কয়লা সংকটে ১৮ দিন ধরে বন্ধ রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র


জেলা প্রতিনিধি, বাগেরহাট প্রকাশের সময় : ১২/০৫/২০২৩, ৯:৫৫ অপরাহ্ণ /
কয়লা সংকটে ১৮ দিন ধরে বন্ধ রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র

বাগেরহাটের রামপালে কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। গত মাসের ২৩ তারিখ রাত থেকে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ উৎপাদন স্বাভাবিক হবে তাও নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেনা কর্তৃপক্ষ। গত চারমাসে তিন দফায় ৪৮ দিন বন্ধ থেকেছে কেন্দ্রটির উৎপাদন। ফলে এই দিনগুলোতে কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর উৎপাদনে যাওয়ার ২০-২২ দিন পরেই আমদানীকৃত কয়লার স্বাভাবিক মজুদ শেষ হয়ে যায়। ডলার সংকটে ঋণপত্র খুলতে না পারায় রিজার্ভ কয়লা দিয়ে আরো ৫ দিন উৎপাদন চালু রাখা হয়। পরে রিজার্ভ কয়লার মজুদ শেষ হয়ে গেলে ৪ জানুয়ারি সকালে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর মাত্র ২৭ দিনের মাথায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৬৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার প্রথম ইউনিটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কয়লা সরবরাহ স্বাভাবিক হলে এক মাসের মাথায় আবার উৎপাদনে ফেরে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। পরে ১৫ এপ্রিল রাত থেকে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আবারও বন্ধ হয় এই মেগা প্রকল্পের উৎপাদন। তিনদিন বন্ধ থাকার পরে ১৮ এপ্রিল সচল হলেও কয়লা সংকটে ২৩ এপ্রিল রাত থেকে ফের উতপাদন বন্ধ রয়েছে কেন্দ্রটির। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, ডলারের অভাবে ঋণপত্র খুলতে না পারার কারণেই বারবার সংকটে পড়ছে রামপাল।

এদিকে বার বার বন্ধ হওয়াতে শংকার সৃষ্টি হয়েছে আসন্ন জুনে চালু হওয়ার কথা থাকা দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদনও। অপরদিকে উৎপাদন বন্ধ থাকলেও এই সময়ে বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় হচ্ছে রক্ষনাবেক্ষন কাজে। কারণ চুক্তি অনুযায়ী, রামপালের বিদ্যুৎ পিডিবিকে কিনতে হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ থাকলেও পিডিবিকে কেন্দ্রের সক্ষমতা ব্যয় বা ক্যাপাসিটি চার্জ (কেন্দ্র ভাড়া) দিতে হবে।

কেন্দ্র সূত্রে আরো জানা যায়, নিয়মিত ৫৬০ থেকে ৫৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছিল রামপাল কেন্দ্র। উৎপাদিত বিদ্যুতের মধ্যে ৪৬০ মেগাওয়াট ঢাকার জাতীয় গ্রিডে এবং ২০০ মেগাওয়াট খুলনা-বাগেরহাটে সরবরাহ করা হচ্ছিল। নিয়মিত উৎপাদনের জন্য কেন্দ্রটিতে প্রায় পাঁচ হাজার মেট্রিকটন কয়লা লাগত। কয়লা আসত ইন্দোনেশিয়া থেকে। এছাড়া দ্বিতীয় ইউনিটের কাজও প্রায় শেষের দিকে। কিন্তু দ্বিতীয় ইউনিট চালু হলে তখন প্রতিদিন কয়লা প্রয়োজন হবে দশ হাজার টন। যেখানে প্রতিদিন ৫হাজার টনের যোগান দিতেই হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ সেখানে প্রতিদিন দশ হাজার টন কয়লা সরবরাহ সম্ভব হবে বলে মনে করছেন স্বয়ং কেন্দ্র সংশ্লিষ্টরাই।

এদিকে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হওয়ার প্রভাব পড়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহে। ফলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ওজোপাডিকোর মোংলা অঞ্চলের আবাসিক প্রকৌশলী এইচ এম ফরহাদ হোসেন বলেন, উৎপাদনে আসার পর থেকে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে খুলনাসহ এই অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরাবরাহ করা হত। কিন্তু ঈদের পর থেকে হঠাৎ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকায় লোডশেডিং এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাট বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, জেলায় পিক আওয়ারে ৯৪ মেগাওয়াট চাহিদা থাকলেও বরাদ্দ থাকছে ৫৫ থেকে ৬০ মেগাওয়াট। অপরদিকে অফপিকে ৮০ থেকে ৮২ মেগাওয়াট চাহিদা থাকলেও বরাদ্দ আসছে ৪৫ থেকে ৫০ মেগাওয়াট।

বাগেরহাট পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মুহাম্মদ নুরুল হোসাইন বলেন, চাহিদার সংকুলান না হওয়ায় জাতীয় গ্রিড থেকে মাঝে মধ্যে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছি আমরা।

বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া পার্টনারশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) উপমহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম বলেন, কয়লা সংকটের কারণে ২৩ এপ্রিল রাত থেকে কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তবে ইতিমধ্যে ৫৫হাজার টন কয়লা বোঝাই একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে। ২ দিনের মধ্যে আনলোডিং প্রক্রিয়া শু। এরপর যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে।

পত্রিকা একাত্তর/  আবু তালেব