নড়াইল সদর উপজেলার মাইজপাড়া ইউনিয়নের বলরামপুর অবস্থিত ইসলামপুর কওমী মাদরাসা ও হেফজখানার এক ছাত্রীকে (১১) শ্লীলতাহানির অভিযোগে শিক্ষক মাওলানা কামরুজ্জামানকে (৫৩) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রোববার (৭ মে) সকালে নড়াইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপাঃ) তারেক আল মেহেদী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে, শনিবার (৬ মে) ওই শিক্ষকের নাম উল্লেখ করে সদর থানার মামলা করে ওই ছাত্রীর মা। গত শুক্রবার বিকেলে এমন অভিযোগে ওই শিক্ষককে গ্রেফতার করে সদর থানা পুলিশ। গ্রেফতার কামরুজ্জামান যশোর জেলার কোতয়ালী থানার জঙ্গল বাধাল গ্রামের মোঃ কওছার মোল্যার ছেলে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, আড়াই বছর আগে ওই ছাত্রীকে তার পরিবার নড়াইল সদর উপজেলার বলরামপুর ইসলামপুর হাফেজিয়া নূরানী মাদরাসায় হিফজ বিভাগে ভর্তি করেন। মোঃ কামরুজ্জামান ওই মাদরাসার শিক্ষক। গত ৫ দিন আগে কামরুজ্জামান ওই ছাত্রীকে বলে, রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে বারান্দার লাইট বন্ধ করে টিউবওয়েলে আসিস। কিন্তু ওই ছাত্রী সেদিন কথা শোনেনি।
এরপর গত ২ মে রাতে রাতের খাবার শেষে মাদরাসার টিউবওয়েল থেকে তার থালাবাটি পরিষ্কারে করে রুমের মধ্য যাওয়ার সময় তাকে আবার বলে রাতের বেলায় আমি লাইট মারব, তুই রুম থেকে বাইরে চলে আসবি, ঘুমাবি না যেন। তখন সে তার কথায় কোনো উত্তর না দিয়ে রুমের মধ্যে চলে আসে এবং তার সহপাঠীকে শিক্ষকের কু-প্রস্তাবের বিষয়টি জানায়। ওইদিন রাত ১১টার দিকে ওই শিক্ষক মাদরাসার দক্ষিণে ঘরের রুমের সামনে এসে লাইট মারতে থাকে।
এ সময়ে লাইট মারা দেখে ভুক্তভোগী ও তার সহপাঠীদের ঘুম ভেঙে গেলে তারা ঘরের বাইরে এসে ওই শিক্ষককে দেখতে পায়।এরপর ঘটনার দিন (৩ মে) রাত সাড়ে ১২টার দিকে পুনরায় ভুক্তভোগীর রুমের সামনে এসে দরজার তল দিয়ে লাইট মারলে তার ঘুম ভেঙে যায়। পরে ওই শিক্ষক কয়েকবার লাইট মেরে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থেকে লাইট বন্ধ করে দিলে ওই ছাত্রী দরজা খুলে রুমের বাইরে দেখতে যায় কেউ আছে নাকি।
এসময়ে তাকে একা পেয়ে তাকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে মাদরাসার পশ্চিম পাশের ঘরের পেছনের বারান্দায় গোসলের জায়গায় নিয়ে যায়। পরে ওই শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান ওই ছাত্রীকে বলে এক মাদরাসার ছাত্রের সাথে তোর সম্পর্ক আছে, সে তোর গায়ে হাত দিছে, এই সব বিষয় আমি সবাইকে বলে দিব। এই ধরনের ভয় দেখিয়ে ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করে। এই সব ঘটনার বিষয়ে কাউকে কিছু বললে ওই ছাত্রীকে মাদরাসা থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন ওই শিক্ষক। পরে ওই ছাত্রী তার পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি জানায়।
পরে এ ঘটনা জানাজানি হলে শুক্রবার বিকেলে খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ ওই শিক্ষককে গ্রেফতার করে। এ বিষয়ে নড়াইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপা) তারেক আল মেহেদী বলেন, মাদরাসার ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় সদর থানায় মামলা করেছেন ওই শিক্ষার্থীর মা। আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে নড়াইল সদরের বলরামপুর হাফেজিয়া মাদরাসার প্রধান হাফেজ কামরুজ্জামানের (৫২) বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহারসহ মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মাদরাসার শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং এলাকাবাসীর আয়োজনে রোববার (৭ মে) বিকেলে মাদরাসা চত্বরে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় বক্তব্য দেন-বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, মাদরাসার সভাপতি ৫ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার টিংকা বিশ্বাস, প্রভাষক মামুনুর রশিদ, বোড়ামারা অটিজম ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন, যুবলীগ নেতা মাহমুদুল হাসান আজবাহার, কামরুজ্জামান, বাবলু বিশ্বাস, লতিফ মোল্যা, সুমাইয়া ইয়াসমিন, সাবিনা খানম, ময়না খাতুনসহ অনেকে। বক্তারা বলেন, ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসাটিতে ২০০০ সালে হেফজ বিভাগ চালু হয়। হাফেজ কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে হেফজ বিভাগ চালুর পর এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। মাদরানাটিতে বর্তমানে ১১০ ছাত্রছাত্রী অধ্যায়নরত। কামরুজ্জামানের জনপ্রিয়তায় একটি কূচক্রীমহল তার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে।
এরই ধারাবাহিতকায় গত ৫ মে হাফেজ কামরুজ্জামানের নামে ১০ বছরের এক শিশুর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় তাকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। ষড়যন্ত্রমূলক এ মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারসহ তার মুক্তির দাবি করছি।
পত্রিকা একাত্তর/ হাফিজুল নিলু
আপনার মতামত লিখুন :