উদযাপিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বর্তমানে দেশের বিশাল সমুদ্র ও উপকূলীয় অঞ্চলের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। দেশের সমুদ্রসীমা ও উপকূলীয় এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণ, জনগণের জানমাল রক্ষা, চোরাচালান, মাদক ও মানব পাচার দমনের পাশাপাশি নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ সহায়তা প্রদানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড মানুষের মাঝে নিরাপত্তা ও আস্থার বিশ্বস্ত প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

এছাড়াও কোস্ট গার্ডের নিরলস প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম বন্দর ঝুঁকিপূর্ণ বন্দরের তালিকা থেকে বের হয়ে একটি নিরাপদ বন্দরে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড জন্মলগ্ন থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় ২১ হাজার ২৮৯ কোটি টাকার অধিক মূল্যমানের অবৈধ দ্রব্যসামগ্রী উদ্ধার করেছে।

চোরাচালান প্রতিরোধ অভিযানে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড জন্মলগ্ন থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় ৯৭৯ কোটি ১৭ লক্ষ টাকার বিভিন্ন প্রকার চোরাচালান পণ্য আটক করেছে মৎস্য সম্পদ রক্ষা ১৭ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা মূল্যমানের নিম্নলিখিত অবৈধ সামগ্রী আটক করা হয়।

জাটকা: ৩০,৮৭,১২২ কেজি, কারেন্ট জাল: ৩৫৯,২১,৫৫,৮৪৫ মিটার, অন্যান্য জাল: ৯২,১২,৪১,১৩৯ মিটার, বেহুন্দী/মশারী জাল: ২০,৬৮,৯৪৬ পিস, চিংড়ি/ফাইসা পোনা: ২৯৩,৩১,৭০,২১৩ পিস মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অভিযানে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড নিয়মিতভাবে প্রায় ১ হাজার ৫৩৫ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা মূল্যের বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য আটক করেছেঃ ইয়াবা: ৩,৩৪,৯৫,৭১০ পিস,বিদেশি সিগারেট: ৩১,৫০,৫৬৭ শলাকা,মদক ব্যবসায়ী/ পাচারকারী: ৮২৬ জন, অবৈধ অস্ত্র- ৭৭৬টি, তাজা গোলা- ৬,১৭৬ রাউন্ড। বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড কর্তৃক বনজ সম্পদ রক্ষায় ৪৬ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা মূল্যের প্রায় ৪৮৫২১৩ ঘনফুট কাঠ উদ্ধার করা হয়।

পরিবেশ রক্ষায় হরিণের মাংস: ৩৬০৮ কেজি, হরিণের চামড়া: ৩০৯টি, হরিণের মাথা: ১৩৯টি,তক্ষক: ৪২টি, চোরাকারবারী: ৫২৮৯ জন, উদ্ধার অভিযানে অপহৃত জেলে/ মাওয়ালী ২,১৭৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। নৌ-পথে দুর্ঘটনা কবলিত ১৯২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয় এবং ৩৭২টি অপহৃত বা ভাসমান নৌকা উদ্ধার করা হয়।

বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড এর দায়িত্বাধীন এলাকায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে। মায়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাসহ ছোট বড় অনেক বোট ও জলযান মায়ানমার ফেরত/ হস্তান্তর করা হয়েছে। বিগত ২০১৭ সাল হতে অদ্যাবধি ১৬,৩৭৮ জন মিয়ানমার নাগরিককে (বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত) মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো/ হস্তান্তর করা হয় এবং ৮৫ জন দালালকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর ও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ৫২টি মৃতদেহ উদ্ধারকরে থানায় হস্তান্তর করা হয়।

এছাড়াও বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড অপারেশনাল কর্মকান্ড পরিচালনার পাশাপাশি দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় গরীব-দুঃস্থ জেলে ও প্রান্তিক জনগণের মাঝে সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা করে থাকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ দিক নির্দেশনা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর তত্বাবধানে ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঐকান্তিক সহযোগিতায় বিভিন্ন আধুনিক জাহাজ, ঘাঁটি ও জলযান সংযোজনের মাধ্যমে বর্তমানে এ বাহিনীর সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

সময়ের পরিক্রমা ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার নিপুণ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডকে অধিকতর কার্যকর, শক্তিশালী ও সুদক্ষ বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা এগিয়ে নিতে এ বাহিনীর প্রতিটি সদস্য উজ্জীবিত ও বদ্ধপরিকর। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে জাতির প্রত্যাশা পূরণে নিরলসভাবে কাজ করে যাবে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড।

আগামী সোমবার ১৩ ফেব্রুয়ারী যথাযোগ্য মর্যাদায় আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে আগারগাঁওস্থ কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হতে যাচ্ছে। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, এমপি।

এছাড়াও উক্ত অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অবঃ) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব আমিনুল ইসলাম খান, মহাপরিচালক বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড রিয়ার এডমিরাল আশরাফুল হক চৌধুরী, এনবিপি, এনডিইউ, এএফডব্লিউসি, পিএসসি উপস্থিত থাকবেন।

আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, কূটনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সামরিক ও অসামরিক অতিথিবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।

উক্ত অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড এর নবনির্মিত স্টেশন লক্ষীপুর এর দুইটি ভবন ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড এর কর্মকর্তা, নাবিক এবং অসামরিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ কাজের জন্য বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পদক ও বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড (সেবা) পদক প্রদান করা হবে।

মহাপরিচালক বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড কর্তৃক প্রেসিডেন্ট কোস্ট গার্ড পদক ও প্রেসিডেন্ট কোস্ট গার্ড (সেবা) পদক প্রদান করা হবে।

পত্রিকা একাত্তর/ রবিউল ইসলাম