প্রকৃতির পালা বদলে আসন্ন শীত মৌসুম। প্রভাতে শিশির ভেজা ঘাস আর সামান্য কুয়াশা আবরণ জানান দিচ্ছে শীতের আগমনি বার্তা। দিনে গরম আর রাতে ঠান্ডা তাই তো মনে হচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা । এক সময় খেজুরের রস ও গুড় দিয়ে তৈরী চিনি ছিলো প্রসিদ্ধ এর কদর ও ছিলো বেশ। রস গুড়ের চাহিদা বেশ ছিলো উৎপাদন ও কম হতো না। মানুষ অপেক্ষায় থাকতো কেশবপুর উপজেলার কাটাখালি বাজারের দিনের। মনিরামপুর উপজেলার মনোহরপুর,সহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে খেজুর গাছ ও গাছি।
কথায় আছে যশোরের যশ খেজুরের রস। গৌরব আর ঐতিহ্যের মধু বৃক্ষ খেজুর গাছ। যত শীত ঘনিয়ে আসছে তত যেন মনও আনন্দদের বাধ বাধতে শুর” করেছে। এই খেজুর গাছ গ্রামের আনাচে কানাচে অনন্ত অবহেলায় প্রাকৃতিক আলো বাতাসে বেড়ে ওঠে। শীত এলেই কদর বাড়ে খেজুর গাছের তবে শীত কালের খেজুরের রসই বেশী সুস্বাদু। এই খেজুর গাছ মানুষের অনেক উপকারে আসে। যেমন শীতের শুরুতেই গাছ থেকে মিষ্টি রস দেয়।
ঐ রস থেকে তৈরি হয় যশোরের সেই বিখ্যাত গুড় ও পাটালী যা মানুষের হৃদয়ে সহজে জায়গা করে নেয়। এতে রয়েছে মিষ্টি ঘ্রাণ। পুরো শীত মৌসুমে চলে পিঠা পুলি আর পায়েসের উৎসব। এ যেন ভোলার নয়, সেই আনন্দ এখন আর গ্রামিন জনপদে আর দেখা জায় না । প্রিয় মধু বৃক্ষ খেজুর গাছের কাচা রস আর গুড়, পাটালী, পিঠা, পায়েস সহ নানা সব কিছুর টানে বহু দূর থেকে ছুটে আসে গ্রামে সবাই। পরিবারের সভাইকে
নিয়ে উপভোগ করার জন্য। পুরো শীত মৌসুম টা চলে আনন্দ আনন্দে। এলাকা বাসী জানান যে, আমাদের ইউনিয়নে বহু খেজুর গাছ ছিল। এই খেজুর গাছ গুলো বাড়ির আঙ্গিনায়, পতিত জমিতে, জমির আইলে, ঘেরের পাড়ে, মাঠে-ঘাটে রয়েছে প্রায় দেড় লক্ষধিক খেজুর গাছ । এ ব্যাপারে এক গাছি মোঃ আব্দুল গফ্ফার জানান আমি প্রতিদিন ২ পন / ১৬০ টি খেজুর গাছের রস আহরণ করতে পারে। ছিজিনাল ব্যবসায়ী। শত শত পরিবার ঐ খেজুর গাছের উপর নির্ভর শীল। আর এই খেজুর গাছ কাটার উপকরণ হলো, গাছি দা, দড়া, মুন্সী,পাওট,বালদারা ও আঁকড়া।
একজন গাছি এই শীত মৌসুমে অর্থাৎ ১৬০ দিনে একটি গাছ থেকে ২০-২৫ কেজি গুড় পাটালী সংগ্রহ করতে পারে। এ সময় চাহিদা বেশি কাচা খেজুর রস এক ভাড় ১৮০/২০০ টাকা করে বিক্রয় করে। খেজুর গাছ কোন ফসলের ক্ষতি করে না। এই গাছের জন্য বাড়তি কোন খরচ ও করতে হয় না। বাড়ির আঙ্গিনায় কোন প্রকার যত্ন কিংবা দেয়াল ছাড়ায় বেড়ে ওঠে এই খেজুর গাছ। শুধুমাত্র শীত মৌসুম এলেই গাছ গুলোর যত্ন করা হয়। পরিষ্কার করা হয় খেজুর গাছ কে। খেজুর গাছের পাতা দিয়ে তৈরী করা হয় বেদে পার্টি ও মাদুর। জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করা হয় তাদের শিকড়ও।
আজ এই সমাজে খেজুর গাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। ইচ্ছা কৃত ভাবে কেউ খেজুর গাছের চাষাবাদ করেনা। পরিকল্পিত ভাবে খেজুর গাছ চাষ করলে বৃদ্ধি হবে দেশের আর্থিক সম্পদ। বেশি করে খেজুর গাছ লাগালে সেখান থেকে গুড় পাটালীর চাহিদা দেশে মিটানোর পরও বিদেশে রপ্তানীর সুযোগ থাকবে। এদেশে খেজুর গাছ গ্রাম-গঞ্জে অনেক ঘুরাঘুরির পরও খেজুর গাছের সন্ধান এখন আর তেমন পাওয়া যায়না।
পত্রিকা একাত্তর / কে, এম, মোজাপ্ফার হুসাঈন
আপনার মতামত লিখুন :