিয়ে। পশ্চিমাঞ্চলের রেলের উন্নয়ন প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, শুধু উত্তরাঞ্চল নয়, সারা বাংলাদেশের মানুষ যাতে রেলের সেবা পায় সে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দেশব্যাপী রেলের যে আমূল পরিবর্তন হচ্ছে, ভবিষ্যতে আরও হবে-এ সবই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান।
২০১২ সালে পৃথকভাবে রেলপথ মন্ত্রণালয় গঠিত হওয়ার পর বর্তমান সরকার রেলকে গণমুখী করার উদ্যোগ নেয়। মাটির নিচে তলিয়ে যাওয়া রেললাইন আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়ে যায় কংক্রিটের স্লিপারের উপরে। ৫০ বছরের পুরনো লোকোমোটিভকে (ইঞ্জিন) ‘ঘানি’ টানা থেকে রেহাই দিতে কোরিয়া ও ভারত থেকে আনা হয় নতুন লোকোমোটিভ। ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা হয় বিলাসবহুল কোচ। অচল রেললাইন আধুনিকায়ন করা হয়।
সেই রেল লাইন দিয়ে এখন একশ’ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলে ট্রেন। কয়েক বছর আগেও উত্তরাঞ্চলের চিলাহাটির মানুষের যোগাযোগের প্রধান বাহন ছিল বাস। ট্রেন ছিল কর্মজীবী কিছু গরীব মানুষের বাহন। সমাজের উচ্চবিত্ত তো দূরে থাক মধ্যবিত্তরাও যে ট্রেনে ভ্রমণ করবেন সে পরিবেশ ছিল না। চিলাহাটির কুলি সর্দার তপু বলেন, ভ্রমণ করার মতো ট্রেন এই অঞ্চলে বহুদিন ধরেই ছিল না। লোকাল ট্রেন সকালে একটা বিকালে একটা চলতো। সেগুলোতে পরিবেশ বলে কিছু ছিল না। আবার ট্রেনের সময়েরও কোনো আগা-মাথা ছিল না।
পঞ্চগড় থেকে প্রতিদিন ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে লালসবুজের দ্রুতযান, একতা, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস। চিলাহাটি থেকে যাচ্ছে নীলসাগর। বর্তমান সরকার আমলে রেলওয়ের উন্নয়ন হচ্ছে, নতুন নতুন ট্রেন চালু হয়েছে, বন্ধ হয়ে যাওয়া স্টেশন চালু হয়েছে, রেললাইন সংস্কারসহ সিগনালিং ব্যবস্থাও আধুনিকায়ন করা হয়েছে। বর্তমানে চিলাহাটি স্টেশনে নতুন ভবন নির্মাণ ও রেল লাইন সংস্কার করায় বর্তমানে এ স্টেশন এক অনন্য রূপ পেয়েছে। স্টেশনের একেকটি ভবন একেক রঙে রাঙানো হয়েছে।
পুরো প্লাটফর্ম এখন চকচকে ও পরিষ্কার। স্থানীয় বাসিন্দা সাদাত হোসেন সাদা বলেন, আগে চিলাহাটি স্টেশনের পাশ দিয়ে যারা নাক চেপে ধরে হাঁটতেন, এখন তারাই কেউ কেউ বিকেলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখানে ঘুরতে আসেন। সন্ধ্যা হলেই জ্বলে ওঠে শতাধিক বৈদ্যুতিক বাল্ব। যেগুলোর আলোতে আলোকিত হয়ে ওঠে দেশের সর্বউত্তরের এই স্টেশনটি। চিলাহাটি স্টেশন মাস্টার নাজনীন পারভীন জানান, যাত্রী সেবার মান বাড়ানোর জন্য চিলাহাটি-সৈয়দপুর ৫৩ কিলোমিটার রেললাইন সংস্কারের কাজ শেষে চিলাহাটি নতুন রূপ পেয়েছে।
এক সময়ের ডেড স্টেশন চিলাহাটি স্টেশনে নতুন করে করা হয়েছে যাত্রীদের ওয়েটিং রুম, স্টেশন ভবন, ইলেক্ট্রিক সাব স্টেশন, রানিং রুম (ট্রেনের স্টাফদের থাকার ঘর), নিরাপত্তা ব্যারাক, টিএক্সআর অফিস, ইঞ্জিন সেড, পানির ট্যাঙ্কি ও পানি সরবরাহ, ওয়াশ পাইপ লাইন ও কানেকটিং লাইন। তৈরী হয়েছে আবাসিক কোয়ার্টার ও অত্যাধুনিক সিগনালিং ব্যবস্থা। চিলাহাটি থেকে হলদিবাড়ি পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের কাজ শেষ, চলছে যাত্রীবাহী মিতালি এক্সপ্রেস ও মালগাড়ী।
পত্রিকা একাত্তর/ সুমন
আপনার মতামত লিখুন :