জামালপুর সদরের নান্দিনায় অমুক্তিযোদ্ধার নামে ঘাট ইজারা দেয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন চার মুক্তিযোদ্ধা।
চলতি মাসের ১৮ তারিখ জামালপুরের বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজের ১ম আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলার বাদী হলেন- জামালপুর শহরের দেওয়ানপাড়া এলাকার মৃত মীর বক্সের সন্তান যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মুখলেছুর রহমান, বগাবাইদ এলাকার মৃত জমশেদ আলীর ছেলে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার জালাল উদ্দিন, পিঙ্গলহাটি এলাকার মৃত মকবুল হোসেনের ছেলে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ ও পাথালিয়া এলাকার মৃত সেকান্দর আলীর ছেলে মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম।
মামলার বিবাদীরা হলেন- জেলার সরিষবাড়ি থানার পোগলদিঘা ইউনিয়নের রুদ্রবয়ড়া গ্রামের মৃত বদর আলী সরকারের ছেলে এ,কে,এম ফজলুল হক, জামালপুরের জেলা প্রশাসক ও জামালপুর জেলা পরিষদের সচিব।
মামলার সুত্রে জানা যায়, জামালপুর সদর উপজেলার নান্দিনা, হামিদপুর, নুন্দেরচর, গোবিন্দবাড়ী ফেরী ও কুলঘাট ১৮লাখ ১৭হাজার ৫৬৬টাকায় ২০২৩/২৪ অর্থবৎসরের জন্য পরিচালনার জন্য গত ২০জুন জামালপুর জেলা গেজেটধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা সমবায় সমিতি লিঃ এর কথিত সভাপতি অমুক্তিযোদ্ধা এ,কে,এম ফজলুল হককে ইজারা দেয়া হয়। এ,কে,এম ফজলুল হক অমুক্তিযোদ্ধা হয়েও নিজেকে সর্বদাই ভারতে ট্রেনিং প্রাপ্ত একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বলে পরিচয় দেয় এবং সে জাল কাগজপত্র তৈরী করে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা প্রমান করার জন্য আপ্রান চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যান ট্রাস্টে ভারতে প্রশিক্ষন প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় ১৬৭২০ নাম্বারটি তিনি নিজের দাবি করলেও এই নাম্বারটি শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী থানার মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নাজিম উদ্দিনের।
এসব বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয় এবং জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল তদন্ত করে ২০০৩সালের ২২ডিসেম্বর তারিখে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের ৬৮নং সভায় এ,কে,এম ফজলুল হকের সনদ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেন। এরপরও এ,কে,এম ফজলুল হক নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেয়ার জন্য জাল কাগজপত্র তৈরী করেন এবং নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে পরিচয় দেন। এমন অবস্থায় গত ০৮ জুন বাদীরা জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে একজন অমুক্তিযোদ্ধার নামে দেয়া ঘাটের ইজারা বাতিলের অনুরোধ করলেও তাতে কাজ না হওয়ায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
এদিকে একজন অমুক্তিযোদ্ধার নামে ঘাট ইজারা হওয়ায় ক্ষোভ বিরাজ করছে জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে।
মামলার বাদী মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মুখলেছুর রহমান বলেন- “আমি আগে জানতাম না যে, ওই লোক মুক্তিযোদ্ধা না। পরে যখন মাঠ পর্যায়ের মুক্তিযোদ্ধারা আমাকে বিষয়টা অবগত করেন তখন আমি বাদী হয়ে মামলা দায়ের করি। অমুক্তিযোদ্ধা হয়ে সরকারি টাকা আত্মসাত করছেন তিনি। এরা আমাদের কলঙ্ক। আমরা চাই সরকার যাতে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহন করেন। একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যেনো ঘাট পায়।”
অভিযোগের বিষয়ে এ,কে,এম ফজলুল হক মোবাইল ফোনে বলেন- “একটি মামলা দায়ের করলে এসব মিথ্যা অভিযোগ করবেই। জেলা পরিষদ আমাকে যাচাই-বাছাই করেই ঘাট ইজারা দিয়েছেন। আমি ভারতে প্রশিক্ষন প্রাপ্ত একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার কাছে সব-কাগজপত্র আছে। এসব অভিযোগ সব মিথ্যা।”
এ বিষয়ে জামালপুর জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুন মুন জাহান লিজা মোবাইল ফোনে বলেন-জেলা পরিষদ থেকে কোন একটি ঘাট যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়া হয়ে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা জেলা প্রশাসকের কাছে ঘাটের জন্য আবেদন করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের দুটি সংগঠন থেকে দুটি আবেদন জমা পড়ে। জেলা প্রশাসক সমবায় অফিসকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। সমবায় অফিসের তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে ওই মুক্তিযোদ্ধাকে ঘাট দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা মুখলেছুর রহমান হিরু জেলা প্রশাসকের বরাবর ওই মুক্তিযোদ্ধাকে ঘাট দিলে কোন আপত্তি নেই মর্মে একটি অনাপত্তিপত্র জমা দেন। ওই ঘাট নিয়ে একটি মামলা হয়েছে আমি শুনেছি।
পত্রিকা একাত্তর/ নাহিদ