সুষ্ঠু সুন্দর পরিচ্ছন্ন পরিবার-সমাজ কাঠামো বিনির্মাণে ইসলামের মৌলিক বিধান পরিপালনের বিকল্প নেই।ইসলামের যাবতীয় বিধান পালনের মধ্যে রয়েছে সমূহ কল্যাণ। ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় ইসলামী আইনের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
যাকাত ইসলামের পাঁচটি মৌলিক কাঠামোর মধ্যে একটি অত্যাবশকীয় অমোঘ অলঙ্গনীয় বিধান। এ অপরিহার্য বিধান পরিপালনের মধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাজব্যবস্থা বিনির্মাণের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। ধনী-গরীব, আশরাফ -আতরাফ ব্যবধান ঘুচে যায় যাকাতের সুষমের বন্টনের মাধ্যমে।
যাকাত শব্দের আভিধানিক অর্থ স্বাভাবিকভাবে দুইটি। এক. পরিশুদ্ধ হওয়া। দুই . প্রবৃদ্ধি পাওয়া। যাকাত প্রদানের মাধ্যমে যাকাত দাতার সম্পদ একদিকে যেমন বৃদ্ধি পায় অন্যদিকে পুঞ্জিবুত সম্পদ পবিত্রতাও অর্জন করে। নিদিষ্ট পরিমাণ সম্পদ যাবতীয় ব্যয় মিটিয়ে এক বছর অতিবাহিত হলে সম্পদের যাকাত দেয়া ফরজ।
যাকাত প্রদান করা না হলে পুরো সম্পত্তি মালিকের জন্য হারাম হয়ে যায়। যাকাতের সম্পর্ক হলো দুই ব্যক্তির মাঝে, একজনের হলো দায়িত্ব অন্যজনের হলো অধিকার। ধনীর দায়িত্ব হলো তার সম্পদের নিদিষ্ট পরিমাণ যথাযথ প্রাপ্য ব্যক্তিকে পৌছে মালিক বানিয়ে দেয়া। আর গরীব ব্যক্তির অধিকার হলো ধনীর কাছ থেকে পাওয়ার। এটা কোন চাওয়া -পাওয়ার বিষয় নয়।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা যাকাতের সম্পদ কাদের মাঝে বণ্টন করা যাবে-তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করে আটটি খাত বর্ণনা করেছেন। নিশ্চয়ই ছাদাক্বাহ্ (যাকাত) হচ্ছে ফকীর ও মিসকীনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য; (তা বণ্টন করা যায়) দাস আযাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে।
এটি আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞ।( সুরা তওবা) তবে তন্মধ্যে বেশি হকদার হলো নিকটাত্মীয়রা। নিকটতমদের মধ্যে যারা গরীব-মিসকীন তাদের মাঝে আগে বণ্টন করতে হবে।
যাকাত প্রদানের যে ব্যবস্থপনা আমাদের সমাজে বিদ্যমান তা ইসলামি শরীয়াহ অনুমোদন করে না। একজন অসহায় মানুষকে এমন পরিমাণ অর্থের শর্তহীন মালিক বানিয়ে দেয়া যাতে যাকাত গ্রহীতা ব্যক্তি প্রাপ্ত সম্পদ দিয়ে ছোট হলেও একটি ব্যবসা দিয়ে নিজে স্বাভলম্বী হওয়ার চেষ্টা চালাতে পারে।
যাকাতের শাড়ী বলতে কোন কথা নেই। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় আমাদের সমাজে এ সংস্কৃতিটাই বিদ্যমান। সিয়াম সাধনার মাস রমজানে ক্লোথ স্টোরগুলোর সামনে দেখা যায় বড় ব্যানারে লেখা -এখানে যাকাতের শাড়ী পাওয়া যায়।শাড়ী নয় অর্থই হোক যাকাতের প্রদানের পণ্য। এমনটি হলে ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গড়া সহজ হবে।
সমাজের কিছু বিত্তশালীদের দেখা যায় যাকাত বণ্টন করতে গিয়ে এমন পন্থা অবলম্বন করে যাতে ইসলামের সুমহান বিধানটি ভিন্নধর্মী লোকজনের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। যাকাত প্রদানের বিষয়টি এমনভাবে ঘোষণা করা হয় যাতে বহু লোক একত্রিত হয়ে পদদলিত হয়ে জীবনলীলা সাঙ্গ করতে হয়। যাকাত তো কোন লোক দেখানো বিষয় নয় এটা দায়িত্ব -কর্তব্য ও অধিকারের ওপর নির্ভর করে।
এমনভাবে প্রদান করতে হবে যারা প্রাপ্য তাদের বাড়ী গিয়ে নীরবে-নিভৃতে পৌছে দেয়া। সব মানুষকে এক জায়গায় একত্রিত করার কোন প্রয়োজন নেই। যাকাত দাতা নিজ এলাকার গরীব -মিসকিনদের মাঝে প্রদেয় অর্থ প্রয়োজন পরিমান বণ্টন করে স্বাভলম্বী করার প্রয়াস চালাবেন।
এরপরও যদি সম্পদ উদবত্ত থাকে তাহলে পাশ্ববতী এলাকার অসহায় মানুষের মাঝে প্রদানের ব্যবস্থা করবেন। এমন ব্যবস্থাপনা তো মানুষের যাকাত গ্রহণ করতে গিয়ে পদদলিত হয়ে মত্যুর মুখোমুখি হতে হয় না।
এক হিসাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের যাকাতযোগ্য সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১০ লক্ষ কোটি টাকা। এর আড়াই শতাংশ হারে যাকাতের পরিমাণ হয় ২৫ হাজার কোটি টাকা। ২৫ হাজার কোটির জায়গায় যদি ১২ হাজার কোটি টাকাও বছরে যাকাত আদায় হয়, আর তা যদি সুষমভাবে বণ্টন করা হয় প্রকত ব্যক্তিদের মাঝে অথবা তা দিয়ে প্রতিটি ১০০ কোটি টাকা করে ১২০টি সমন্বিত প্রকল্প (ফলজ, বনজ, মৎস্য ও পশুসম্পদ) হাতে নেয়া হয়।
এসব পকল্প থেকে অর্জিত আয় দরিদ্র মানুষের কল্যাণে ব্যয় করা হয় তাহলে দেশ থেকে দারিদ্র্য হবে পুরোপুরি নির্বাসিত। অথবা দেশের সকল যাকাত গ্রহীতা রূপান্তরিত হবে যাকাতদাতায়। সঙ্ঘবদ্ধভাবে যাকাত আদায় করলে আগামী ১০ বছরের ভেতরেই সম্ভব এই লক্ষ্য অর্জন করা।
মো. নুুর উল্লাহ আরিফ
শিক্ষক,বেগম রহিমা ইসলাম ডিগ্রি কলেজ
সাংবাদিক,পত্রিকা একাত্তর
চরফ্যাশন, ভোলা।