পদত্যাগের পরেও বহাল তবিয়তে সভাপতি: জেলার সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ


নিজস্ব প্রতিনিধি প্রকাশের সময় : ১৭/০৪/২০২৩, ১:০২ পূর্বাহ্ণ /
পদত্যাগের পরেও বহাল তবিয়তে সভাপতি: জেলার সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ

নীলফামারীর ডোমারে একই ব্যক্তির দুই সংগঠনের দায়িত্বে থাকা নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজনীতির মাঠ। উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদ নিয়ে রীতিমতো পদত্যাগ পদত্যাগ খেলায় সংগঠনের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা পড়ছেন বিপাকে। বর্তমানে বিষয়টি ডোমারের ‘টক অব দ্য টাউন’-এ পরিণত হয়েছে।

গত বছরের ৩১শে জুলাই নীলফামারীর ডোমার উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী হয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল মালেক সরকার। সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত না হলেও, ১৮ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।

আওয়ামী লীগের সম্মেলনের একদিন আগে অর্থাৎ ৩০শে জুলাই তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের নীলফামারী জেলা শাখার সভাপতি বরাবর ডোমার উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি প্রসঙ্গে করা আবেদন গৃহীত করেন জেলা শাখার সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামান কামরুল। তবুও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হিসেবে ডোমার উপজেলায় স্বপদে বহাল তবিয়তে কাজ করে যাচ্ছেন মোঃ আব্দুল মালেক সরকার।

তবে, গত কিছুদিন আগে নীলফামারী জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামান কামরুল ও সাধারণ সম্পাদক দীপক চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ডোমার উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোঃ আব্দুল মালেক সরকারকে অব্যাহতি প্রদান করে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ জাবেদুল ইসলাম সানবীমকে দায়িত্ব প্রদান করেন।

এমনকি সেই বিজ্ঞপ্তিতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ সম্পাদক মোঃ রফিকুল ইসলাম আবুল স্বাক্ষর প্রদান করে লিখেন, ‘একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দায়িত্ব হস্তান্তরের অনুরোধ করছি’।

সবকিছুকে ধোয়াশায় রেখে, গত ১৫ই এপ্রিল ডোমার ডাকবাংলোতে অনুষ্ঠিত স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য সংগ্রহ, নবায়ন ও ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে পুনরায় সভাপতিত্ব করেন পদত্যাগ করা মোঃ আব্দুল মালেক সরকার। আর এ নিয়েই চারিদিকে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। জেলা শাখার প্রেরিত চিঠিতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া জাবেদুল ইসলাম সানবীমকে ঘিরে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের কূটকৌশল বিরাজমান হতে দেখা গিয়েছে।

এবিষয়ে ডোমার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল মালেক সরকার বিষয়টি এড়িয়ে যান। পরে, কয়েকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও, তিনি ফোন ধরেননি।

অন্যদিকে, ডোমার উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাবেদুল ইসলাম সানবীম জানান, মালেক ভাই নয় মাস আগে সভাপতির পদ হতে পদত্যাগ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক হিসাবে যোগদান করেছে। জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমাকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব দিলে আমি সেই দায়িত্ব পালন করছি। এখন তিনি পুনরায় সভাপতির পদ ফেরত চেয়ে দলে বিশৃংখলা সৃষ্টি করছেন।

জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক চক্রবর্তী জানান, আব্দুল মালেক সরকার পদত্যাগ করায় সহ-সভাপতি জাবেদুল ইসলাম সানবিমকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে মালেক সরকার সম্মানজনক একটি বিদায় চাওয়ায় গত ১৫ এপ্রিল উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন অনুষ্ঠানটি তার সভাপতিত্বে করা হয়েছে। বর্তমানে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সানবিম ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, এ সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় কমিটি আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন।

এব্যাপারে, ডোমার উপজেলার আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ নেতা-কর্মীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, সাধারণ কর্মীরা ব্যাপক দ্বিধাদ্বন্দের মাঝে রয়েছে। জেলা শাখার সভাপতি ও সম্পাদকের স্বাক্ষরিত নোটিশে জাবেদুল ইসলাম সানবীমকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়ার পরেও, সাবেক সভাপতি মোঃ আব্দুল মালেক সরকার কিভাবে দায়িত্ব পালন করেন – এটি চিন্তার বিষয়। এমন দ্বন্দ্ব চলতে থাকলে অচিরেই তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বিপাকে পড়বেন। আগামীতে যা সংগঠনের জন্য ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ ও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন তারা।