দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে এক সময় ব্যাপকহারে গম চাষ হলেও বর্তমানে অন্যান্য ফসলের তুলনায় গমের ফলন ও লাভ কম হওয়ায় গম চাষে কৃষকরা দিন দিন উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। এতে জেলায় গমের আবাদ কমে যাচ্ছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের মাটি ভালো হওয়ায় ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গমের আবাদ ভালো হলেও গমের তুলনায় ভুট্টার ফলন এবং দাম বেশি পাওয়ায় বেশি করে ভুট্টা চাষে ঝুকছেন কৃষকরা।
চলতি বছরে দেখা যায়, জেলার যে জমিগুলোতে অন্যান্যবার চাষ হয়েছিল সেই জমি গুলোর অধিকাংশ জমিতে এবার চাষ করা হয়েছে ভুট্টা।
জেলা কৃষি সম্প্রসার অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০২০ সালে জেলায় গম চাষ হয়েছিল ৫০ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে, উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৬৮৫ মেট্রিক টন ও ২০২২ সালে চাষ হয়েছিল ৪৫ হাজার ১৯২ হেক্টর জমিতে আর উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ৯৪ হাজার ৭১ মেট্রিক টন তার কমে এবছর ২০২৩ সালে চাষ হয়েছে ৩৬ হাজার ৬৫৭ হেক্টর জমিতে ও উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৭৯ মেট্রিক টন গম।
কৃষকরা বলছেন, গতবছর গমের দাম কম থাকায় এবছর গমের তুলনায় বেশি করে চাষ করেছেন ভুট্টা। ৩৩ শতকের এ বিঘা জমিতে গম চাষ করে পাচ্ছেন ২০ হাজার টাকা আর ভুট্টায় পাওয়া যায় প্রায় ৬০ হাজার টাকা। আর ৫০ শতকের জমিতে ভুট্টা পান প্রায় লাখ টাকা। গমে পায় সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা। তাই আগামিতে গমের তুলনায় আরও বেশি করে ভুট্টা চাষ করবেন বলে জানান তারা।
সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামে কৃষক জাকির হোসেন রাজু বলেন, ‘যদিও আগে গম চাষ করতাম কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে গমে বেশি ভাল না হওয়ায় এখন আলু আর ভুট্টা চাষ করছি।
রাণীশংকৈল উপজেলার কাশিপুর গ্রামের কৃষক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘গতবছর গমের দাম কম পাওয়া এবার ৩৩ শতকের জমিতে গম চাষ করেছি মাত্র দের বিঘা জমিতে ও গতবার ভুট্টায় ভালো টাকা পাওয়া এবার চার বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি।
একই উপজেলার ভানোর কাচকালি গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, ‘৩৩ শতকের এক বিঘা জমিতে গম উৎপাদন করতে খরচ হয় প্রায় ১০-১২ হাজার টাকা আর বিক্রয় হয় ২০ হাজার টাকা। আর ভ্ট্টুায় খরচ হয় ৩০ হাজার টাকা, বিক্রয় হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। তাই আমাদের এই দিকের কৃষকরা গমের চাষাবাদ কমিয়ে ভুট্টা চাষ করেছেন বেশি।
জাউনিয়া গ্রামের কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে গম করে টাকা পায় ২০ হাজার আর ভুট্টা বিক্রয় করে পাই প্রায় ৬০ হাজার টাকা। তাই আগামিতে আমি আর গম চাষ করবো না। এজন্য এবার মাত্র ১০ কাঠা জমিতে গম করেছি ও ভুট্টা করেছি দুই বিঘা জমিতে।
হরিপুর উপজেলার জাদুরাণী এলাকার কৃষক আব্দুল জব্বার বলেন, ‘ভ্ট্টুার তুলনায় গমের দাম ও ফলন কম। এদিকে ৫০ শতকের এক বিঘা জমিতে কম হলেও ভুট্টার ফলন হয় ৯০ মণ কারও কারও ১’শ মণেরও বেশি হয়। গম চাষ করেত পরিশ্রমও বেশি লাগে ফলনও কম হয়। এক বিঘা জমিতে গম হয় সর্বোচ্চ ২০ মণ। ২০ মণ গমের দাম লাগে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা আর এক বিঘা জমিতে ভুট্টা পাই প্রায় একলাখ টাকার। তাই আমরা কৃষকরা দিন দিন গমের আবাদ কমিয়ে দিচ্ছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ে গমের আবাদের এরিয়া সর্বোচ্চ হলেও চলতি মৌসুমে গমের আবাদ কমে গেছে। গমের বাজার দর ভালো হলেও এক হেক্টর জমিতে চার টন গম পাওয়া গেলেও একই পরিমাণ জমিতে ভুট্টার ফলন হচ্ছে ১২ টন। গমের থেকে ভুট্টার ফলন প্রায় তিন গুণ বেশি হচ্ছে। তাই কৃষকরা গমের তুলনায় ভুট্টায় বেশি লাভবান হওয়ায় ভুট্টা চাষের দিকে ঝুকে পড়েছেন। তবে আগামিতে গমের ভালো জাত ও ফলন বৃদ্ধি করতে পারলে জেলায় গমে আবাদ বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।
পত্রিকা একাত্তর/ আনোয়ার হোসেন
আপনার মতামত লিখুন :