patrika71
ঢাকাসোমবার , ৩ জুলাই ২০২৩
  1. অনুষ্ঠান
  2. অনুসন্ধানী
  3. অর্থনীতি
  4. আইন-আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. আবহাওয়া
  7. ইসলাম
  8. কবিতা
  9. কৃষি
  10. ক্যাম্পাস
  11. খেলাধুলা
  12. জবস
  13. জাতীয়
  14. ট্যুরিজম
  15. প্রজন্ম
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দিতে গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার কাউন্সিলর অনুসারি

জেলা প্রতিনিধি, চট্রগ্রাম
জুলাই ৩, ২০২৩ ১০:৫৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

চট্টগ্রামের আকবরশাহ থানাধীন উত্তর পাহাড়তলীতে হত্যাচেষ্টার মামলা তুলে নিতে হুমকি দিতে গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের এক অনুসারি। তার নাম মো. সুমন (৪০)।

গণধোলাইয়ের একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ঘটনাস্থলে খোঁজ নিয়ে এই তথ্য জানা গেছে। গণধোলাইয়ের শিকার সুমনের বিরুদ্ধে আকবরশাহ থানাসহ বিভিন্ন থানা ও আদালতে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। এরমধ্যে চুরি, ছিনতাই, হত্যাচেষ্টাসহ নানান সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে অসংখ্য। বিশেষ করে কাউন্সিলরের নাম ভাঙিয়ে ওয়ার্ডের ২ নম্বর ঝিল এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানান অভিযোগ এই সুমনের বিরুদ্ধে আছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সেখানে সরকারি পাহাড় কাটা, দখল, ফয়’স লেক ভরাট ও বিক্রি সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা হিসেবেও পরিচিত এই সুমন।

আকবরশাহ থানায় ২০২২ সালের ২৮ অক্টোবর মাসে দায়ের করা ২৬/১০ নম্বর মামলাসূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের অক্টোবরের ২৬ তারিখ বৃহস্পতিবার রাত ১১ টায় উত্তর পাহাড়তলীর ২নং ঝিলে ৩নং ঝিলের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে নয়ন (৩৫), ২নং ঝিলের মৃত ইসলাম মাঝির ছেলে সালাউদ্দিন সাল্লু (৩২), ২নং ঝিলে বসবাসকারী সরাইপাড়া এলাকার সাহেব মিয়া হাজী বাড়ির মৃত মীর আহমদের ছেলে মো. সুমন (৪০), তার ভাই আকবরশাহস্থ জি ব্লকের আব্দুল আউয়ালের বাড়ির বাসিন্দা মো. বেলাল হোসেন (৩৬), উত্তর কাট্টলী এলাকার মো. জহির (৪০) ২নং ঝিলের বাসিন্দা আব্দুল হাকিমের ছেলে নুরুল ইসলাম (৪২), লেকসিটি আবাসিক এলাকার মৃত মোজাম্মেল মুহুরির ছেলে আরজু জসিম প্রকাশ ছোট জসিম (৪৫), ২নং ঝিলের কামাল (৫২), ৩নং ঝিল এলাকার মৃত মানিক মিস্ত্রীর ছেলে দিদার (৩৪), পূর্ব ফিরোজশাহ’র মৃত একেএম আবিউল হকের ছেলে জাকির হোসেন (৫৫), ২নং ঝিলের মৃত হারুনের ছেলে ফারুক ((৩৫), ২নং ঝিলের নুরুল ইসলামের ছেলে ইমরান (৩৫), আকবরশাহধীন বিজয় নগর এলাকার খলিলুর রহমানের ছেলে ওসমান (২৯), ২নং ঝিলের নুর নবীর ছেলে রাসেল (২৭) সহ অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজন ২নং ঝিলের বাসিন্দা সিএনজি অটোরিকশা চালক বাবলুর উপর হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়ে এলোপাতারি ছুরিকাঘাত করে।

এসময় বাবলু চিৎকার করলে স্থানীয় ঘটনাস্থলে এগিয়ে আসেন। এসময় হামলাকারীরা সবাই পালিয়ে যায়। হামলাকারীদের ছুরিকাঘাতে বাবলুর পেটে কয়েকটি ছুড়ি বিদ্ধ হয়। এতে তার পেটের ভূড়ি বেড়িয়ে আসে। স্থানীয়রা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় আকবরশাহ থানায় মামলা হয় পরের দিন ২৮ অক্টোবর (মামলা নং ২৬/১০)। আলোচিত ঘটনার পর গুরুতর আহত বাবলুকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান চট্টগ্রাম-৭ আসনের (সীতাকু- উপজেলা-উত্তর কাট্টলী-উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড) সংসদ সদস্য দিদারুল আলম, আকবরশাহ থানা, উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আ’লীগের আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদকসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।

