পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পরেও থেমে নেই বালু সিন্ডিকেট চক্র- নতুন করে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন। আইন মানছেন না এই বালু সিন্ডিকেট চক্র।
রাজনৈতিক ও কিছু দৃর্নীতিবাজ প্রশাসনের সহযোগিতায় দিনরাত নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় চলছে আত্মঘাতী সহ ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন। প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তারা বলছেন ভিন্ন কথা। কেউ কারও দোষ নিজেদের কাধে নিতে চাচ্ছেন না। খজখবর নিয়ে জানা যায়, ঐ সকল কর্তাদের অফিস সহকারিরা জড়িত রয়েছে, অন্তরালে এসব বালু সিন্ডিকেট চক্রের সাথে।
আইনে পুরো স্পষ্ট বলা হয়েছে, নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় থেকে এক কিলোমিটারের ভিতরে কোন প্রকার বালু নদী থেকে উত্তোলন করা যাবে না। যদি কেউ এই আইন অমান্য করেন’ তাহলে, আইন বলছে-বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ধারা ৫-এর ১ উপধারা অনুযায়ী, পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। ধারা ৪-এর (খ) অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ।
আইন অমান্যকারীদের দুই বছরের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। শুধু তাই নয় বালু আইনে আরো গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু বালু উত্তোলনকারী চক্র ঐসকল কর্তাদের সাথে গোপনে মাসোয়ারা চুক্তির বিনিময় দিনের পর দিন, প্রকাশ্য দিবালোকে নদী ভাঙ্গন এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করে চলেছে।
এ বিষয়ে মিডিয়ার সাথে কথা বলতে রাজি হয় না উর্দ্ধতন প্রশাসন। সম্প্রতি বটিয়াঘাটা- পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন নদনদী থেকে বালু উত্তোলনের সংবাদ প্রকাশ হয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে। কিন্তু সংবাদ প্রকাশের পরেই আরো নড়ে চড়ে বসে এই সিন্ডিকেট চক্র।
বালু উত্তোলনের কর্মকাণ্ড ব্যাপক হারে বৃদ্ধি করেছে তারা। তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন,আমরা সরকারি অনুমোদন নিয়েই বালু উত্তোলন করছি। কিন্তু তারা কোন কাগজপত্র দেখাতে রাজি নয়। আবার কেউ কেউ বলেন,এটা রাজনৈতিক বিষয়, এমপি মন্ত্রী সহ বিভিন্ন শেখ পরিবারের পরিচয় দিয়ে অবাধে এই চক্র আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বালু উত্তোলন করে চলেছে।
এ বিষয়ে পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম ও মোঃ শেখ নুরুল আলমের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, এটা দণ্ডনীয় অপরাধ।
নদী ভাঙ্গন এলাকার আশে পাশে কোথাও বালু উত্তোলন করা যাবে না। আইনের দৃষ্টিতে কর্মকর্তারা উচিত কথা বলেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। উপজেলার বারোআড়িয়া, বিগরদানা, মধুখালী, জিরবুনিয়া, মাগরো-দেলুটি, ফুলবাড়ি, রায়পুর, চাদগড়, বিরালা, শরাফপুর, ভগাওঘরা, মাইলমারা, বটিয়াঘাটা সদর, শৈলমারী, সহ আরো অনেক গ্রাম দীর্ঘদিন ধরে নদী ভাঙ্গনের শিকার। শতশত পরিবার হারিছে তাদের জমি যায়গা ও বাড়িঘর।
ডুমুরিয়া উপজেলার জালিয়াখালী ও চাঁদগড় নামক দুটি গ্রাম ভদ্রানদী ভাঙ্গনে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন সেখানে নদী আর নদী। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সেখান থেকেও চলছে বালু উত্তোলন। নদী ভাঙ্গন রোধে ভদ্রা নদীর পাশেদিয়ে অবস্থিত বারোআড়িয়া, বিগরদানা, মধুখালী, জিরবুনিয়া, গেওয়াবুনিয়ে এলাকায় চলছে কোটি টাকার জিও ব্যাগের কাজ।
একদিকে নদী রক্ষার্থে চলছে সরকারি কোটি টাকার কাজ,আর অন্যদিকে চলছে বালু সিন্ডিকেট চক্রের বালু উত্তোলন। বালু উত্তোলনের কারনে বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন। বটিয়াঘাটা – পাইকগাছার রায়পুর সড়কটি এখন রয়েছে নদী ভাঙ্গনের কবলে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকা বারোআড়িয়া বাজারের সামানে দিয়ে চলছে প্রকাশ্য বালু উত্তোলন।
বারোআড়িয়া বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিদ্যুৎ মল্লিক ও অধির মন্ডল বলেন, বালু উত্তোলনের কারনে নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। নদী ভাঙ্গন বিষয় সুরখালী ও ডেলুটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন লিটু ও রিপন মন্ডল এর নিকট জানতে চাইলে তারা বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ঠিক না।
আর এই বালু উত্তোলনের কারণেই এলাকায় নদী ভাঙ্গন লেগেই রয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যাতে ভদ্রানদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করা হয়।
বালু কাটা ও উত্তোলন বন্ধ না হলে অচিরেই বারোআড়িয়া বাজার সহ বটিয়াঘাটা – পাইকগাছা সড়কটি নদী গর্ভে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বটিয়াঘাটা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার নজরে থাকলেও থেমে নেই বালু উত্তোলন। বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারি কমিশনার (ভুমি) এম আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ বলেন, অভিযোগ শুনেছি। দেখি বিষয়টি কি করা যায়।
পত্রিকা একাত্তর/ আক্তারুল ইসলাম
আপনার মতামত লিখুন :