শাড়ি, একটি নারীর জন্য সবচেয়ে আভিজাত্যপূর্ণ ও সুন্দও পোশাক । মিশে আছে ৩ হাজার বছরের ইতিহাস । ‘শাড়ি’ শব্দটি উচ্চারণ মাত্রই বাঙালি রমণীর মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে । বাঙালি নারীর সবচেয়ে নান্দনিক পোশাক শাড়ি । বাঙালি নারীর জন্য শাড়ি মানেই হচ্ছে এক সৌন্দর্যের ব্যাকরণ। বাঙালি নারী মানেই শাড়ি । যে কোনো উৎসবে শাড়ি ছাড়া নারীর সাজগোজ যেন অপূর্ণই থেকে যায়। আবহমান কাল থেকে শাড়ি বাঙালি নারীর গৌরব আর অহংকার।
লেখক ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন ” শাড়ি যে ক্ষমতা আছে পৃথিবীর অন্য কোনো পোশাকের এই ক্ষমতা নেই। শাড়ি একটি মেয়ের পার্সোনালিটি বদলে দিতে পারে ”
যুগ পরিবর্তনের হাওয়াতে সবকিছু বদলে গেলেও বাঙালি নারীদের সৌন্দর্য প্রকাশের জায়গায় এখনও বাংলার শাড়ি দখল করে আছে অদ্বিতীয় মাত্রায় । জন্মের পর থেকে আমার চারপাশে যতো মমতাময়ী মুখ মা, দাদি, নানি, ফুপু, খালা সবার পরনেই রঙ বেরঙের শাড়ি দেখে আসছেন। ছোটবেলায় মায়ের শাড়ি পরেননি এমন মেয়ে কমই আছেন। বাঙালি নারী আর শাড়ি যেন একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ।উৎসব আয়োজনে শাড়ি থাকে নারীদের পছন্দের পোশাকের তালিকায় সবার প্রথমে। সেই পুরাকাল থেকে এখনও বজায় রেখেছে নিজের পরিচয়। জীববৈচিত্র্যের মতো লক্ষ্য করা যায় যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারলেই হারিয়ে যেতে হয় ইতিহাসের পাতায়। শাড়ি সেখানে ব্যতিক্রমী এক নাম। বাঙালি নারী দেহে এক অবিসংবাদী পরিধেয়। নারীর পরিধেয় বস্ত্র শাড়ির ইতিহাস কিন্তু আজকের নয়।
খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ৩ হাজার বছর বা তারও আগে থেকে রয়েছে শাড়ির উল্লেখ। শাড়ি শব্দের উৎপত্তি কোথায়? যেহেতু এই বস্ত্রের ইতিহাস অতি দীর্ঘ, তাই শব্দটির জন্মবৃত্তাস্তকে ঘিরে রয়েছে একাধিক মতবাদ। কেউ কেউ মনে করেন সংস্কৃত শব্দ ‘শাটী’ থেকে ‘শাড়ি’র উৎপত্তি হয়েছে। বহু ইতিহাসবিদ এই তত্ত্বকে মানতে নারাজ। তারা দাবি করেন, ‘শাটী’ নিজেই তো সংস্কৃতের মৌলিক সম্পদ নয়, তাহলে ‘শাড়ি’র উৎপত্তি-শব্দ হচ্ছে কেমন করে? আর্যরা ভারতবর্ষে আসার আগেই নাকি ‘শাটী’ শব্দটির অস্তিত্ব ছিল।
বিভিন্ন নারী মূর্তির পরনে শাড়ি জড়িয়ে রাখার চল ছিল বলে মনে করা হয়। আগে নারীরা এক টুকরো দীর্ঘ বস্ত্র সর্বাঙ্গে জড়িয়ে রাখতেন, সেটাই ছিল শাড়ি। ছিল না ব্লাউজ পেটিকোট । অবশ্য এখন শাড়ি বলতে আমরা যা বুঝে তার থেকে কিছুটা আলাদা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। তাও সমাজের নিম্ন আয়ের পরিবারেই ছিল এই পোশাকের প্রচলন। সমগ্র ভারত এবং পূর্ববঙ্গ জুড়ে চোখে পড়ে শাড়ির রকমফের। অ লভেদে যেমন পোশাকটির ধরণ বদলেছে, তেমনই পরার ধরনও। গ্রামবাংলার শাড়ি এবং মধ্য, দক্ষিণ ভারতে শাড়ি পরার ধরণ পৃথক পৃথক।
ব্রিটিশ মুক্ত ভারতে ১৯৪০ দশকের শেষের দিক থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত সময়টা ছিল হিন্দি চলচ্চিত্রের ‘সোনালি সময়’। এসব চলচ্চিত্রের নায়িকারা ছিল তখনকার ফ্যাশন আইকন। নার্গিস, মধুবালা এবং বৈজয়ন্তীমালার মতো নায়িকাদের পোশাক ভাবনা ভারত উপমহাদেশের নারীদেরকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করা শুরু করে।এই সময়ে শাড়ির আছে নানা রকমভেদ- শাড়ির ভিন্নতার যেন শেষ নেই! জামদানি, ঢাকাই বেনারসি, রাজশাহী সিল্ক, রেশমি শাড়ি, তসর সিল্ক, টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি কাতান, পাবনার শাড়ি আরোও কত কি। শিফন, ট্যিসু কাতান, জর্জেট এগুলো তো আছেই।তবে পুরাকালের মতো এখনও একটি ক্ষেত্রে মিল রয়ে গিয়েছে। প্রখম দর্শনে শাড়ি বলতে মনে হয় দীঘল কোনো বস্ত্র। যা সারা দেহের লজ্জা নিবারণে সমর্থ। সেকাল কাল থেকে শাড়ি বাঙালি নারীর সম্ভ্রম, অলঙ্কার আর অহংকার।
পত্রিকা একাত্তর/ সিয়াম সরকার
আপনার মতামত লিখুন :