বাবলুর করা সেই হত্যা চেষ্টার মামলাটি তুলে নিতে স্থানীয় কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের অনুসারি উক্ত হামলাকারীরা নানানভাবে হুমকি-ধমকি, চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে গতকাল রবিবার (২ জুলাই) ১১ টার দিকে হত্যাচেষ্টা মামলার ৩নং আসামি মো. সুমন (৪০) সিএনজিচালক বাবলুর বাসার দিকে গিয়ে বাবলুকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিতে থাকে। তা না হলে তাকে নতুন নতুন মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি দিয়ে গালিগালাজও করতে থাকে। এসময় উপস্থিত স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে ধরে গণধোলাই দিয়ে ছেড়ে দেয়। গণধোলাইয়ের সেই ভিডিও স্থানীয় কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমসহ তার অনুসারিরা তাদের ফেসবুকে শেয়ার করে রাজনৈতিক সুবিধালাভের আশায় তার বিরোধীদের দমনে ভাইরাল করতে চেষ্টা করেন। তারা ফেসবুকে লেখেন- ৯নং উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওতাধীন ২নং ঝিলে হামলার ভিডিও ফুটেজ। বিভিন্ন অনিবন্ধিত অনলাইন পোর্টাল ও ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করা হয় চাঁদা না দেয়ায় যুবকের উপর হামলা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ২নং ঝিলের বাসিন্দারা জানান, এই সুমনের যন্ত্রণায় আমরা অতিষ্ঠ। যে লেকের পানি আমরা ব্যবহার করি সেই লেক দখল করে ভরাট করে দেয়াল তুলে প্লট বানিয়ে বিক্রি করে দেয় এই সুমন। ওয়ার্ড কাউন্সিলরের লোক পরিচয় দিয়ে এলাকায় চাঁদাবাজি, পাহাড় কাটা, ছিনতাই করে। গত বছর এলাকার বাবলুকে ছুড়ি মেরে ভূড়ি বের করে দিছিল সুমন। সেই ঘটনায় হওয়া মামলা তুলে নিতে রবিবার (গতকাল) সুমন বাবলুর ঘরের ওখানে গিয়ে হুমকি-ধমকি দিতে থাকে। নইলে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে গালিগালাজ করতে থাকে। তাকে চলে যেতে এবং গালিগালাজ ও হুমকি দিতে না করায় কথায় কথায় কমিশনারের (কাউন্সিলর) হুমকি দিয়ে গালিগালাজ করতে থাকে। এক পর্যায়ে বাবলুকে মারতে গেলে উপস্থিত কয়েকজন সুমনকে ধরে গণপিটুনী দেয়।

এ বিষয়ে জানতে স্থানীয় কাউন্সিলরের মোবাইল নম্বরে ফোন করলে সেটি বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
বক্তব্য জানতে আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়ালি উদ্দিন আকবরের মোবাইল নম্বরে ফোন করে সাড়া পাওয়া যায়নি।

গত বছর হামলার শিকার বাবলু জানান, অনেকদিন ধরেই এরা আমাকে মামলা তুলে নিতে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসতেছে। রবিবার সকালের দিকেও সরাসরি আমার বাসার ওদিকে এসে আমাকে গালিগালাজ, হুমকি-ধমকি দিয়ে মামলা তুলে নিতে বলে। এক পর্যায়ে আমাকে মারতে এলে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তাকে থামানোর চেষ্টা করে। না পেরে উত্তেজিত এলাকাবাসী তাকে মারধর করে। এদের কারণে এলাকার মানুষ অতিষ্ট। বাবলু বলেন, আমরা যে সাইট দিয়ে লেকের পানি ব্যবহার করতাম, সেখানে ভরাট করে ওয়াল তুলে সে প্লট করে বিক্রি করে দিছে। আমরা লেকের পানি ব্যবহার করতে পারতেছি না। অন্যভাবে কাউন্সিলরের লোকেদের কাছ থেকে পানি কিনে খেতে হয়। সেটা নিয়ে এলাকার মানুষ এমনিতেই তার উপর ক্ষ্যাপা ছিল।

তবে গণধোলাইয়ের শিকার মো. সুমনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ২নং ঝিলের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম (বাবলুর মামলার আসামি) জানান, ‘এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ মো. বাবলুর নেতৃত্বে সুমন, রিপন, কালাইয়া প্রকাশ মুন্না, সাগর, সোহেল, গিয়াস উদ্দিন ও তার সঙ্গীরা মিলে সুমনের উপর এ হামলা চালান’।

পত্রিকা একাত্তর/ ইসমাইল