আজ মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই দেশ বরেণ্য নেতা মৃত্যুবরণ করেন। তাকে টাংগাইল জেলার সদর উপজেলার উত্তর-পশ্চিমে সন্তোষ নামক স্থানে পীর শাহজামান দীঘির পাশে সমাধিস্থ করা হয়। সারা দেশ থেকে আগত হাজার হাজার মানুষ তার জানাযায় অংশগ্রহণ করে।
দিবসটি যথাযোগ্যভাবে পালনের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ উপলক্ষে টাঙ্গাইলের সন্তোষে মরহুমের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
১৮৮০ সালে সিরাজগঞ্জের ধানগড়া পল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হাজী শারাফত আলী ও মাতা বেগম শারাফত আলী। তার ডাক নাম ছিল চেগা মিয়া। একটি মেয়ে ও তিনটি ছেলে বেশ ছোট থাকা অবস্থায় হাজী শারাফত আলী মারা যান। কিছুদিন পর এক মহামারিতে বেগম শারাফত ও দুই ছেলে মারা যায়। বেঁচে থাকেন ছোট শিশু আব্দুল হামিদ খান।
মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী অধিকারবঞ্চিত অবহেলিত মেহনতি মানুষের অধিকার ও স্বার্থরক্ষায় আজীবন নিরবচ্ছিন্নভাবে সংগ্রাম করে গেছেন। জাতীয় সংকটে জনগণের পাশে থেকে মাওলানা ভাসানী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি দেশ ও জনগণের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে গেছেন। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সবসময় ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিতেন। ক্ষমতার কাছে থাকলেও ক্ষমতার মোহ তাকে কখনও আবিষ্ট করেনি। ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন নির্মোহ, অনাড়ম্বর ও অত্যন্ত সাদাসিধে। তার সাধারণ জীবনযাপন এ দেশ ও জনগণের প্রতি গভীর ভালোবাসার প্রতিফলন।
শোষণ ও বঞ্চনাহীন, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের জন্য মাওলানা ভাসানী আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার আদর্শিক ঐক্য ও রাজনৈতিক ঘনিষ্টতা ছিল। বাঙালি জাতিসত্ত্বা বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন মাওলানা।
রাজনীতির পাশাপাশি তিনি সমাজ সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। জয়পুরহাট-এর পাঁচবিবিতে মহিপুর হক্কুল এবাদ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন যার অধীনে একটি মেডিকেল, টেকনিক্যাল স্কুল,হাজী মুহসিন কলেজ(প্রস্তাবিত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় )প্রতিষ্ঠা করেন, পরে সেটি জাতীয়করণ করা হয়।বর্তমানে মহীপুর হাজী মহসীন সরকারি কলেজ নামে পরিচিত। কলেজটিতে উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ে কোর্স চালু আছে।
এছাড়া আসামে ৩০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি কারিগরী শিক্ষা কলেজ, শিশু কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন সন্তোষে। এছাড়াও তিনি কাগমারিতে মওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ, সন্তোষে “সন্তোষ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়” নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন- যা কিনা “মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়” নামে ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ২য় স্থান এ আছে।
পত্রিকা একাত্তর/ মাসুদ পারভেজ