বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভা বর্জন করেছেন ৭ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ ও উন্নয়ন কর্মকান্ডে সরকারি বরাদ্দ যথাযথভাবে না পাওয়ার অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যানরা সভা বর্জন করেন। এ দিন রামপাল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল হক লিপন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মুসাম্মাৎ হোসনেয়ারা মিলিও মাসিক সমন্বয় সভায় অনুপস্থিত ছিলেন।
সভা বয়কট করা ওই জন প্রতিনিধিরা পরিস্থিতির উন্নতি ও তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনকে কোন প্রকার সহযোগীতা করা থেকে বিরত থাকবে বলে ঘোষনা দিয়েছেন।
৭ চেয়ারম্যান হলো রামপালের বাঁশতলী ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান, পেড়িখালীর মো. রফিকুল ইসলাম, উজলকুড়ের মুন্সি বোরহান উদ্দিন, ভোজপাতিয়ার তরফদার মাহফুজুল হক, গৌরম্ভার মো. রাজীব সরদার, রামপাল সদরের মো. নাসির উদ্দিন ও মল্লিকের বেড় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তালুকদার ছাবির আহম্মদ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রামপাল উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে নির্ধারিত সমন্বয় সভায় হাজির হয়ে ৭ জন চেয়ারম্যান তাদের অভিযোগ সম্বলিত একটি পত্র রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজিবুল আলমের মাধ্যমে বাগেরহাট জেলা প্রশাসক বরাবর প্রেরণ করেছেন।
ওই লিখিত অভিযোগে তারা দাবী করেন, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য স্থানীয় সরকারের গুরুত্ব অপরিসীম এবং ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সরকারের যাবতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থানীয়ভাবে বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। এরমধ্যে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য এডিবি ও রাজস্ব ফান্ডের কোটা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হিসাবে পেয়ে থাকি। যা দিয়ে ইউনিয়নের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা হয়। কিন্তু অতীব দু:খের বিষয় অত্র রামপাল উপজেলার ১০ জন ইউপি চেয়ারম্যানই আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত। তবে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেখ মোয়াজ্জেম হোসেন উপজেলা পরিষদ থেকে কোন উন্নয়ন বরাদ্দ আমাদেরকে দেয় না। যে কারণে আমাদের ইউনিয়নের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড ব্যহত হইতেছে ও সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হইতেছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন উন্নয়ন বরাদ্দের সুষম বণ্টন না করে তার ব্যক্তিগত পছন্দের অনির্বাচিত দলীয় লোকদের দিয়ে নিন্মমানের কাজ করে কমিশন বাণিজ্য করছেন। যা সর্বমহলে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। নিন্মমানের কাজ ও কমিশন বাণিজ্যটি মাঠপর্যায়ে তদন্ত করলে এর সত্যতা পাওয়া যাবে বলেও জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাঁশতলী ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখানে সবাই নৌকার চেয়ারম্যান। তবে আমরা নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ৭ জন চেয়ারম্যান কোন প্রকার বরাদ্দ পাইনি। বরং বৈষম্যমূলক আচারণের শিকার হয়েছি। এ বিষয়ে কোন সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত আমরা ৭ চেয়াম্যান ভবিষ্যতে সমন্বয় সভায় অংশগ্রহণ করবো না।
তবে অভিযোগ অস্বিকার করে রামপাল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পদক সেখ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সাত জন চেয়ারম্যান আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দিয়েছেন সেটি সঠিক নয়। বরাদ্দকৃত অর্থ ১০ ইউনিয়নে জনসংখ্যার অনুপাতে সঠিক হারে বণ্টন করা হয়। আমার সুনাম নষ্ট করার জন্য, ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য- এই মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ করা হচ্ছে। আমির এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিদাব জানাই।
এ বিষয়ে রামপালের ইউএনও নাজিবুল আলম মুঠোফোনে বলেন, জেলা প্রশাসক বরাবর ৭ জন চেয়ারম্যান আমার মাধ্যমে একটি দরখাস্ত দিয়েছেন। আমি এটি পাঠিয়ে দিয়েছি।
পত্রিকা একাত্তর/ শামীম হাসান