২০০৮ সালে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মেধাবী তরুণ আমিনুল ইসলাম এবং তার কিছু বন্ধুদের সমন্বয়ে গঠিত হয় “গ্লোবাল কমিউনিটি অর্গানাইজেশন”।
এটি একটি অরাজনৈতিক ও অসাম্প্রদায়িক এবং অলাভজনক, স্বেচ্ছাসেবামূলক সামাজিক সংগঠন। শুরুতে গ্লোবাল কমিউনিটি অর্গানাইজেশন চলছিল আমিনুল ইসলাম এবং তার বন্ধুদের পকেটের টাকা দিয়ে। পরবর্তীতে কিছু শুভাকাঙ্ক্ষীর সহযোগিতায় সামনে এগিয়ে যেতে থাকে এই সংগঠনটি।
“গ্লোবাল কমিউনিটি অর্গানাইজেশন” সর্বদা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে একই সাথে মানুষ এবং পরিবেশের জন্য কাজ করতে। আর এই ব্রতকে সামনে রেখে দুটি প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি। তার একটি হল “একটি শিশু একটি গাছ” এবং অন্যটি “অবলম্বন” একটি শিশু একটি গাছ। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ২০১৪ সালে সরকারীভাবে স্বীকৃতি লাভ করে গ্লোবাল কমিউনিটি অর্গানাইজেশন।
অসামান্য লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে ঘিরে ২০১৮ সালের নতুন এক দিগন্তের সূচনা হয় “একটি শিশু একটি গাছ – শিশুর জন্য সবুজ পৃথিবী” শিরোনামে। শিশুর জন্য বাসযোগ্য, নিরাপদ, সুরক্ষিত সমাজ গঠনের মধ্য দিয়ে সবজু পৃথিবী গড়ে তোলা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করা। প্রতিটি ভুমিষ্ঠ শিশুকে একটি করে গাছ উপহার নিশ্চিত করা। প্রতিটি নবজাতক শিশুর তথ্য সংগ্রহ করা। উপকারভোগী শিশুদের মধ্যে বাছাইকৃত সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের প্রয়োজন ও চাহিদার ভিত্তিতে সেবা প্রদান করা। গাছ রোপণে উদ্বুদ্ধ ও গাছ সংরক্ষণে সচেতনতা সৃষ্টির মধ্য দিয়ে প্রতক্ষ্যভাবে সামাজিক বনায়নে সম্পৃক্ত করে কার্যক্রমটি সম্প্রসারণ করা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করা। পরিবেশের ভারসম্য রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সহায়ক ভূমিকা রাখার মধ্য দিয়ে সবজু পৃথিবী গড়ে তোলা।
“একটি শিশু একটি গাছ” কার্যক্রমটি রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার নারায়ণপুরে বৃহষ্পতিবার ২৩ আগস্ট ২০১৮ ইং সনে আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করে। বর্তমান রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, কুমিল্লা এবং সিরাজগঞ্জ জেলায় মোট ৩৩টি ইউনিটে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
একই সাথে দেশের গন্ডী পেরিয়ে সমগ্র বিশ্বব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনার জন্যেও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। “একটি শিশু একটি গাছ” শীর্ষক কার্যক্রমটি আগামী ২০৩৩ সাল নাগাদ সমগ্র বাংলাদেশ এবং ২০৫০ সাল নাগাদ সমগ্র বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০৬০ সালের মধ্যে প্রতিটি মানুষের বিপরীতে একটি করে গাছ রোপণ নিশ্চিত করা হবে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন ইউনিটে ৪০০ ভলেন্টিয়ারের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ৩০ হাজরের ও বেশি গাছ রোপণ করেছে প্রকল্পটি।
অবলম্বন : গ্লোবাল কমিউনিটি অর্গানাইজেশন এর যুগান্তকারী আরো একটি পদক্ষেপ হচ্ছে “অবলম্বন”। নবজাতক শিশুকে গাছ প্রদান করার সময় শিশু এবং শিশুর পরিবারের যে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়, নাম, ঠিকানা, স্বাস্থ্য গত তথ্য, পারিবারিক আয়, গর্ভবতী অবস্থায় কোন সমস্যা হয়েছে কিনা, শিশুটি প্রতিবন্ধী কিনা ইত্যাদি তথ্য যেটার উপর ভিত্তি করে “অবলম্বন” কার্যক্রমটি পরিচালনা করছে। পাইলট প্রক্রিয়া হিসেবে হরিণা ত্যাগী ইউনিট এরিয়ায় ১০ জন শিশুকে নিয়ে শুরু হয়েছে কার্যক্রমটি। শিশু এবং মাতার পুষ্টিকর খাদ্যের তদারকী, শিশুর বিকাশে সহযোগিতা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, উন্নত জীবন ব্যবস্থা ও সুন্দর আগামীর জন্য স্থায়ী সমস্যা সমাধানের লক্ষে একটি আত্নকর্মসংস্থানমূলক ও স্বাবলম্বীকরণ প্রকল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে “অবলম্বন” প্রকল্প।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠাতা আমিনুল ইসলাম জানান, সুস্থ্য, মানসম্মত, উন্নত জীবন ব্যবস্থা এবং টেকশই পরিবেশ বিনির্মানই একমাত্র লক্ষ্য। অস্বচ্ছল পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বীকরণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুস্থ্য, মানসম্মত এবং উন্নত জীবন ব্যবস্থার জন্য নিউট্রিশন সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।অসাম্প্রদায়িক, অরাজনৈতিক সামাজিক সম্পৃতি গঠনের মাধ্যমে বিশ্ব সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা। সামাজিক ও মানবিক কল্যাণে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সংগঠনকে একত্রিত করণ এবং কাজকে তরান্বিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা গ্লোবাল কমিউনিটি অর্গানাইজেশনের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। আমাদের এই কার্যক্রমকে সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত “ত্যাগী ভলান্টিয়ার” তিনি আরো বলেন, যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে চলেছে তাদের সহযোগীতা পেলে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে যাবে আমাদের কার্যক্রম।
পত্রিকা একাত্তর/ রবিউল ইসলাম
আপনার মতামত লিখুন :