ভাঙা ছাদ থেকে প্রায়ই পলেস্তারা খসে পড়ছে। অনেক যায়গায় ছাদের পলেস্তারা পড়ে গিয়ে রড বেরিয়ে গেছে। বৃষ্টি এলেই ছাদ চুইয়ে পড়ছে পানি। এ ছাড়া কক্ষের দেয়াল, পিলার ও বিমে ধরেছে ফাটল। বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের শ্রেণিকক্ষে এভাবেই ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান চলছে।
এমন ঝুঁকির মধ্যেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার বকুয়া ইউনিয়নের ধুকুরিয়া-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ফলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকেরা। বিদ্যালয়টির এমন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় অভিভাবকেরা তাঁদের কোমলমতি শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকেন। এছাড়াও বিদ্যালয়টির একমাত্র ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।
সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির জরাজীর্ণ চার কক্ষের ভবনের একটি তালাবদ্ধ, একটিতে অফিস কার্যালয় আর দুটিতে পাঠদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। কক্ষের দেয়াল, ছাদ, পিলার ও বিমে ধরেছে ফাটল। অনেক জায়গায় শ্রেণিকক্ষের মেঝে দেবে গেছে। এ অবস্থায় জরাজীর্ণ ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রায় শতাধিক কোমলমতি শিশু পাঠ গ্রহণ করছে।
জানা যায়, ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ধুকুরিয়া-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৯৪ সালে চার কক্ষবিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। সেই থেকে এ ভবনের তিনটি কক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও একটি কক্ষ বিদ্যালয়ের অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের এমন অবস্থার বিষয়ে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি।
বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির ছাত্র মুজাহিদ ও চতুর্থ শ্রেণীর শাকিলা বলেন, ভাঙা কক্ষে পড়তে তাদের অনেক ভয় লাগে। এমনকি পড়া চলাকালে প্রায়ই ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে।
তৈয়ব আলী নামে একজন অভিভাবক বলেন, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তাঁরা শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকেন। যে কারণে অনেকে তাঁদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে দ্বিধাবোধ করেন। কর্তৃপক্ষের দ্রুত এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাকিম বলেন, বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবনটি এমন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এ নিয়ে তারা চমর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় আছেন। বিকল্প দুটি টিনসেট ঘর তৈরি করা হলেও সেগ সংস্কার না হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই শিশুদের পড়াতে হচ্ছে। এতে দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। ভবনের বর্তমান অবস্থা ও ৩৩ শতাংশ জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কার্যালয়গুলোতে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত নতুন ভবন নির্মাণের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ইসাহাক আলী জানান, এক বছর পূর্বে আমি সভাপতি হয়েছি, শুনেছি প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন দপ্তরে লিখিতভাবে জানালেও কোনো প্রতিকার হয়নি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আজিজার রহমান জানান, ঝুঁকি পূর্ণ শ্রেণী কক্ষে পাঠদান নিষেধ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের ভবন সংস্কারের ব্যাপারে প্রক্রিয়া চলমান। আশা করছি অচিরেই বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে।
পত্রিকা একাত্তর/ আনোয়ার হোসেন