নড়াইলে পরিবহনসহ বিভিন্ন ধরণের যানবাহন থেকে থেকে চাঁদা তোলার অভিযোগে দুই শ্রমিককে আটকের প্রতিবাদে নড়াইল-যশোর, নড়াইল-খুলনা রুটসহ জেলার বিভিন্ন রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে এ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে নড়াইল জেলা বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। তারা বাধ্য হয়ে ইজিবাইক, সিএনজি, মোটরসাইকেলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়তি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য ছুটছেন।
নড়াইল জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি সরদার আলমগীর হোসেন বলেন, যানবাহন থেকে থেকে টাকা তোলার অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে ডিবি পুলিশ খোকন বিশ্বাস (৫০) ও শাকিব (১৭) নামে দুই শ্রমিককে আটক করে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে মালিক ও শ্রমিকরা যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে। সুষ্ঠু সমাধান না হওয়া পর্যন্তু বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।
নড়াইল জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি বিপ¬ব বিশ্বাস বিলো বলেন, শ্রমিকরা দুর্ঘটনার শিকার হলে বা কেউ মারা গেলে আমরা সমিতির পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ সেই পরিবারকে অর্থিক অনুদান দিয়ে থাকি। এতে মালিক বা শ্রমিক ইউনিয়নের কোন অভিযোগ নেই। তবুও পুলিশ আমাদের লোক ধরে নিয়ে গেছে। এর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। শ্রমিকরা আন্তঃজেলা রুটের বাস থেকে ৩০ টাকা করে আদায় করে। দেশের প্রত্যেক জেলায়ই নেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া আমরা তো জোর করে আদায় করছি না। বাস মালিকরা আমাদের তহবিলে দিচ্ছে।
পরিবহন ধর্মঘট সম্পর্কে তিনি বলেন, জেলায় দূরপাল্লার গাড়ি ও আন্তঃজেলার বাসগুলো মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের যৌথ সিদ্ধান্তে বন্ধ করা হয়েছে। তবে পিকনিকের বাস বা রিজার্ভ বাসগুলো আমরা চলাচলে বাধা দিচ্ছি না। আমাদের আটক শ্রমিকদের মুক্তি না দিলে আগামীকাল থেকে সব ধরনের গাড়ি চলাচল রাস্তায় বন্ধ থাকবে। এই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা
সত্ত্বেও কেন আপনারা রাস্তায় টাকা তুলছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বিলো বলেন, আমরা তো বাড়তি কোনো টাকা নিচ্ছি না।
জানা যায়, বাস মালিক সমিতির অনুমতিক্রমে শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে ৩০ টাকা করে বাস প্রতি চাঁদা উত্তোলন করা হয়। বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) শ্রমিক ইউনিয়নের কার্ডধারী খোকন বিশ্বাস ও সাকিব নামে দুই শ্রমিক শহরের নতুন টার্মিনাল এলাকায় টাকা আদায় করছিলেন। এ সময় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল চাঁদা আদায়ের অভিযোগে তাদের আটক করে। পরে তাদের মুক্ত করতে বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা রাতে বেশ কয়েক দফায় প্রশাসনের কাছে তদবির জানালেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিবাচক কোনো সাড়া মেলেনি।
পরবর্তীতে আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের যৌথ বৈঠকে নেতারা সিদ্ধান্ত নেন আটক শ্রমিকদের মুক্তি না দিলে ধর্মঘট চলবে।
যাত্রী মিরাজ খাঁন বলেন, রাস্তায় এসে শুনি বাস বন্ধ। আমার আত্মীয় অসুস্থ হয়ে যশোর হাসপাতালে ভর্তি। তাকে দেখার মতো পাশে কেউ নেই। বউ ও বাচ্চা নিয়ে বের হয়েছি। এখন কী আর করা! বাড়তি ভাড়া দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যেতে হবে।
আমরা সাধারণ জনগণ বাস মালিক-শ্রমিকদের কাছে জিম্মি। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়, অপরাধ করার পর প্রশাসন গ্রেপ্তার করলে গাড়ি বন্ধ করে দেয়। যত ভোগান্তি আমাদের মতো আমজনতার।
জেলা পুলিশ সুপার সাদিরা খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সড়কে কোনো প্রকার চাঁদাবাজি করতে দেওয়া হবে না। এসব অন্যায় আবদার পূরণে সড়কে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে প্রশাসন শক্ত অবস্থানে যেতে বাধ্য হবে। সড়কে এ ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধ করতে জেলা পুলিশ সচেষ্ট আছে।
পত্রিকা একাত্তর/ হাফিজুল নিলু
আপনার মতামত লিখুন :