চেয়ারম্যানের বিচক্ষণতায় পাচার হওয়া সরকারি সার ও ধানের বীজ উদ্ধার


নিজস্ব প্রতিনিধি প্রকাশের সময় : ০৭/০৪/২০২৩, ৯:৫৪ অপরাহ্ণ /
চেয়ারম্যানের বিচক্ষণতায় পাচার হওয়া সরকারি সার ও ধানের বীজ উদ্ধার

‘এই ধানবীজ ও সার সবাই (ব্যাবসায়ীরা) এভাবেই কৃষি অফিস থেকে নিয়ে যায়। এর ভাগ পায় কতিপয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও নাম সর্বস্ব সাংবাদিকরাও। কিন্তু একটি মহলের স্বার্থের আঘাত ঘটায় চক্রান্ত করে আমার ধান বীজগুলো আটক করেছে। কিন্ত আমিও দেখে নিব তাদেরকে।

উদ্ধার করা ১৬৭ বস্তা (১০ কেজির বস্তা) উফসি জাতের ধান, এক বস্তা পাটবীজ (কেজির পরিমান তাৎক্ষনিক জানা যায়নি) ও ১২ বস্তা (৫০ কেজির বস্তা) টিএসপি ও এমওপি সরকারি সার উদ্ধার করা হয়। ধান ও পাটবীজের গায়ে লেখা ছিল বিক্রয়ের জন্য নহে। উপজেলা পরিষদ চত্বরে ধানবীজ আটকের পর ব্যাবসায়ী আলমগীর হোসেন উপস্থিত সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় কৃষি অফিস থেকে পাচার হওয়া বিপুল পরিমাণে কৃষি প্রণোদনার ধানবীজ ও রাসায়নিক সার উদ্ধার করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার গুদাম থেকে দুটি ভ্যানযোগে বিক্রির উদ্দেশ্যে এসব সার ও বীজ নিয়ে যাওয়ার সময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাতেনাতে আটক করেন। পরে আটককৃত ভ্যানচালকদের দেয়া তথ্যমতে ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে গঙ্গাচড়া সদর ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া গ্রামে আলমগীর হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে খড় দিয়ে ঢেকে রাখা আরও ১৫৩ বস্তা ধানবীজ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, আলমগীর হোসেন ওই ধান ও পাটবীজ খড় দিয়ে ঢেকে রেখেছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, গঙ্গাচড়া কৃষি অফিসের ধান, গম, ভুট্টা, সরিষার বীজসহ রাসায়নিক সার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মারুফা ইফতেখার সিদ্দিকার যোগসাজশে কিছু উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নামমাত্র কৃষকদের প্রণোদনা দিয়ে এসব সার ও বীজ দিয়ে পরিমাণের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিক্রি করেন। কৃষি অধিদপ্তরের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান ওই দুই ভ্যানে সার ও ধান বীজ তুলে দিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের সঙ্গে ৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাত ১০ টার দিকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মারুফা ইফতেখার সিদ্দিকার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বলেন, ‘আমি দুপুরে উপজেলা পরিষদের সামনে দিয়ে হাঁটছিলাম। এ সময় দুটি ভ্যানে ১২ বস্তা সার ও ১৪ বস্তা ধানবীজ নিয়ে যাওয়ার সময় আমার সন্দেহ হয়। পরে তাঁদেরকে আটক করে ইউএনওর কার্যালয়ে নিয়ে যাই। ভ্যানচালকেরা এক ব্যাবসায়ীর নাম বলেন। পরে ওই ব্যাবসায়ীর বাড়ি থেকে পুলিশ বিপুল পরিমাণ ধানবীজ ও সার উদ্ধার করে।’

পরে সন্ধ্যায় গঙ্গাচড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মমতাজুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ আলমগীরের গঙ্গাচড়া সদর ইউনিয়নের মুন্সিপাড়ার বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় তাঁর একটি ঘর থেকে খড় দিয়ে ঢেকে রাখা অবস্থায় ১৫৩ বস্তা উফশী জাতের ধানবীজ ও এক বস্তা পাটবীজ উদ্ধার করেন। তবে অভিযানের খবরে আলম মিয়াসহ বাড়ির লোকজন পালিয়ে যান।

রাত সাড়ে ১০টায় বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ তামান্না। তিনি বলেন, ‘ওই ঘটনায় ভ্যান চালক শরিফুল ইসলাম ও মিঠু মিয়াকে সাক্ষী করে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। ধানবীজ কীভাবে ব্যাবসায়ীর বাড়িতে গেল তা নিয়েও তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। অভিযোগ ওঠা ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন পলাতক থাকায় তাঁকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

পত্রিকা একাত্তর/ সানজিম মিয়া