প্রতিদিন ৮০/৯০ জন চা ফ্রিতে খান


জেলা প্রতিনিধি, নড়াইল প্রকাশের সময় : ০৩/০২/২০২৩, ৭:৪৪ অপরাহ্ণ /
প্রতিদিন ৮০/৯০ জন চা ফ্রিতে খান

নড়াইল সদর উপজেলার আউড়িয়া মোড়ে ছোট্ট এক দোকানে বসে চা বিক্রি করেন ৪৫ বছর বয়সী হোসাইন শেখ। তিনি আউড়িয়া গ্রামের মৃত-শফিউদ্দিনের ছেলে। সামান্য একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হোসাইন শেখ। চা-বিস্কুট বিক্রি করেই তার সংসার চলে। তবে ৭০ বছর বয়সী কেউ তার দোকানে আসলে বিনামূল্যে তাকে চা পান করান তিনি। তার দোকানের সামনে কাগজে বড় করে লেখা রয়েছে “এখানে নিজ উদ্যোগে ৭০+ বয়সীদের ফ্রি তে চা খাওয়ানো হয়”।

প্রতিদিন ৮০/৯০ জন বয়স্ক লোককে বিনা টাকায় চা খাওয়াচ্ছেন হোসাইন। টাঙানো লেখাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ায় তা অনেকের নজর কেড়েছে। অনেকেই ভিড় করছেন তার দোকানে বিষয়টি স্বচক্ষে দেখতে।

হোসাইন শেখ নিউজকে বলেন, আমি দীর্ঘ দিন ধরে চা বিক্রি করছি। আমার দোকানে প্রতিদিন অনেক বয়স্ক মুরব্বিরা চা খেতে আসেন। অনেক মুরব্বি আছে আমাদের সমাজে, যারা অবহেলিত, ছেলেমেয়ে আছে,তাদের বাবার হাতে টাকা পয়সা দিতে পারে না। সেই থেকে তাদের প্রতি আমার আন্তরিকতা ও ভালোবাসা জন্মে। সে কারনেই সত্তরোর্ধ্ব মুরব্বিদের বিনামূল্যে চা খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেই।

তিনি আরও বলেন, অনেক মুরব্বি আছে দোকানে কাগজে লেখা পড়তে পারে না। কিন্তু চা খাওয়া শেষ হলে যখন বলি টাকা দেয়া লাগবে না, তারা আমাকে অনেক দোয়া দেয়, ভালবাসে যা বলে বোঝানো যাবে না। আমার ইচ্ছা যতদিন আমার এ ব্যবসা চালু থাকবে ততদিন এভাবেই তাদের ফ্রি চা খাইয়ে যাব। এতে আমি খুব আত্মতৃপ্তি পাই, অনেক ভালো লাগে।

ওই এলাকার বাসিন্দা গোলাম রাসুল কৃষিকাজ করেন। চা খেতে এসেছেন তিনি। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, হোসাইন খুব ভাল উদ্যোগ নিছে. আমরা এতে খুব খুশি।

ভ্যানচালক কুদ্দুস শেখ বলেন, হোসাইন খুব ভাল ছেলে। সে আমাদের ফ্রি চা খাওয়াচ্ছে। আমি তার জন্য দোয়া করি সে যেন আরও ভাল কাজ করতে পারে। স্থানীয় কয়েকজন বলেন, হোসাইন খুব গরিব মানুষ। তার সেইরকম সামর্থ্য নাই।
তারপরও সেই এলাকার সব বয়স্ক লোকদের ফ্রি চা খাওয়াচ্ছে, এটি আসলেই প্রশংসার দাবি রাখে। আমরা তাকে নিয়ে গর্ববোধ করি। তার এই মহৎ উদ্যোগে আমরা এলাকাবাসী খুব খুশি। তার এই কাজ দেখে অন্যদের ও এগিয়ে আসা উচিত।

আউড়িয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওযার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) উসমান শেখ বলেন, চা দোকানি হোসাইন খুব ভাল ছেলে। সে যে উদ্যোগ নিছে সেটি আসলেই খুব ভাল। কারণ সত্তরোর্ধ মুরব্বি, বয়স্ক লোক যারা আছেন তাদের আয় রোজগার খুব কম, নেই বললেই চলে। তাদেরকে ফ্রিতে চা খাওয়ানো এটা আসলেই খুব ভাল উদ্যোগ এবং প্রশংসনীয়।

আউড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম পলাশ জাগো নিউজকে বলেন, আমার বাড়ি হোসাইন শেখ যেখানে ফ্রিতে চা খাওয়ায় তার পাশে। প্রতিদিন ৮০/৯০ জনকে ফ্রিতে চা খাওয়ায় হোসাইন শেখ। সমাজে অনেক বিত্তমান লোক আছে। তবে সবার
হোসাইন শেখের ন্যায় মন নাই। আমরা হোসাইন শেখকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবোনা। তার মত সকলকে বলবো অসহায় বৃদ্ধদের পাশে দাড়াতে হবে।

পত্রিকা একাত্তর/ হাফিজুল নিলু